ব্যবসায়িক সংস্কারে বড় পদক্ষেপ পীযূষ গয়ালের, লোকসভায় পেশ জন বিশ্বাস বিল

সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের জীবনযাপনকে সহজতর করা এবং “ট্রাস্ট-বেসড গভর্নেন্স” বা আস্থা-ভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সোমবার লোকসভায় পেশ হতে চলেছে ‘জন বিশ্বাস…

startup india: Govt Prioritises Empowering Tier‑2 & 3 Entrepreneurs: Piyush Goyal

সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের জীবনযাপনকে সহজতর করা এবং “ট্রাস্ট-বেসড গভর্নেন্স” বা আস্থা-ভিত্তিক প্রশাসনিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সোমবার লোকসভায় পেশ হতে চলেছে ‘জন বিশ্বাস (সংশোধন) বিল, ২০২৫’। এই বিলটি পেশ করবেন বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গয়াল।

লোকসভার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কার্যতালিকা অনুযায়ী, এই বিলের মাধ্যমে বিভিন্ন আইন সংশোধন করে ৩৫০টিরও বেশি বিধানকে পরিবর্তন করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো ক্ষুদ্র ও তুচ্ছ অপরাধগুলিকে অপরাধের আওতার বাইরে নিয়ে এসে শুধুমাত্র আর্থিক জরিমানা বা প্রশাসনিক শাস্তির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা।

   

সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পদক্ষেপ দেশজুড়ে আরও অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তুলতে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবনেও স্বস্তি আসবে। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই অতি ক্ষুদ্র বা অনিচ্ছাকৃত লঙ্ঘনের কারণে আগে কারাদণ্ডের বিধান ছিল, যা ছিল একেবারেই অযৌক্তিক।

উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে কেন্দ্র সরকার প্রথমবার ‘জন বিশ্বাস (সংশোধন) আইন’ কার্যকর করে। সেই সময়ে ৪২টি কেন্দ্রীয় আইনের ১৮৩টি বিধান থেকে অপরাধমূলক শাস্তি তুলে দেওয়া হয়েছিল। মোট ১৯টি মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের আওতাধীন এই বিধানগুলির মধ্যে অনেক ক্ষেত্রেই কারাদণ্ড ও জরিমানার পরিবর্তে শুধুমাত্র অর্থদণ্ড রাখা হয়েছিল। কোথাও আবার কারাদণ্ড ও জরিমানাকে বদলে ‘পেনাল্টি’ বা প্রশাসনিক ফি ধার্য করা হয়।

২০২৫ সালের প্রস্তাবিত সংশোধন আরও বড় আকারে আসছে, যাতে বহু আইনের খুঁটিনাটি পরিবর্তনের মাধ্যমে নাগরিক ও ব্যবসায়ী উভয়ের জন্য আইনকানুন সহজবোধ্য এবং কম জটিল হয়।
স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেই এই বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে এমন সব আইন ছিল যেখানে তুচ্ছ কারণে জেল পর্যন্ত হতে পারত। বছরের পর বছর কেউ সেদিকে নজর দেয়নি। আমি নিজে উদ্যোগ নিয়েছি এই অপ্রয়োজনীয় আইনগুলো বাতিল করার জন্য।”

তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা ইতিমধ্যেই একবার সংসদে এই বিল এনেছিলাম, এবার আবার এনেছি। আমাদের লক্ষ্য একটাই— নাগরিকদের অযথা জেলে পাঠানোর প্রবণতা বন্ধ করা।”

মোদী সরকার এর আগে ১,৫০০-রও বেশি পুরনো ও অপ্রচলিত আইন বাতিল করেছে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের জন্য বোঝা হয়ে থাকা ৪০,০০০-রও বেশি অপ্রয়োজনীয় কমপ্লায়েন্সও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারের দাবি, এই ধারাবাহিক প্রচেষ্টা দেশকে একটি আধুনিক, নাগরিককেন্দ্রিক প্রশাসনিক কাঠামোর দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করতে হলে দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করা জরুরি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত কঠোর আইন, অযৌক্তিক শাস্তির বিধান ও জটিল প্রক্রিয়া ব্যবসার ক্ষেত্রে ভয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি করত। অনেক বিদেশি বিনিয়োগকারীও অভিযোগ তুলেছিলেন যে, ভারতের আইনি জটিলতা ব্যবসার গতি শ্লথ করে।

Advertisements

নতুন সংশোধনী বিল কার্যকর হলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রেও ক্ষুদ্র ভুল বা লঙ্ঘনের কারণে জেলের ভয় দূর হবে।

কেন্দ্র সরকারের মতে, ‘Ease of Living’ এবং ‘Ease of Doing Business’-কে সমান গুরুত্ব দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে দেশ। আইনের কঠোরতার কারণে যাতে সাধারণ মানুষ বা উদ্যোক্তারা অযথা ভোগান্তিতে না পড়েন, সেদিকেই জোর দিচ্ছে সরকার।

মন্ত্রী পীযূষ গয়াল লোকসভায় বিলটি উপস্থাপন করার সময় এই দিকগুলি বিশেষভাবে উল্লেখ করবেন বলে জানা গেছে। তার বক্তব্য হবে— ভারত এখন বিশ্বের অন্যতম বড় অর্থনীতি হতে চলেছে, আর তাই প্রশাসনিক ব্যবস্থাও হতে হবে সময়োপযোগী ও আধুনিক।

যদি বিলটি সংসদের দুই কক্ষে পাস হয়, তবে এটি ভারতের আইনি ব্যবস্থায় একটি বড় রূপান্তর আনবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এর ফলে একদিকে যেমন আদালতের উপর থেকে অপ্রয়োজনীয় মামলা সংক্রান্ত চাপ কমবে, অন্যদিকে নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থা বাড়বে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পদক্ষেপ বিদেশি বিনিয়োগ ও উদ্যোক্তা সংস্কৃতিকে শক্তিশালী করবে। কারণ একটিই বার্তা যাবে— ভারত ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের জন্য আগের চেয়ে অনেক বেশি সহনশীল ও উৎসাহব্যঞ্জক পরিবেশ তৈরি করছে।

‘জন বিশ্বাস (সংশোধন) বিল, ২০২৫’ কেবল একটি আইনি সংশোধনী নয়, বরং এটি সরকারের দীর্ঘমেয়াদি ভিশনের অংশ। নাগরিক ও ব্যবসায়ীদের প্রতি সরকারের আস্থা প্রদর্শনের মাধ্যমে ভারত আরও আধুনিক, প্রগতিশীল এবং বিশ্বমানের প্রশাসনিক কাঠামোর দিকে অগ্রসর হবে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।