মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য ব্যক্তিগত ঋণের সুবিধা কতখানি? অসুবিধাই বা কী কী

মধ্যবিত্ত পরিবারের আর্থিক চাপ অনেক সময় তাদের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসা, বিয়ের খরচ, উচ্চ শিক্ষা বা কোনো জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের…

মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য ব্যক্তিগত ঋণের সুবিধা কতখানি? অসুবিধাই বা কী কী

মধ্যবিত্ত পরিবারের আর্থিক চাপ অনেক সময় তাদের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। চিকিৎসা, বিয়ের খরচ, উচ্চ শিক্ষা বা কোনো জরুরি পরিস্থিতির জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের সংকট মোকাবেলা করতে হয় প্রায়ই। এমন পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত ঋণ হতে পারে একমাত্র উপায়। তবে, এই ঋণ গ্রহণের আগে এর সুবিধা এবং অসুবিধাগুলি ভালোভাবে বুঝে নেওয়া জরুরি।

ব্যক্তিগত ঋণ: একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
ব্যক্তিগত ঋণ হল এমন একটি ঋণ যা জামানত ছাড়া নেওয়া যায়। এই ঋণটি সাধারণত ঋণগ্রহীতা তাদের প্রয়োজনীয় খরচ যেমন চিকিৎসা, বাড়ি সংস্কার, শিক্ষা, বা ঋণ সম্মিলন (debt consolidation) করতে ব্যবহার করতে পারেন। ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার ঋণগ্রহীতার আয় এবং ক্রেডিট স্কোরের ওপর নির্ভর করে এবং সাধারণত ১০.৫% থেকে ২৪% পর্যন্ত হতে পারে। এই ঋণের শর্তে নিয়মিত কিস্তিতে পরিশোধের ব্যবস্থা থাকে।

মধ্যবিত্তদের জন্য ব্যক্তিগত ঋণের সুবিধা
১. কম সুদের হার: ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার সাধারণত ক্রেডিট কার্ডের তুলনায় কম থাকে। ফলে, মধ্যবিত্তদের জন্য এটি একটি সাশ্রয়ী ঋণ হতে পারে।

২. দ্রুত টাকা পাওয়ার সুবিধা: বেশিরভাগ ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান দ্রুত ঋণ অনুমোদন করে এবং শীঘ্রই অর্থ প্রদান করে থাকে। এই সুবিধা জরুরি পরিস্থিতিতে বিশেষভাবে কার্যকরী।

৩. নির্দিষ্ট কিস্তিতে পরিশোধ: ব্যক্তিগত ঋণ সাধারণত নির্দিষ্ট কিস্তিতে পরিশোধ করতে হয়, যা আর্থিক পরিকল্পনা সহজ করে দেয় এবং ঋণগ্রহীতা জানেন কিভাবে তাদের মাসিক অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

৪. কোনো জামানত ছাড়াই ঋণ: ব্যক্তিগত ঋণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এটি জামানত ছাড়া পাওয়া যায়। ফলে ঋণগ্রহীতার আর্থিক ঝুঁকি কম থাকে।

৫. ব্যবহারের নমনীয়তা: এই ঋণের টাকা ঋণগ্রহীতা তাদের প্রয়োজন মতো ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া তারা যে কোনো জরুরি খরচ মেটানোর জন্য এটি ব্যবহার করতে পারেন।

৬. ঋণ একত্রিতকরণ: যদি ঋণগ্রহীতার একাধিক ঋণ থাকে, তবে সেগুলিকে একত্রিত করে একটি ব্যক্তিগত ঋণে পরিণত করা যায়। এতে সুদ কমে যায় এবং ঋণ পরিশোধ সহজ হয়।

মধ্যবিত্তদের জন্য ব্যক্তিগত ঋণের প্রয়োজনীয়তা
১. অপ্রত্যাশিত খরচের মোকাবিলা: অনেক সময় হঠাৎ করে চিকিৎসা খরচ, দুর্ঘটনা বা চাকরি হারানোর মতো সমস্যা সামনে আসে। এমন পরিস্থিতিতে, ব্যক্তিগত ঋণ খুব দ্রুত আর্থিক সহায়তা দেয়।

২. শিক্ষার খরচ: উচ্চ শিক্ষা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গিয়ে অনেক সময় যথেষ্ট অর্থের অভাব দেখা দেয়। ব্যক্তিগত ঋণ ছাত্রদের সহায়তা করতে পারে যাতে তারা সঠিক সময়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন।

Advertisements

৩. বিয়ের খরচ: ভারতের বিয়ের খরচ দ্রুত বাড়ে। বিয়ের আয়োজন, ভেন্যু বুকিং, খাওয়া-দাওয়া, পোশাক ইত্যাদির জন্য অর্থের প্রয়োজন হয়। ব্যক্তিগত ঋণ এই খরচ মেটাতে সাহায্য করতে পারে, যা বাকি সঞ্চয় খরচ না করে সহজেই নেওয়া যায়।

ব্যক্তিগত ঋণের অসুবিধা
১. উচ্চ সুদের হার: যেহেতু এটি জামানত ছাড়া ঋণ, তাই ঋণদাতারা সাধারণত উচ্চ সুদের হার আরোপ করেন। বিশেষ করে, যাদের ক্রেডিট স্কোর ভালো নয়, তাদের জন্য সুদ অনেক বেশি হতে পারে।

২. গোপন ফি: ঋণদাতারা কখনও কখনও প্রক্রিয়া ফি (Processing Fee) এবং অন্যান্য অপ্রত্যাশিত ফি আরোপ করে। এই অতিরিক্ত খরচগুলি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেয়।

৩. যোগ্যতা: ঋণ পাওয়ার জন্য ঋণগ্রহীতার ভালো ক্রেডিট স্কোর এবং নির্দিষ্ট আয়ের প্রমাণ থাকতে হয়। এই কারণে অনেকেই ঋণ পাওয়ার সুযোগ পান না।

৪. কঠোর পরিশোধ শর্ত: যদি কোনো কারণে ঋণগ্রহীতা কিস্তি পরিশোধে দেরি করেন, তবে অতিরিক্ত জরিমানা বা দণ্ড আরোপ হতে পারে। এর ফলে ঋণগ্রহীতার আর্থিক চাপ আরও বৃদ্ধি পায়।

মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য ব্যক্তিগত ঋণ একটি কার্যকর ঋণ ব্যবস্থা হতে পারে, বিশেষ করে জরুরি খরচ, ঋণ একত্রিতকরণ বা বিয়ের খরচের মতো ক্ষেত্রে। তবে, এটি গ্রহণের আগে ঋণগ্রহীতার উচিত ঋণের শর্তাবলী ভালোভাবে বোঝা, তাদের পরিশোধক্ষমতা বিশ্লেষণ করা এবং সব ধরনের গোপন খরচ এবং সুদের হার সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। একমাত্র দায়িত্বশীলভাবে ঋণ গ্রহণ করলে এটি তাদের আর্থিক পরিস্থিতি সহজ করতে সহায়ক হবে।