Petrol Prices Today: ভারতে তেল বিপণন সংস্থাগুলো (ওএমসি) প্রতিদিন সকাল ৬টায় পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য সংশোধন করে, যা বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের মূল্য এবং মুদ্রা বিনিময় হারের পরিবর্তনের প্রতিফলন ঘটায়। এই নিয়মিত আপডেটগুলো স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এবং ভোক্তাদের সবচেয়ে সঠিক ও বর্তমান জ্বালানি মূল্যের তথ্য প্রদান করে। ২০২৫ সালের ৩ জুনের জন্য শহরভিত্তিক পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য প্রকাশিত হয়েছে, যা ভারতের বিভিন্ন শহরে জ্বালানির দামের স্থিতিশীলতা প্রতিফলিত করে। এই প্রতিবেদনে আমরা বিভিন্ন শহরের পেট্রোল ও ডিজেলের দাম, এর পেছনের মূল কারণ এবং কীভাবে এসএমএসের মাধ্যমে দাম যাচাই করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
শহরভিত্তিক পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য (৩ জুন, ২০২৫)
নিম্নলিখিত তালিকায় ভারতের প্রধান শহরগুলোতে পেট্রোল ও ডিজেলের প্রতি লিটার মূল্য দেওয়া হলো:
• নয়াদিল্লি: পেট্রোল – ₹৯৪.৭২, ডিজেল – ₹৮৭.৬২
• মুম্বাই: পেট্রোল – ₹১০৪.২১, ডিজেল – ₹৯২.১৫
• কলকাতা: পেট্রোল – ₹১০৫.৪১, ডিজেল – ₹৯০.৭৬
• চেন্নাই: পেট্রোল – ₹১০০.৭৫, ডিজেল – ₹৯২.৩৪
• আহমেদাবাদ: পেট্রোল – ₹৯৪.৪৯, ডিজেল – ₹৯০.১৭
• বেঙ্গালুরু: পেট্রোল – ₹১০২.৯২, ডিজেল – ₹৮৯.০২
• হায়দ্রাবাদ: পেট্রোল – ₹১০৭.৪৬, ডিজেল – ₹৯৫.৭০
• জয়পুর: পেট্রোল – ₹১০৪.৭২, ডিজেল – ₹৯০.২১
• লখনউ: পেট্রোল – ₹৯৪.৬৯, ডিজেল – ₹৮৭.৮০
• পুনে: পেট্রোল – ₹১০৪.০৪, ডিজেল – ₹৯০.৫৭
• চণ্ডীগড়: পেট্রোল – ₹৯৪.৩০, ডিজেল – ₹৮২.৪৫
• ইন্দোর: পেট্রোল – ₹১০৬.৪৮, ডিজেল – ₹৯১.৮৮
• পাটনা: পেট্রোল – ₹১০৫.৫৮, ডিজেল – ₹৯৩.৮০
• সুরাট: পেট্রোল – ₹৯৫.০০, ডিজেল – ₹৮৯.০০
• নাসিক: পেট্রোল – ₹৯৫.৫০, ডিজেল – ₹৮৯.৫০
এই দামগুলো দেখায় যে, ভারতের বিভিন্ন শহরে জ্বালানির দামে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, হায়দ্রাবাদে পেট্রোলের দাম সর্বোচ্চ (₹১০৭.৪৬/লিটার), আর চণ্ডীগড়ে ডিজেলের দাম সর্বনিম্ন (₹৮২.৪৫/লিটার)। এই পার্থক্যের পেছনে রয়েছে রাজ্যভিত্তিক কর, পরিবহন খরচ এবং স্থানীয় চাহিদা-সরবরাহের গতিশীলতা।
জ্বালানি মূল্যের পেছনের মূল কারণগুলো
ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম নির্ধারণে বেশ কয়েকটি কারণ প্রভাব ফেলে। এই কারণগুলো বোঝা ভোক্তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দামের তারতম্যের পেছনের যুক্তি ব্যাখ্যা করে।
• অপরিশোধিত তেলের বিশ্বব্যাপী মূল্য: ভারত তার তেলের চাহিদার প্রায় ৮০-৮৫% আমদানি করে। ফলে, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের ওঠানামা সরাসরি দেশীয় জ্বালানি মূল্যের উপর প্রভাব ফেলে। সম্প্রতি, ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম প্রতি ব্যারেল ৮৫.৫৪ ডলার এবং ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ৭৯.১৫ ডলারে রেকর্ড করা হয়েছে, যা ১.২৪% হ্রাস পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ থেকে তেল মুক্তির সিদ্ধান্ত কিছুটা সরবরাহ সংকট মোকাবেলা করেছে, যা দামের উপর প্রভাব ফেলেছে।
• মুদ্রা বিনিময় হার: ভারতীয় রুপির বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম জ্বালানি মূল্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক। রুপির মান কমে গেলে আমদানি করা তেলের দাম বেড়ে যায়, যা পেট্রোল ও ডিজেলের খুচরা মূল্য বাড়ায়।
