নতুন রপ্তানিকারকদের উৎসাহে কেন্দ্রের বড় পদক্ষেপ, জানালেন বাণিজ্যমন্ত্রী

নতুন বাজার, নতুন পণ্য এবং নতুন রপ্তানিকারকদের উৎসাহ দিতে শীঘ্রই আরও নতুন নির্দেশিকা আনবে সরকার। সোমবার বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল (Piyush Goyal) এই ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছেন,…

নতুন রপ্তানিকারকদের উৎসাহে কেন্দ্রের বড় পদক্ষেপ, জানালেন বাণিজ্যমন্ত্রী

নতুন বাজার, নতুন পণ্য এবং নতুন রপ্তানিকারকদের উৎসাহ দিতে শীঘ্রই আরও নতুন নির্দেশিকা আনবে সরকার। সোমবার বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল (Piyush Goyal) এই ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও দেশজুড়ে প্রতিটি জেলা একত্রে কাজ করবে যাতে ‘ওয়ান ডিস্ট্রিক্ট, ওয়ান প্রোডাক্ট’ (ওডিওপি) উদ্যোগের মাধ্যমে জেলার পণ্য নতুন বাজারে পৌঁছানো যায় এবং প্রথমবারের মতো রপ্তানি করতে চাওয়া উদ্যোগীদের সহায়তা করা যায়।

মন্ত্রী বলেন, “বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জেলার প্রশাসনের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে প্রথম প্রজন্মের রপ্তানিকারকদের নতুন বাজারে প্রবেশ করতে সাহায্য করবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে শুধু রাজ্য নয়, দেশের প্রতিটি জেলা ভারতের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সমানভাবে অবদান রাখতে পারবে।”

   

পীযূষ গয়াল আরও বলেন, “ভারতের ৭৭৩টি জেলা এক একটি গল্পের জন্ম দিয়েছে। প্রতিটি জেলার নিজস্ব ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বিশেষ পণ্য রয়েছে। এই পণ্যগুলির মধ্যে এমন কিছু আছে যা ভারতের নামকে বিশ্বের দরবারে আরও উজ্জ্বল করতে সক্ষম।” তিনি উদাহরণ হিসেবে ওয়ানাড়ের কফি, রত্নাগিরি আম এবং পুলওয়ামার জাফরানের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, “ওডিওপি একটি অনন্য উদ্যোগ। বিশ্বের আর কোনো দেশে এমন উদ্যোগ দেখা যায় না যেখানে প্রতিটি জেলার নিজস্ব পণ্যকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন ঘটানো হয়। প্রতিটি জেলা একটি নিজস্ব গল্পের বাহক। আমাদের পণ্যগুলোকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে হলে এই গল্পগুলোকেই তুলে ধরতে হবে।”

মন্ত্রী জানান, অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কোনো জেলায় একাধিক পণ্য বিশেষ গুরুত্ব পায়। সেই কারণে কিছু জেলায় দুইটি পণ্যকেও ওডিওপি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, “লোকাল এখন গ্লোবাল। স্থানীয় পণ্যগুলোকেই আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।”

তিনি আরও জানান, ৮৭টি পণ্যের মধ্যে ৬৪টি পণ্য ইতিমধ্যে শিল্প বিনিয়োগ প্রচার নীতি (Industrial Investment Promotion Policy)-র অধীনে আনা হয়েছে। বিশেষ করে বিহারের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, “বিহারের সবক’টি ৩৮ জেলা ১০০ শতাংশ ওডিওপি অন্তর্ভুক্তিকরণে সফল হয়েছে। প্রতিটি জেলা তাদের নিজস্ব পণ্যকে গুরুত্ব দিয়ে ওডিওপি প্রকল্পে অংশ নিয়েছে। এই প্রচেষ্টার জন্য বিহারকে ‘ক্যাটেগরি-এ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।”

মন্ত্রী বলেন, “এই পণ্যগুলো শুধু অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের অংশ নয়, বরং রাজ্যের শিল্প নীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিহার প্রমাণ করেছে, সঠিক পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে জেলার পণ্যকেও বিশ্ববাজারের উপযোগী করা সম্ভব।”

Advertisements

তিনি আরও বলেন, “আজ ভারতের অর্থনীতি এমন এক স্থানে পৌঁছেছে যেখানে আমরা বিশ্বজুড়ে ঝড়ের মধ্যেও স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে পেরেছি। ভারতে এমন এক প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ রয়েছে যা বিশ্বের জন্য একপ্রকার মরূদ্যানের মতো। আমাদের দেশ এখন বিশ্বের দ্রুততম বৃদ্ধি পাওয়া বৃহৎ অর্থনীতি। ২০২৭ সালের মধ্যে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে।”

মন্ত্রী দেশের মানুষকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “প্রত্যেককে অঙ্গীকার করতে হবে যে নিজের জেলার পণ্যকে বিশ্ববাজারে পৌঁছে দেওয়া এবং জেলার অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করবে। এই অঙ্গীকারের মাধ্যমে আমরা দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে পারি এবং এক নতুন দিশা দেখাতে পারি।”

ওডিওপি প্রকল্পের মাধ্যমে জেলার পণ্যগুলোর মান উন্নয়ন, বাজার সম্প্রসারণ, এবং নতুন রপ্তানিকারকদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে প্রতিটি জেলার অর্থনৈতিক অবস্থা মজবুত করার পাশাপাশি স্থানীয় শিল্পীদের, কৃষকদের ও ছোট উদ্যোক্তাদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করারও লক্ষ্য রয়েছে।

সরকার আশা করছে, এই প্রকল্পের মাধ্যমে শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ভারতের জেলাভিত্তিক পণ্যগুলির চাহিদা বাড়বে। ইতিমধ্যেই একাধিক রাজ্য এই প্রকল্পে সাড়া দিয়েছে এবং অনেক জেলা তাদের পণ্য চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক মানের প্যাকেজিং, ব্র্যান্ডিং এবং মার্কেটিং শুরু করেছে।

মন্ত্রী পীযূষ গয়াল তাঁর বক্তব্যে এও উল্লেখ করেন যে, দেশের অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি দেওয়ার জন্য এই ধরনের উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। “আমরা চাই প্রতিটি জেলা, প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি পরিবার নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের সাথী হয়ে উঠুক,”— বলেন তিনি।

ওডিওপি প্রকল্পের এই রূপায়ণ যদি সঠিকভাবে করা যায়, তবে ভারতের পণ্য বৈচিত্র্য এবং প্রাচীন ঐতিহ্য এক নতুন মাত্রা পাবে। সরকারের এই পরিকল্পনা দেশের অর্থনীতি ও সমাজের প্রতিটি স্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার সম্ভাবনা রাখে।