পার্সোনাল লোন একটি জনপ্রিয় ঋণ পদ্ধতি যা খুব সহজে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ তৈরি করে দেয়৷ বিশেষত আর্থিক সংকট বা আচমকা জরুরি পরিস্থিতির মধ্যে ব্যক্তিগত ঋণ ত্রাতা হয়ে ওঠে। এই ধরনের ঋণের আবেদন প্রক্রিয়া সাধারণ এবং দ্রুত, পাশাপাশি এর ঋণ পরিশোধের শর্তও বেশ সহজ। যেহেতু পার্সোনাল লোন সাধারণত সিকিউরড নয়, অর্থাৎ জামানত ছাড়াই ঋণ প্রদান করা হয়, তাই ব্যাংক বা ঋণদাতারা মূলত ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট স্কোর এবং আয়ের ওপর ভিত্তি করে ঋণ অনুমোদন করে। (personal loans for low income earners)
তবে, যদি আপনার বেতন কম হয়, তবে পার্সোনাল লোনের জন্য আবেদন করলে কিছু সমস্যা আসতে পারে। কিন্তু, নো টেনশন৷ কারণ এমন অনেক ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা কম বেতনভোগীদের জন্যও পার্সোনাল লোন প্রদান করে থাকে। আসুন, এমন কিছু শীর্ষ ব্যাঙ্ক এবং তাদের ঋণের শর্তাবলি সম্পর্কে জেনে নিই৷
নিম্ন বেতনভোগী ব্যক্তিদের জন্য পার্সোনাল লোন প্রদানকারী ব্যাঙ্কের মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের কথা৷ এই ব্যাঙ্কে ন্যূনতম ৩০,০০০ টাকা বেতন হলেই পার্সোনাল লোন মেলে৷ এইচডিএফসি থেকে লোন নিতে হলে প্রয়োজন মাসিক ২৫,০০০ টাকার সেলারি৷ কোটক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক এবং ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্কও ২৫,০০০ টাকা উপার্জন থাকলেই পার্সোনাল লোন দেয়৷
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া মাসিক ১৫,০০০ টাকা উপার্জন থাকলেই পার্সোনাল লোন মঞ্জুর করে৷ অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কেও রয়েছে এই সুযোগ৷
ব্যাংকগুলির ঋণ শর্তাবলী
১. আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক
সুদহার: ১০.৮৫% এর থেকে
সর্বোচ্চ ঋণ পরিমাণ: ৫০ লাখ পর্যন্ত
ঋণ মেয়াদ: ৬ বছর
২. HDFC ব্যাঙ্ক
সুদহার: ১০.৮৫% এর থেকে
সর্বোচ্চ ঋণ পরিমাণ: ৪০ লাখ পর্যন্ত
ঋণ মেয়াদ: ৬ বছর
৩. কোটক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক
সুদহার: ১০.৯৯% এর থেকে
সর্বোচ্চ ঋণ পরিমাণ: ৪০ লাখ পর্যন্ত
ঋণ মেয়াদ: ৬ বছর
৪. ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক
সুদহার: ১০.৪৯% এর থেকে
সর্বোচ্চ ঋণ পরিমাণ: ₹৫০ লাখ পর্যন্ত
ঋণ মেয়াদ: ৬ বছর পর্যন্ত
. স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া
সুদহার: ১১.৪৫% এর থেকে
সর্বোচ্চ ঋণ পরিমাণ: ৩০ লাখ পর্যন্ত
ঋণ মেয়াদ: ৬ বছর পর্যন্ত
৬. অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক
সুদহার: ১১.২৫% এর থেকে
সর্বোচ্চ ঋণ পরিমাণ: ₹১০ লাখ পর্যন্ত
ঋণ মেয়াদ: ৫ বছর পর্যন্ত
কম বেতনের ব্যক্তিদের জন্য পার্সোনাল লোনের যোগ্যতা
