ভারতের প্রযুক্তি খাতে উন্নতি! স্টার্টআপ নিয়ে পীযূষ গোয়ালের নতুন ঘোষণা

ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়াল (Piyush Goyal ) সম্প্রতি দেশজুড়ে উদ্যমী উদ্যোগপতিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘স্টার্টআপ ইন্ডিয়া ডেস্ক’ নামে একটি…

Piyush Goyal Launches Startup India Desk

ভারতের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়াল (Piyush Goyal ) সম্প্রতি দেশজুড়ে উদ্যমী উদ্যোগপতিদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘স্টার্টআপ ইন্ডিয়া ডেস্ক’ নামে একটি হেল্পলাইন চালু করা হচ্ছে যা সহজ চারটি ডিজিটের টোল-ফ্রি নম্বরের মাধ্যমে আঞ্চলিক ভাষায় সহায়তা প্রদান করবে। এই ডেস্কটি উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন অভিযোগ ও সমস্যার সমাধান করবে এবং তাদের জন্য একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম সরবরাহ করবে।

   

এছাড়া, মন্ত্রী আরও ঘোষণা করেন যে দ্বিতীয় ‘ফান্ড অব ফান্ডস ফর স্টার্টআপস’ (FFS) অনুমোদন পেয়েছে, যার মোট তহবিল পরিমাণ ১০,০০০ কোটি টাকা। তিনি জানান, প্রথম কিস্তি হিসেবে এই বছরে ২,০০০ কোটি টাকা সিডবিআইয়ের কাছে বিতরণ করা হবে। এই তহবিলটি দেশজুড়ে স্টার্টআপদের জন্য একটি বড় সহায়তা হিসেবে কাজ করবে, বিশেষত ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য।

স্টার্টআপ ইন্ডিয়া ডেস্কের উদ্দেশ্য হলো তরুণ উদ্যোক্তাদের সাহায্য করা এবং তাদের ব্যবসায়িক সমস্যা সমাধানের জন্য সহায়তা প্রদান করা। এই ডেস্কটির মাধ্যমে, যেকোনো স্টার্টআপ তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরতে পারবে এবং এটি তাদের জন্য স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের উন্নতির জন্য পরামর্শ প্রদান করবে।

ফান্ড অব ফান্ডসের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য

FFS-এর মূল লক্ষ্য হলো তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করা, যারা প্রথাগত ব্যাংকিং বা আর্থিক সংস্থাগুলির মাধ্যমে ঋণ বা বিনিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বাধার সম্মুখীন হন। পীযূষ গোয়াল জানান, এই তহবিলটি বিশেষভাবে গভীর প্রযুক্তির (ডিপ টেক) স্টার্টআপগুলোকে সমর্থন প্রদান করবে। এর মধ্যে থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), রোবটিক্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, মেশিন লার্নিং, প্রিসিশন ম্যানুফ্যাকচারিং এবং বায়োটেকনোলজি। এসব ক্ষেত্রের স্টার্টআপদের জন্য প্রচুর আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন, কারণ এগুলোর বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ এবং উচ্চ মূলধন খরচের প্রয়োজন।

পীযূষ গোয়াল আরও বলেন, “এই তহবিলের মাধ্যমে আমরা এমন প্রযুক্তির উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে চাই, যা ভারতের জাতীয় অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং ভারতকে একটি বৈশ্বিক উদ্ভাবন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে।”

এই তহবিলের মাধ্যমে সরকারের উদ্দেশ্য হলো উচ্চ প্রযুক্তির গবেষণা ও উন্নয়নে সহায়তা প্রদান করা, যা দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে এবং উদ্ভাবনী সমাধান সৃষ্টি করবে।

স্টার্টআপ ইন্ডিয়া ডেস্কের গুরুত্ব

পীযূষ গোয়াল স্টার্টআপ ইন্ডিয়া ডেস্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি শুধুমাত্র স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের জন্য একটি হেল্পলাইন হিসেবে কাজ করবে না, বরং তারা এখান থেকে এমন পদক্ষেপের পরামর্শ পেতে পারবে যার মাধ্যমে তারা তাদের উদ্যোগ আরও উন্নত করতে পারবেন। এই ডেস্কটির মাধ্যমে উদ্যোক্তারা সরকারের কাছে তাদের সমস্যাগুলি তুলে ধরতে পারবেন এবং সরকার তাদের জন্য সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করবে।

এছাড়া, মন্ত্রী বলেন যে, এই ডেস্কটি উদ্যোক্তাদের কাছে একটি যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে, যেখানে তারা সহজেই তাদের সমস্যা জানাতে পারবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে নির্দেশনা পেতে পারবে। এতে দেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম আরও শক্তিশালী হবে।

Advertisements

রাজ্য পর্যায়ে SIDBI-এর কার্যক্রম

এছাড়া, পীযূষ গোয়াল SIDBI  (স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া) কে প্রতি রাজ্যে কমপক্ষে একটি সাপোর্ট সেন্টার স্থাপন করার আহ্বান জানিয়েছেন। এই সেন্টারগুলো স্টার্টআপদের জন্য প্রাথমিক অবকাঠামো ও শেয়ার্ড ফ্যাসিলিটিজ প্রদান করবে। এতে করে, স্থানীয় উদ্যোক্তারা সহজেই তাদের ব্যবসায়িক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারবেন এবং প্রাথমিক সহায়তা পেতে পারবেন।

পীযূষ গোয়াল আরো বলেন, স্টার্টআপদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও দক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি করতে সরকারের উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। SIDBI-এর এই পদক্ষেপটি দেশের প্রতিটি রাজ্যে উদ্যোক্তা ও স্টার্টআপদের জন্য কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে।

প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের দিকে নজর

FFS-এর মাধ্যমে যে ফান্ড বিতরণ করা হবে, তার একটি বড় অংশ হবে এমন স্টার্টআপগুলির জন্য, যারা নতুন ও গভীর প্রযুক্তি উদ্ভাবনের দিকে মনোনিবেশ করছেন। AI, রোবটিক্স, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, মেশিন লার্নিং, প্রিসিশন ম্যানুফ্যাকচারিং, বায়োটেকনোলজি এবং সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইনের মতো ক্ষেত্রগুলোর জন্য এই তহবিলটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে। এসব ক্ষেত্রে উদ্ভাবন করতে অনেক সময় এবং উচ্চ মূলধন প্রয়োজন, তাই সরকার এসব স্টার্টআপগুলির জন্য সহায়তা প্রদান করছে।

মন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, “আমরা আশা করি এই তহবিলটি স্টার্টআপদের জন্য একটি শক্তিশালী সহায়ক শক্তি হয়ে উঠবে এবং তারা বিশ্বের মধ্যে প্রযুক্তিগত নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।”

সার্বিক উদ্দেশ্য

সামগ্রিকভাবে, পীযূষ গোয়াল সরকারের এই নতুন উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে দেশব্যাপী উদ্ভাবনী ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির পথ প্রশস্ত করার কথা ঘোষণা করেছেন। স্টার্টআপ ইন্ডিয়া ডেস্ক এবং দ্বিতীয় ফান্ড অব ফান্ডস ভারতীয় উদ্যোক্তা ও উদ্ভাবকদের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা করতে যাচ্ছে, যা দেশের অর্থনীতি ও প্রযুক্তি খাতে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে।

এই পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়িত হলে, ভারত বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী উদ্ভাবনী হাব হিসেবে উঠে আসবে, যা দেশের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সহায়ক হবে।