• কর ব্যবস্থা: কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের আরোপিত কর, যেমন এক্সাইজ ডিউটি এবং মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), জ্বালানির দামের একটি বড় অংশ গঠন করে। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লিতে ভ্যাট ১৬.৭৫% এবং মুম্বাইতে ২৪%, যা দামের পার্থক্যের একটি প্রধান কারণ।
• রিফাইনিং খরচ: অপরিশোধিত তেলকে ব্যবহারযোগ্য জ্বালানিতে রূপান্তরের খরচও মূল্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। এই খরচ তেলের গুণমান এবং রিফাইনারির দক্ষতার উপর নির্ভর করে।
• চাহিদা-সরবরাহের গতিশীলতা: শহরাঞ্চলে জ্বালানির চাহিদা বেশি থাকায় দামও তুলনামূলকভাবে বেশি হয়। উদাহরণস্বরূপ, মুম্বাই এবং হায়দ্রাবাদের মতো মেট্রো শহরগুলোতে জ্বালানির চাহিদা বেশি, যা দাম বাড়ায়।
মূল্য স্থিতিশীলতা এবং নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপ
২০২২ সালের মে মাস থেকে ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে, যা কেন্দ্রীয় এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকারের কর হ্রাসের ফল। তবে, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোল ও ডিজেলের উপর প্রতি লিটারে ২ টাকা করে এক্সাইজ ডিউটি বাড়িয়েছে। কিন্তু তেল বিপণন সংস্থাগুলো এই বৃদ্ধি শোষণ করছে, যাতে ভোক্তাদের উপর এর প্রভাব না পড়ে।
ভারত ২০১০ সালে পেট্রোল এবং ২০১৪ সালে ডিজেলের দাম নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেছে। বর্তমানে, দাম বাজারভিত্তিক হলেও এক্সাইজ ডিউটি, বেস প্রাইসিং ফ্রেমওয়ার্ক এবং অনানুষ্ঠানিক মূল্য নিয়ন্ত্রণের মতো নিয়ন্ত্রক পদক্ষেপ দ্বারা প্রভাবিত হয়।
কীভাবে এসএমএসের মাধ্যমে দাম যাচাই করবেন?
ভোক্তারা সহজেই এসএমএসের মাধ্যমে তাদের শহরের পেট্রোল ও ডিজেলের দাম জানতে পারেন।
• ইন্ডিয়ান অয়েল: শহরের কোড সহ “RSP” লিখে ৯২২৪৯৯২২৪৯ নম্বরে পাঠান। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লির জন্য “RSP ১০২০৯০” লিখে পাঠান।
• বিপিসিএল: “RSP” লিখে ৯২২৩১১২২২২ নম্বরে পাঠান।
• এইচপিসিএল: “HP Price” লিখে ৯২২২২০১১২২ নম্বরে পাঠান।
এই পরিষেবাগুলো ভোক্তাদের জন্য সুবিধাজনক এবং সঠিক তথ্য প্রদান করে। প্রতিটি পেট্রোল পাম্পে ডিলার কোড প্রকাশ্যে প্রদর্শিত থাকে, যা এসএমএসের মাধ্যমে দাম যাচাইয়ে ব্যবহার করা যায়।
জ্বালানি দামের প্রভাব
জ্বালানির দাম ভারতের অর্থনীতি এবং দৈনন্দিন জীবনে গভীর প্রভাব ফেলে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধি পরিবহন খরচ বাড়ায়, যা পণ্য ও পরিষেবার মূল্য বৃদ্ধির দিকে নিয়ে যায়। এটি মুদ্রাস্ফীতির উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতা হ্রাস করে। পেট্রোল ও ডিজেলের দামের স্থিতিশীলতা ভোক্তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও, বিশ্বব্যাপী তেলের বাজারের অস্থিরতা এবং রুপির মানের ওঠানামা ভবিষ্যতে দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
২০২৫ সালের ৩ জুনের পেট্রোল ও ডিজেলের দাম ভারতের বিভিন্ন শহরে স্থিতিশীল রয়েছে, যা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কর হ্রাস এবং তেল বিপণন সংস্থাগুলোর কৌশলগত পদক্ষেপের ফল। তবে, বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের দাম, মুদ্রা বিনিময় হার এবং স্থানীয় কর ব্যবস্থা জ্বালানির দাম নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভোক্তারা এসএমএসের মাধ্যমে সহজেই তাদের শহরের জ্বালানি মূল্য যাচাই করতে পারেন। ভবিষ্যতে, বৈদ্যুতিক যানবাহন (ইভি) এর প্রসার এবং সরকারের টেকসই জ্বালানি নীতি জ্বালানির চাহিদা এবং দামের গতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে। আপনার শহরের জ্বালানি মূল্য সম্পর্কে আরও জানতে এসএমএস পরিষেবা ব্যবহার করুন এবং আপডেট থাকুন