রবিবার তেল বিপণন সংস্থাগুলি সারা দেশজুড়ে পেট্রোল ও ডিজেলের নয়া দাম ঘোষণা করেছে। প্রতি দিন সকাল ৬টা নাগাদ তেল বিপণন সংস্থাগুলি পেট্রোল ও ডিজেলের দাম সংশোধন করে থাকে, যা বাজারের বর্তমান পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক তেল মূল্যের ওঠানামা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এই নিয়মিত পরিবর্তনগুলি গ্রাহকদের কাছে সঠিক ও স্বচ্ছ মূল্য প্রদান করার লক্ষ্যেই করা হয়।
ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের দামে পরিবর্তন মূলত গ্লোবাল ক্রুড অয়েল (কাঁচা তেল) দামের ওঠানামা এবং ভারতীয় রুপি-ডলার এক্সচেঞ্জ রেটের উপর নির্ভর করে। এছাড়া কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কর ও শুল্কের কারণে দাম এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে ভিন্ন হতে পারে।
রবিবার বিভিন্ন শহরে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম –
দিল্লি: পেট্রোল ৯৪.৭২ টাকা লিটার, ডিজেল ৮৭.৬২ টাকা।
মুম্বই: পেট্রোল ১০৩.৪৪ টাকা লিটার, ডিজেল ৮৯.৯৭ টাকা।
চেন্নাই: পেট্রোল ১০০.৮৫ টাকা লিটার, ডিজেল ৯২.৪৪ টাকা।
কলকাতা: পেট্রোল ১০৩.৯৪ টাকা লিটার, ডিজেল ৯০.৭৬ টাকা।
নয়ডা: পেট্রোল ৯৪.৬৬ টাকা লিটার, ডিজেল ৮৭.৭৬ টাকা।
লখনউ: পেট্রোল ৯৪.৬৫ টাকা লিটার, ডিজেল ৮৭.৭৬ টাকা।
বেঙ্গালুরু পেট্রোল ১০২.৮৬ টাকা লিটার, ডিজেল ৮৮.৯৪ টাকা।
হায়দ্রাবাদ: পেট্রোল ১০৭.৪১ টাকা লিটার, ডিজেল ৯৫.৬৫ টাকা।
জয়পুর: পেট্রোল ১০৪.৮৮ টাকা লিটার, ডিজেল ৯০.৩৬ টাকা।
ভুবনেশ্বর: পেট্রোল ১০১.০৬ টাকা লিটার, ডিজেল ৯২.৯১ টাকা।
বিশ্বব্যাপী তেল মূল্যের প্রভাব:
বিশ্ববাজারে ক্রুড অয়েলের দাম ওঠানামা করার কারণে ভারতের পেট্রোল ও ডিজেলের দামও পরিবর্তিত হয়। ভারতের অধিকাংশ তেল আমদানি হয় আন্তর্জাতিক বাজার থেকে, এবং যখন ক্রুড অয়েলের দাম বেড়ে যায়, তখন তা সরাসরি পেট্রোল ও ডিজেলের দামে প্রভাব ফেলে। গত কয়েক মাস ধরে আন্তর্জাতিক তেলের দাম কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও, কোনো গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি যদি তেলের সরবরাহকে প্রভাবিত করে, তাহলে এর প্রভাব দেশের বাজারে পড়ে।
টাকা-ডলার এক্সচেঞ্জ রেট:
ভারতীয় টাকা ও মার্কিন ডলারের এক্সচেঞ্জ রেটও পেট্রোল-ডিজেলের দামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেহেতু ভারত বিদেশ থেকে তেল আমদানি করে, টাকা দুর্বল হলে বিদেশি মুদ্রায় তেল কিনতে খরচ বাড়ে। যা পরোক্ষভাবে দেশীয় বাজারে পেট্রোল ও ডিজেলের দামে প্রভাব ফেলে। গত কিছু সময় ধরে টাকা-ডলারের বিনিময় হার কিছুটা দুর্বল হয়েছে, যার কারণে তেলের দাম বাড়তে পারে।
কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ট্যাক্স নীতি:
ভারতে পেট্রোল ও ডিজেলের দামেও রাজ্য সরকারের ট্যাক্সের প্রভাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার পেট্রোল ও ডিজেলের উপর এক্সাইজ ডিউটি নির্ধারণ করে এবং রাজ্য সরকারও বিভিন্ন রাজ্যে ভ্যাট ও অন্যান্য শুল্কের মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে দেয়। ফলে এক শহর থেকে আরেক শহরে দাম কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ মুম্বই ও হায়দ্রাবাদে দাম তুলনামূলকভাবে বেশি, কারণ সেখানে রাজ্য সরকারের ট্যাক্স বেশি।
রিফাইনিং খরচ:
পেট্রোল ও ডিজেল তৈরির প্রক্রিয়া অত্যন্ত ব্যয়বহুল, কারণ কাঁচা তেলকে পরিশোধন করে উচ্চমানের পেট্রোল ও ডিজেল তৈরি করতে হয়। এই পরিশোধন প্রক্রিয়ার খরচও পেট্রোল-ডিজেলের দামে প্রভাব ফেলে। এছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন ধরনের তেল রিফাইন করা হয়, যার জন্য কিছু তেলের রিফাইনিং খরচ অন্যটির তুলনায় বেশি।
সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্য:
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তেলের চাহিদা বৃদ্ধি পেলেই এর সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টি হতে পারে, যা দাম বাড়াতে পারে। তবে ভারতের মতো বৃহৎ অর্থনীতির দেশেও তেলের দাম স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে ওঠানামা করে।
এই সকল কারণের সমন্বয়ে প্রতি দিন সকাল ৬টায় নতুন দাম ঘোষণা করা হয়। ফলে, পেট্রোল-ডিজেলের দামের প্রভাব সাধারণ মানুষকে প্রতিদিনই অনুভব করতে হয়।
বর্তমানে, ভারতীয় বাজারে পেট্রোল ও ডিজেলের দাম কিছুটা স্থিতিশীল হলেও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক কারণ এবং রাজ্য সরকারের ট্যাক্স নীতির পরিবর্তনগুলি এই দামকে আরো পরিবর্তিত করতে পারে। তাই, ভোক্তাদের জন্য পেট্রোল ও ডিজেলের দাম নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি