Petrol price today: ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম গত ২০২২ সালের মে মাস থেকে স্থিতিশীল রয়েছে। ৪ জুন, ২০২৫-এও দেশের প্রধান মেট্রো শহরগুলোতে জ্বালানির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সর্বশেষ বড় ধরনের দাম সমন্বয় করা হয়েছিল ২০২৪ সালের মার্চ মাসে, যখন পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি ২ টাকা কমানো হয়েছিল। তেল বিপণন সংস্থাগুলো, যেমন ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসিএল), প্রতিদিন সকাল ৬টায় জ্বালানির দাম পর্যালোচনা করে এবং বৈশ্বিক অপরিশোধিত তেলের দাম ও রুপি-ডলার বিনিময় হারের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে। এই প্রতিবেদনে আমরা ৪ জুন, ২০২৫-এর পেট্রোল ও ডিজেলের দাম, এর পেছনের কারণ এবং ভারতীয় জ্বালানি বাজারের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করব।
প্রধান শহরে জ্বালানির দাম
৪ জুন, ২০২৫-এর হিসেবে, দেশের প্রধান মেট্রো শহরগুলোতে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম নিম্নরূপ:
- দিল্লি: পেট্রোল প্রতি লিটার ৯৪.৭৭ টাকা, ডিজেল ৮৭.৬৭ টাকা।
- মুম্বাই: পেট্রোল প্রতি লিটার ১০৩.৫০ টাকা, ডিজেল ৯০.০৩ টাকা।
- চেন্নাই: পেট্রোল প্রতি লিটার ১০০.৮২ টাকা, ডিজেল ৯২.৪০ টাকা।
- কলকাতা: পেট্রোল প্রতি লিটার ১০৫.৪১ টাকা, ডিজেল ৯২.০২ টাকা।
এই দামগুলো ২০২২ সালের মে মাস থেকে স্থিতিশীল রয়েছে, যখন কেন্দ্রীয় ও বিভিন্ন রাজ্য সরকার জ্বালানির উপর কর হ্রাস করেছিল। এই কর হ্রাসের ফলে জ্বালানির দাম কিছুটা সাশ্রয়ী হয়েছিল, এবং তখন থেকে তেল বিপণন সংস্থাগুলো দাম অপরিবর্তিত রাখছে।
ডায়নামিক ফুয়েল প্রাইসিং পদ্ধতি
ভারতে ২০১৭ সালের জুন থেকে জ্বালানির দাম প্রতিদিন সকাল ৬টায় পর্যালোচনা করা হয়, যা ‘ডায়নামিক ফুয়েল প্রাইসিং’ পদ্ধতি নামে পরিচিত। এই পদ্ধতি নিশ্চিত করে যে বৈশ্বিক তেলের দামের সামান্যতম পরিবর্তনও ভোক্তা ও ডিলারদের কাছে প্রতিফলিত হয়। জ্বালানির চূড়ান্ত দাম নির্ধারণে বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা হয়:
বৈশ্বিক অপরিশোধিত তেলের দাম: ভারত তার তেলের চাহিদার প্রায় ৮৫% আমদানি করে, তাই ব্রেন্ট ক্রুড ওয়েল এবং ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) এর দাম সরাসরি প্রভাব ফেলে।
- রুপি-ডলার বিনিময় হার: ভারতীয় রুপির মূল্য ডলারের তুলনায় কমে গেলে তেল আমদানির খরচ বাড়ে, যা জ্বালানির দাম বাড়াতে পারে।
- কর ও শুল্ক: কেন্দ্রীয় এক্সাইজ শুল্ক, রাজ্যের ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর), এবং রোড সেস জ্বালানির দামের প্রায় ৫৫% গঠন করে। রাজ্যভেদে ভ্যাটের হার ভিন্ন হওয়ায় শহরগুলোতে দামের পার্থক্য দেখা যায়।
- চাহিদা ও সরবরাহ: দেশে জ্বালানির চাহিদা বাড়লে দামের উপর চাপ পড়ে। গ্রীষ্মকালে ভ্রমণ বৃদ্ধির কারণে পেট্রোলের চাহিদা ২০২৫ সালের মে মাসে ৮.৭৭% বেড়েছে।
বৈশ্বিক তেলের বাজারের প্রভাব
৪ জুন, ২০২৫-এ ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ০.১৮% কমে ৬৫.৫১ ডলার প্রতি ব্যারেলে নেমেছে। এই পতন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তেলের মজুদ হ্রাসের ইঙ্গিতের সঙ্গে কানাডার একটি তেল উৎপাদন কেন্দ্র পুনরায় চালু হওয়ার খবরের কারণে হয়েছে, যা দেশটির মোট উৎপাদনের ৭% বন্ধ করে দিয়েছিল। গত মে মাসে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ৫৯ ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল, যা ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারির পর সর্বনিম্ন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধ এবং ওপেক+-এর উৎপাদন বাড়ানোর নতুন কৌশলের কারণে তেলের দাম এ বছর ১২% কমে গেছে।
