মুম্বই: বর্তমান সময়ে ব্যক্তিগত লোন (Personal Loan) অনেক মানুষের কাছে হঠাৎ আর্থিক সমস্যার সমাধান হিসেবে কাজ করছে। বাড়ির সংস্কার, উৎসবের বাড়তি খরচ, শিক্ষার ব্যয় কিংবা হঠাৎ জরুরি চিকিৎসা—এই সব ক্ষেত্রে দ্রুত টাকা পাওয়ার সহজ উপায় হল ব্যক্তিগত ঋণ। সহজ ডকুমেন্টেশন, অনলাইনে আবেদন ও দ্রুত টাকা পাওয়ার সুবিধার কারণে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, অনেক আবেদনকারী বারবার ব্যক্তিগত লোনের জন্য আবেদন করলেও তা বাতিল হচ্ছে। কেন এমন হচ্ছে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু সাধারণ কারণে আবেদন নাকচ হচ্ছে, যা এড়ানো সম্ভব।
১. ক্রেডিট স্কোর ও আয়ের ঘাটতি
ব্যক্তিগত লোন অনুমোদনের ক্ষেত্রে ক্রেডিট স্কোর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত ৭৫০ বা তার বেশি ক্রেডিট স্কোর আদর্শ ধরা হয়। যদি স্কোর কম থাকে, ঋণদাতা সংস্থা মনে করে আপনি সময়মতো টাকা শোধ করতে পারবেন না।
এছাড়া, ব্যাংক বা NBFC-র একটি নির্দিষ্ট ন্যূনতম আয়ের মানদণ্ড থাকে। যেমন অনেক ক্ষেত্রে মাসিক আয় ২৫,০০০ বা ৩০,০০০ টাকার নিচে হলে আবেদন বাতিল হতে পারে।
২. চাকরির অস্থিরতা ও অতিরিক্ত ঋণ
প্রায়ই চাকরি পরিবর্তন করলে বা দীর্ঘদিন একই জায়গায় কাজ না করলে ঋণদাতারা মনে করেন আপনি স্থিতিশীল নন। এর ফলে ঋণ অনুমোদন কঠিন হয়ে পড়ে।
একইভাবে, যদি আপনার আগে থেকেই অনেক ঋণ থাকে বা একাধিক ক্রেডিট কার্ডের দেনা শোধ করতে বাকি থাকে, তাহলে ডেট-টু-ইনকাম রেশিও (DTI) বেড়ে যায়। ঋণদাতারা তখন মনে করেন আপনার উপর ঋণের চাপ বেশি, ফলে নতুন ঋণ অনুমোদনে দ্বিধা করে।
৩. ভুল ডকুমেন্টেশন ও একাধিক আবেদন
ব্যক্তিগত লোনের জন্য আবেদন করার সময় নথি সঠিকভাবে জমা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নামের বানানে ভুল, PAN বা আধার নম্বরে গরমিল, আয় প্রমাণপত্রে অসঙ্গতি থাকলে আবেদন সরাসরি বাতিল হয়।
তাছাড়া, স্বল্প সময়ে একাধিক ব্যাংক বা NBFC-তে আবেদন করলে আপনার ক্রেডিট রিপোর্টে একাধিক হার্ড ইনকোয়ারি দেখা যায়। এটি ঋণদাতাদের কাছে নেতিবাচক ইঙ্গিত দেয় এবং অনুমোদনের সম্ভাবনা কমে যায়।
৪. বয়স ও যোগ্যতার সীমাবদ্ধতা
ব্যক্তিগত লোনের জন্য আবেদনকারীর বয়স একটি বড় মানদণ্ড। সাধারণত ২১ থেকে ৬০ বা ৬৫ বছরের মধ্যে হলে ঋণ অনুমোদন মেলে। এর বাইরে হলে আবেদন বাতিল হয়। একইভাবে, আবেদনকারীর নাগরিকত্ব সম্পর্কিত শর্তও অনেক সময় প্রযোজ্য হয়।
৫. সীমিত বা দুর্বল ক্রেডিট ইতিহাস
যাদের ক্রেডিট হিস্ট্রি একেবারেই কম বা নেই, তাদের ক্ষেত্রে ঋণদাতারা ঝুঁকি নিতে চান না। আবার অনেকে সময়মতো আগের ঋণ শোধ না করলে ক্রেডিট রিপোর্ট খারাপ হয়। এই দুই অবস্থাতেই ঋণ বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
কী করবেন?
- ক্রেডিট স্কোর ৭৫০-এর ওপরে রাখার চেষ্টা করুন।
- আয়ের উৎস নিয়মিত রাখুন।
- একসঙ্গে অতিরিক্ত ঋণ নেবেন না।
- নথি জমা দেওয়ার সময় তথ্য সঠিকভাবে দিন।
- একাধিক জায়গায় একসঙ্গে আবেদন করবেন না।
ব্যক্তিগত লোন পেতে হলে শুধু জরুরি প্রয়োজন নয়, সঠিক পরিকল্পনা ও প্রস্তুতিও জরুরি। ভালো ক্রেডিট স্কোর, স্থিতিশীল চাকরি এবং আয়ের ধারাবাহিকতা থাকলে ঋণ অনুমোদনের সম্ভাবনা বাড়ে। তবে মনে রাখতে হবে, অযথা ঋণ নিলে তার বোঝা, ক্রেডিট স্কোরে ক্ষতি, এমনকি আইনি সমস্যাও তৈরি হতে পারে। তাই আবেদন করার আগে সব শর্ত ভালোভাবে যাচাই করা বুদ্ধিমানের কাজ৷