জরুরি টাকার দরকার? পার্সোনাল লোন নেওয়ার আগে এই ৭টি বিষয় জেনে নিন

আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল জীবনে আর্থিক চাহিদা হঠাৎ করেই সামনে চলে আসে — এবং সেটা প্রায়শই সবচেয়ে অস্বস্তিকর সময়ে। হঠাৎ হাসপাতাল খরচ, বিয়ের খরচ, বা বাড়ির…

School Admissions 2025 Rising Costs Drive Surge in Personal Loans

আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল জীবনে আর্থিক চাহিদা হঠাৎ করেই সামনে চলে আসে — এবং সেটা প্রায়শই সবচেয়ে অস্বস্তিকর সময়ে। হঠাৎ হাসপাতাল খরচ, বিয়ের খরচ, বা বাড়ির মেরামতের মতো পরিস্থিতিতে অনেকেই ব্যক্তিগত ঋণের (Personal Loans ) দিকে ঝোঁকেন, কারণ তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার অন্যতম সহজ উপায় এটি।

ব্যক্তিগত ঋণ কী?
ব্যক্তিগত ঋণ মূলত একটি অসুরক্ষিত ঋণ, অর্থাৎ এই ঋণ নেওয়ার জন্য বাড়ি, গাড়ি বা সোনার মতো কোনো সম্পত্তি জামানত রাখার প্রয়োজন হয় না। ঋণের পুরো অর্থ একসঙ্গে প্রদান করা হয় এবং নির্ধারিত সময়ে মাসিক কিস্তির (EMI) মাধ্যমে তা শোধ করতে হয়। সাধারণত এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এই ঋণ পরিশোধ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।

   

ব্যক্তিগত ঋণের সবচেয়ে বড় সুবিধা এর ব্যবহারিক স্বাধীনতা। গৃহঋণ বা গাড়ির ঋণের মতো নির্দিষ্ট খাতে খরচের বাধ্যবাধকতা নেই। শিক্ষা, ভ্রমণ, চিকিৎসা খরচ বা উচ্চ সুদের ঋণ একত্রিত করার মতো নানা কাজে এই অর্থ ব্যবহার করা যায়।

কেন বেছে নেবেন ব্যক্তিগত ঋণ?
যখন হঠাৎ কোনো আর্থিক প্রয়োজন দেখা দেয় এবং হাতে তেমন সঞ্চয় থাকে না, তখন ব্যক্তিগত ঋণ অনেকের কাছেই ভরসার জায়গা হয়ে দাঁড়ায়। জরুরি সময়ে যেমন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া বা বাসার জরুরি সংস্কার দরকার, তখন সময়ের গুরুত্ব অনেক বেশি, এবং এমন সময়ে এই ঋণ হতে পারে কার্যকর সমাধান।
যেহেতু এটি অসুরক্ষিত ঋণ, তাই যাঁদের কাছে উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পদ নেই, তাঁরাও এটি পাওয়ার সুযোগ পান। তাছাড়া নির্দিষ্ট মাসিক কিস্তি থাকায় বাজেট নিয়ন্ত্রণ করাও তুলনামূলকভাবে সহজ হয়।

ব্যক্তিগত ঋণের সুবিধা:
১. জামানতের প্রয়োজন নেই – যাঁদের কাছে বাড়ি, জমি বা গহনা নেই, তাঁরাও সহজে ঋণ পেতে পারেন।
২. দ্রুত প্রক্রিয়া – অনলাইন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ফিনটেক সংস্থাগুলোর কারণে এখন অনেক ক্ষেত্রেই ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণ করা সম্ভব।
৩. ব্যবহারের স্বাধীনতা – এই অর্থ আপনি নিজের প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করতে পারেন; এর জন্য নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য দেখাতে হয় না।
৪. বাজেট পরিকল্পনায় সহায়ক – নির্ধারিত মাসিক কিস্তি থাকার কারণে আগাম হিসেব করে খরচ করা সম্ভব হয়।
৫. ক্রেডিট স্কোর বাড়াতে সহায়তা করে – যদি সময়মতো কিস্তি প্রদান করা যায়, তবে এটি ভবিষ্যতের ঋণ গ্রহণের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
ব্যক্তিগত ঋণের অসুবিধা:

Advertisements

তবে সুবিধার পাশাপাশি কিছু ঝুঁকিও আছে—
১. উচ্চ সুদের হার – যাঁদের ক্রেডিট স্কোর দুর্বল, তাঁদের জন্য সুদের হার ২০% এর ওপরে গিয়েও পৌঁছাতে পারে।
২. প্রসেসিং ফি ও জরিমানা – ঋণ নেওয়ার সময় প্রক্রিয়াকরণ খরচ থাকে। যদি সময়মতো কিস্তি না দেওয়া যায়, তাহলে জরিমানাও দিতে হয়।
৩. পূর্ব-পরিশোধ ফি – অনেক ক্ষেত্রেই ঋণ আগেই মিটিয়ে ফেলতে চাইলে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হয়।
৪. ঋণফাঁদে পড়ার সম্ভাবনা – বারবার ঋণ নেওয়া ও সঠিক সময়ে পরিশোধে ব্যর্থ হলে, তা আর্থিক অব্যবস্থার দিকে ঠেলে দেয়।

সচেতন থাকাই সেরা পথ:
ব্যক্তিগত ঋণ আর্থিক সহায়তার একটি উপযুক্ত উপায় হলেও, এটি কখনোই “ফ্রি মানি” নয়। এটি একটি দায় — এবং তা গ্রহণ করার আগে অবশ্যই পরিষ্কার পরিকল্পনা থাকা দরকার।
ঋণ নেওয়ার আগে নিচের বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত:
আপনি কত টাকা ঋণ নিতে চান এবং কেন?
আপনি সেই ঋণের মাসিক কিস্তি দিতে পারবেন কিনা?

সুদের হার কত?
প্রসেসিং ফি, জরিমানা ও অন্যান্য চার্জ কী কী আছে?
ঋণের শর্তাবলি ঠিকমতো পড়ে বুঝেছেন তো?

এইসব বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে, একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের শর্তাবলি তুলনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
জরুরি প্রয়োজনে ব্যক্তিগত ঋণ হতে পারে নিঃসন্দেহে একটি কার্যকর আর্থিক সমাধান। তবে তা কখনোই হঠকারী সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত নয়। দায়িত্বশীল ঋণগ্রহণকারী হিসেবে আপনার কর্তব্য, সব তথ্য জেনে-বুঝে, হিসেব করে, ঋণ নেওয়া এবং নিয়মিত কিস্তি দিয়ে ঋণমুক্ত হওয়া। তাহলেই এই ঋণ আপনার জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, পিছনে নয়।