পার্সোনাল লোনের জন্য সাধারণত আবেদনকারীর বেতনভোগী অথবা স্বনিযুক্ত হতে হবে। ঋণদাতারা সাধারণত ঋণগ্রহীতার চাকরি স্থিতিশীলতা এবং আয়ের ভিত্তিতে তার ঋণগ্রহণযোগ্যতা মূল্যায়ন করে। নিম্ন আয়ের ব্যক্তিদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকতে পারে, যেমন-
*ঋণ অনুমোদনের জন্য আবেদনকারীকে একই প্রতিষ্ঠানে অন্তত ৬ মাস থেকে ১ বছর কাজ করা থাকতে হয়।
*সাধারণত ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলি ৬৫০ বা তার বেশি ক্রেডিট স্কোর থাকা ব্যক্তিদের ঋণ প্রদান করে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে কম ক্রেডিট স্কোর থাকা সত্ত্বেও ঋণ দেওয়া হতে পারে, তবে সুদের হার অনেক বেশি হতে পারে।
*বয়স সীমা: অধিকাংশ ঋণদাতা ২১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ব্যক্তিদের ঋণ দেওয়ার জন্য যোগ্য মনে করে।
কম আয়ের ব্যক্তিদের জন্য ঋণ অনুমোদন পাওয়ার কৌশল
১. ভাল ক্রেডিট স্কোর বজায় রাখা
একটি ভাল ক্রেডিট স্কোর ঋণ অনুমোদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি ঋণগ্রহীতার ঋণ গ্রহণের সক্ষমতা এবং কম সুদে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়। তাই, ক্রেডিট স্কোর নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং উন্নত করা প্রয়োজন।
২. সহ-আবেদনকারী সঙ্গে আবেদন করা
যদি আপনার ঋণ অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা কম হয়, তবে আপনি সহ-আবেদনকারী (যেমন পরিবারের সদস্য) সঙ্গে আবেদন করতে পারেন। সহ-আবেদনকারী যদি উচ্চ আয়ের হন বা তাদের ক্রেডিট স্কোর ভালো হয়, তবে ঋণ অনুমোদনের সম্ভাবনা বাড়ে।
৩. লম্বা ঋণ মেয়াদ বেছে নিন
যদি ঋণের মেয়াদ দীর্ঘ হয়, তবে EMI কম হবে এবং ঋণ অনুমোদনের সম্ভাবনা বাড়বে। তবে, দীর্ঘ মেয়াদে মোট সুদের পরিমাণ বাড়তে পারে, তাই এই বিষয়ে সাবধানে সিদ্ধান্ত নিন।
৪. অতিরিক্ত আয়ের প্রমাণ প্রদান করুন
আপনার যদি অন্য কোন আয় উৎস থাকে, যেমন ভাড়া, মিউচুয়াল ফান্ড বা শেয়ার থেকে আয়, তবে তা ঋণদাতাকে জানানো যেতে পারে। এতে ঋণগ্রহীতার আয় বাড়বে এবং ঋণ অনুমোদনের সম্ভাবনা বাড়বে।
যদি আপনার বেতন কম হয়, তবে প্রথমে আপনাকে মূল্যায়ন করতে হবে যে আপনি সত্যিই পার্সোনাল লোনের প্রয়োজন অনুভব করছেন কিনা। মনে রাখতে হবে, পার্সোনাল লোনের সুদ হার সাধারণত অন্যান্য ঋণের তুলনায় বেশি থাকে। অতএব, যদি আপনি জরুরি তহবিলের প্রয়োজন অনুভব করেন, তবে অন্যান্য ঋণ বিকল্পগুলিও বিবেচনা করা উচিত। সর্বোপরি, আপনার আর্থিক অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ আয়ের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখে ঋণ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
এভাবে, কম বেতনের ব্যক্তিরাও সঠিক পরিকল্পনা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে পার্সোনাল লোন পেতে পারেন, তবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি ঋণ গ্রহণের আগে পুরো পরিস্থিতি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করুন।