তবে, ভারতে জ্বালানির দাম এই বৈশ্বিক ওঠানামার প্রভাব থেকে মুক্ত রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং তেল বিপণন সংস্থাগুলো দাম স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে, যা ভোক্তাদের জন্য স্বস্তির বিষয়। ২০২৪ সালের মার্চে ২ টাকা দাম কমানোর পর থেকে কোনো বড় পরিবর্তন হয়নি।
ভারতের জ্বালানি বাজারের প্রেক্ষাপট
ভারত তার তেলের চাহিদার প্রায় ৮৫% আমদানি করে, যা দেশের জ্বালানি বাজারকে বৈশ্বিক বাজারের উপর নির্ভরশীল করে তুলেছে। তবে, সরকারের জ্বালানি ভর্তুকি থেকে সরে আসার নীতি এবং ইলেকট্রিক যানবাহন (ইভি) ব্যবহারের প্রচার জ্বালানির চাহিদা কিছুটা কমিয়েছে। ২০২৪-২৫ সালে দিল্লিতে ডিজেল গাড়ির ব্যবহার ৯% কমেছে, যা ইভি-এর দিকে স্থানান্তরের ইঙ্গিত দেয়।
তেল বিপণন সংস্থাগুলো, যেমন আইওসিএল, বিপিসিএল এবং এইচপিসিএল, প্রতিদিন জ্বালানির দাম নির্ধারণ করে। ভোক্তারা এসএমএসের মাধ্যমে তাদের শহরের জ্বালানির দাম জানতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, ইন্ডিয়ান অয়েলের গ্রাহকরা “RSP 102090” লিখে ৯২২৪৯৯২২৪৯ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে দিল্লির দাম জানতে পারেন।
ভোক্তাদের জন্য তাৎপর্য
জ্বালানির দাম স্থিতিশীল থাকা ভারতীয় ভোক্তাদের জন্য স্বস্তিদায়ক। পেট্রোল ও ডিজেলের দাম পরিবহন, উৎপাদন এবং দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচের উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। দাম বৃদ্ধি পেলে মুদ্রাস্ফীতির হার বাড়তে পারে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপর চাপ সৃষ্টি করে। সরকারের কর হ্রাস এবং তেল বিপণন সংস্থাগুলোর দক্ষ ব্যবস্থাপনার কারণে দাম স্থিতিশীল থাকায় ভোক্তারা স্বস্তি পাচ্ছেন।
তবে, বৈশ্বিক বাজারে তেলের দামের অস্থিরতা ভবিষ্যতে ভারতের জ্বালানি বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপির মূল্য হ্রাস পেলে আমদানি খরচ বাড়তে পারে, যা দাম বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। এছাড়া, ভারত সরকারের ইভি এবং বায়োফুয়েল প্রচারের উদ্যোগ জ্বালানির চাহিদা কমাতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদে দাম স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে।
৪ জুন, ২০২৫-এ ভারতের প্রধান মেট্রো শহরগুলোতে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই এবং কলকাতায় দাম যথাক্রমে স্থিতিশীল রয়েছে, যা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কর হ্রাস এবং তেল বিপণন সংস্থাগুলোর দক্ষ ব্যবস্থাপনার ফল। বৈশ্বিক তেলের বাজারে অস্থিরতা সত্ত্বেও ভারত জ্বালানির দাম স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে। ভবিষ্যতে ইলেকট্রিক যানবাহন এবং বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি দেশের জ্বালানি নির্ভরতা কমাতে পারে। ভোক্তারা তাদের শহরের জ্বালানির দাম জানতে তেল সংস্থাগুলোর এসএমএস পরিষেবা ব্যবহার করতে পারেন।