Petrol, Diesel Prices Today: ভারতের তেল বিপণন সংস্থাগুলি (ওএমসি) প্রতিদিন সকাল ৬টায় পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য সংশোধন করে, যা বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের মূল্যের ওঠানামা এবং মুদ্রা বিনিময় হারের উপর নির্ভর করে। এই নিয়মিত মূল্য সংশোধন ভোক্তাদের জন্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এবং সবচেয়ে সঠিক ও বর্তমান জ্বালানি মূল্যের তথ্য প্রদান করে। ২০২২ সালের মে মাস থেকে ভারতে জ্বালানি মূল্য স্থিতিশীল রয়েছে, যখন কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার জ্বালানির উপর কর হ্রাস করেছিল। তবে, সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে ডিজেলের মূল্য লিটার প্রতি ৮৯.০২ টাকা থেকে বেড়ে ১ এপ্রিল থেকে ৯১.০২ টাকা হয়েছে।
১২ এপ্রিলের শহরভিত্তিক পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য
শহর |
পেট্রোল (টাকা/লিটার) |
ডিজেল (টাকা/লিটার) |
নয়াদিল্লি |
৯৪.৭২ |
৮৭.৬২ |
মুম্বই |
১০৪.২১ |
৯২.১৫ |
কলকাতা |
১০৩.৯৪ |
৯০.৭৬ |
চেন্নাই |
১০০.৭৫ |
৯২.৩৪ |
আহমেদাবাদ |
৯৪.৪৯ |
৯০.১৭ |
বেঙ্গালুরু |
১০২.৯২ |
৮৯.০২ |
হায়দ্রাবাদ |
১০৭.৪৬ |
৯৫.৭০ |
জয়পুর |
১০৪.৭২ |
৯০.২১ |
লখনউ |
৯৪.৬৯ |
৮৭.৮০ |
পুনে |
১০৪.০৪ |
৯০.৫৭ Advertisements
|
চণ্ডীগড় |
৯৪.৩০ |
৮২.৪৫ |
ইন্দোর |
১০৬.৪৮ |
৯১.৮৮ |
পাটনা |
১০৫.৫৮ |
৯৩.৮০ |
সুরাট |
৯৫.০০ |
৮৯.০০ |
নাসিক |
৯৫.৫০ |
৮৯.৫০ |
ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য নির্ধারণে প্রভাব ফেলে যেসব কারণ
১. অপরিশোধিত তেলের মূল্য: পেট্রোল ও ডিজেল উৎপাদনের প্রধান কাঁচামাল হল অপরিশোধিত তেল। বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্যের ওঠানামা ভারতে জ্বালানি মূল্যের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। যখন আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ে, তখন পেট্রোল ও ডিজেলের দামও বৃদ্ধি পায়।
২. মুদ্রা বিনিময় হার: ভারত তার অপরিশোধিত তেলের বেশিরভাগ আমদানি করে। তাই ভারতীয় রুপি এবং মার্কিন ডলারের মধ্যে বিনিময় হারের পরিবর্তন জ্বালানি মূল্যের উপর প্রভাব ফেলে। রুপির মান কমে গেলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পায়, যা জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দেয়।
৩. কর: পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্যের একটি বড় অংশ কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন করের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। এই কর রাজ্যভেদে ভিন্ন হতে পারে, যা ভোক্তাদের পাম্পে প্রদত্ত চূড়ান্ত মূল্যের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, কেন্দ্রীয় সরকারের এক্সাইজ শুল্ক এবং রাজ্য সরকারের ভ্যাট বা মূল্য সংযোজন কর জ্বালানি মূল্যের একটি বড় অংশ গঠন করে।
৪. রিফাইনিং ব্যয়: অপরিশোধিত তেলকে পেট্রোল ও ডিজেলে রূপান্তর করার প্রক্রিয়ায় যে ব্যয় হয়, তা জ্বালানি মূল্য নির্ধারণে ভূমিকা রাখে। এই ব্যয় অপরিশোধিত তেলের ধরন এবং রিফাইনারির দক্ষতার উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে।
৫. চাহিদা ও সরবরাহ: জ্বালানি মূল্য নির্ধারণে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেট্রোল ও ডিজেলের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে সাধারণত দাম বাড়ে, কারণ সরবরাহকারীরা বাজারের অবস্থার সঙ্গে তাল মিলিয়ে দাম সমন্বয় করে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে জ্বালানি মূল্য
ভারতে জ্বালানি মূল্য নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এক্সাইজ শুল্ক, বেস প্রাইসিং এবং মূল্যের সীমা নির্ধারণের মতো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার জ্বালানি মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে। তবে, বিশ্বব্যাপী অপরিশোধিত তেলের বাজারে অস্থিরতা এবং ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাবলির কারণে জ্বালানি মূল্য প্রায়ই প্রভাবিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বা তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির মধ্যে উৎপাদন হ্রাসের সিদ্ধান্ত অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।
শহরভিত্তিক মূল্যের পার্থক্য
ভারতের বিভিন্ন শহরে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম ভিন্ন হওয়ার প্রধান কারণ হল রাজ্য সরকারের কর নীতি। উদাহরণস্বরূপ, মুম্বই এবং হায়দ্রাবাদে পেট্রোলের দাম তুলনামূলকভাবে বেশি, যেখানে নয়াদিল্লি এবং আহমেদাবাদে দাম কিছুটা কম। একইভাবে, ডিজেলের ক্ষেত্রে চণ্ডীগড়ে দাম সবচেয়ে কম (৮২.৪৫ টাকা/লিটার), আর হায়দ্রাবাদে সবচেয়ে বেশি (৯৫.৭০ টাকা/লিটার)। এই পার্থক্যের পিছনে রাজ্য সরকারের ভ্যাট এবং অন্যান্য স্থানীয় করের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
ভোক্তাদের উপর প্রভাব
জ্বালানি মূল্যের বৃদ্ধি সাধারণ ভোক্তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়িয়ে দেয়। পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে পণ্য ও পরিষেবার দামও বাড়তে পারে। বিশেষত, কৃষি ও শিল্প খাতে ডিজেলের ব্যবহার বেশি হওয়ায় এর মূল্যবৃদ্ধি উৎপাদন ব্যয়ের উপর প্রভাব ফেলে। সাম্প্রতিককালে বেঙ্গালুরুতে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পরিবহন সংস্থাগুলির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের মূল্য নির্ধারণ একটি জটিল প্রক্রিয়া, যা বিশ্ববাজার, সরকারি নীতি এবং স্থানীয় অর্থনৈতিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। তেল বিপণন সংস্থাগুলির দৈনিক মূল্য সংশোধন ভোক্তাদের জন্য স্বচ্ছতা নিশ্চিত করলেও, জ্বালানি মূল্যের ওঠানামা অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। সরকারের পক্ষ থেকে কর হ্রাস এবং বিকল্প জ্বালানি উৎসের প্রচারের মতো পদক্ষেপ ভবিষ্যতে জ্বালানি মূল্যের স্থিতিশীলতায় সহায়ক হতে পারে। ভোক্তাদের জন্য, নিয়মিত মূল্য পরীক্ষা এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী অভ্যাস গ্রহণ করা এই পরিস্থিতি মোকাবিলার উপায় হতে পারে।