ভারত-পাক যুদ্ধের বাজারে কতটা বাড়ল পেট্রল-ডিজেলর দাম? জানুন বিস্তারিত

ভারতের তেল বিপণন সংস্থাগুলো (ওএমসি) প্রতিদিন সকাল ৬টায় পেট্রোল (Petrol Prices) ও ডিজেলের (Diesel price) দাম সংশোধন করে, যা বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দামের ওঠানামা এবং…

Petrol, Diesel Prices Unchanged on May 7: Check Latest Fuel Rates Across Major Cities

ভারতের তেল বিপণন সংস্থাগুলো (ওএমসি) প্রতিদিন সকাল ৬টায় পেট্রোল (Petrol Prices) ও ডিজেলের (Diesel price) দাম সংশোধন করে, যা বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দামের ওঠানামা এবং মুদ্রা বিনিময় হারের প্রতিফলন ঘটায়। এই নিয়মিত আপডেটগুলো স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এবং ভোক্তাদের সবচেয়ে সঠিক ও বর্তমান জ্বালানি মূল্যের তথ্য প্রদান করে। ২০২২ সালের মে মাস থেকে ভারতে জ্বালানি মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে, যখন কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার জ্বালানি কর হ্রাস করেছিল। তবে, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম এবং অন্যান্য কারণের উপর ভিত্তি করে দাম প্রতিদিন পর্যালোচনা করা হয়।

৯ মে, ২০২৫-এ শহরভিত্তিক পেট্রোল ও ডিজেলের দাম

নিম্নলিখিত তালিকায় ভারতের প্রধান শহরগুলোতে ৮ মে, ২০২৫-এর পেট্রোল ও ডিজেলের দাম (প্রতি লিটারে ভারতীয় টাকায়) দেওয়া হল:

   
  • নয়া দিল্লি: পেট্রোল – ৯৪.৭২, ডিজেল – ৮৭.৬২
  • মুম্বাই: পেট্রোল – ১০৪.২১, ডিজেল – ৯২.১৫
  • কলকাতা: পেট্রোল – ১০৩.৯৪, ডিজেল – ৯০.৭৬
  • চেন্নাই: পেট্রোল – ১০০.৭৫, ডিজেল – ৯২.৩৪
  • আহমেদাবাদ: পেট্রোল – ৯৪.৪৯, ডিজেল – ৯০.১৭
  • বেঙ্গালুরু: পেট্রোল – ১০২.৯২, ডিজেল – ৮৯.০২
  • হায়দরাবাদ: পেট্রোল – ১০৭.৪৬, ডিজেল – ৯৫.৭০
  • জয়পুর: পেট্রোল – ১০৪.৭২, ডিজেল – ৯০.২১
  • লখনউ: পেট্রোল – ৯৪.৬৯, ডিজেল – ৮৭.৮০
  • পুণে: পেট্রোল – ১০৪.০৪, ডিজেল – ৯০.৫৭
  • চণ্ডীগড়: পেট্রোল – ৯৪.৩০, ডিজেল – ৮২.৪৫
  • ইন্দোর: পেট্রোল – ১০৬.৪৮, ডিজেল – ৯১.৮৮
  • পাটনা: পেট্রোল – ১০৫.৫৮, ডিজেল – ৯৩.৮০
  • সুরাট: পেট্রোল – ৯৫.০০, ডিজেল – ৮৯.০০
  • নাসিক: পেট্রোল – ৯৫.৫০, ডিজেল – ৮৯.৫০

ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের দামকে প্রভাবিত করার কারণগুলো

১. অপরিশোধিত তেলের দাম: পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হিসেবে, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের ওঠানামা ভারতে জ্বালানি মূল্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি অপরিশোধিত তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৮০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে, যা জ্বালানি মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করেছে।

২. বিনিময় হার: ভারত তার অপরিশোধিত তেলের বেশিরভাগ আমদানি করে, তাই ভারতীয় টাকা এবং মার্কিন ডলারের মধ্যে বিনিময় হারের পরিবর্তন জ্বালানি মূল্যকে প্রভাবিত করে। টাকার মান কমে গেলে জ্বালানির দাম বাড়ে।

৩. কর: পেট্রোল ও ডিজেলের উপর কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কর আরোপিত হয়। রাজ্যভেদে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ভিন্ন হয়, যা শহরভিত্তিক দামের তারতম্যের অন্যতম কারণ। উদাহরণস্বরূপ, মুম্বাই এবং হায়দরাবাদে উচ্চ ভ্যাটের কারণে দাম বেশি।

৪. শোধনাগার ব্যয়: অপরিশোধিত তেল থেকে পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদনের শোধন প্রক্রিয়ার ব্যয়ও মূল্য নির্ধারণে প্রভাব ফেলে। শোধনাগারের দক্ষতা এবং অপরিশোধিত তেলের প্রকারভেদ এই ব্যয়কে প্রভাবিত করে।

৫. চাহিদা ও সরবরাহ: জ্বালানির চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য মূল্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রীষ্মকালে সেচ এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের জন্য জ্বালানির চাহিদা বাড়লে দাম বৃদ্ধি পায়।

এসএমএসের মাধ্যমে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম জানুন

ভোক্তারা সহজেই তাদের শহরের সর্বশেষ পেট্রোল ও ডিজেলের দাম এসএমএসের মাধ্যমে জানতে পারেন। ইন্ডিয়ান অয়েলের গ্রাহকরা শহরের কোড সহ “RSP” লিখে ৯২২৪৯৯২২৪৯ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে পারেন। বিপিসিএল গ্রাহকরা “RSP” লিখে ৯২২৩১১২২২২ নম্বরে এবং এইচপিসিএল গ্রাহকরা “HP Price” লিখে ৯২২২২০১১২২ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে বর্তমান জ্বালানি মূল্য জানতে পারেন।

বর্তমান প্রেক্ষাপট এবং স্থিতিশীলতা

২০২৫ সালের মে মাসে ভারতে জ্বালানি মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে, যা কেন্দ্রীয় সরকারের স্থিতিশীল কর নীতি এবং বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের তুলনামূলক স্থিতিশীলতার ফল। তবে, ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাম্প্রতিক উত্তেজনা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অপরিশোধিত তেলের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা ভবিষ্যতে দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়াও, ভারতের অর্থনীতি অপরিশোধিত তেলের আমদানির উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, তাই ডলারের বিপরীতে টাকার মানের অবমূল্যায়ন জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।

ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসি), ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (বিপিসিএল) এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড (এইচপিসিএল)-এর মতো রাষ্ট্রায়ত্ত তেল বিপণন সংস্থাগুলো ভারতের জ্বালানি বাজারের প্রায় ৯০% নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংস্থাগুলো প্রতিদিনের মূল্য সংশোধনের মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে স্বচ্ছ এবং প্রতিযোগিতামূলক দাম নিশ্চিত করছে।

ভারতের জ্বালানি মূল্য বর্তমানে স্থিতিশীল হলেও, বিশ্ববাজারের অস্থিরতা এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কারণগুলো ভবিষ্যতে দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ভোক্তাদের জন্য নিয়মিত মূল্য পরীক্ষা করা এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণের সুবিধা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। তেল বিপণন সংস্থাগুলোর প্রযুক্তিগত সুবিধা, যেমন এসএমএস পরিষেবা, ভোক্তাদের দৈনন্দিন জ্বালানি মূল্যের তথ্য সহজে পেতে সাহায্য করছে। ভারতের অর্থনীতি এবং জনজীবনে জ্বালানি মূল্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এবং এর স্থিতিশীলতা দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Advertisements