বিয়ে, বাড়ি মেরামত, কিংবা নতুন মোবাইল কেনা—এমন বড় কোনও খরচের পরিকল্পনা করলে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন দাঁড়ায়, অর্থের ব্যবস্থা কীভাবে হবে? হাতে যদি সীমিত টাকা থাকে, তখন অনেকে দ্বিধায় পড়েন—ব্যক্তিগত ঋণ (Personal Loan) নেবেন, না কি ক্রেডিট কার্ড EMI-তে খরচ মেটাবেন? উভয় বিকল্পই সুবিধাজনক মনে হলেও, প্রকৃত পার্থক্য লুকিয়ে আছে তাদের সুদহার ও মোট খরচে।
পার্সোনাল লোন কেন তুলনামূলকভাবে সস্তা?
পার্সোনাল লোন সাধারণত ক্রেডিট কার্ড EMI-এর তুলনায় কম সুদের হারে পাওয়া যায়। বর্তমানে পার্সোনাল লোনের বার্ষিক সুদের হার গড়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশের মধ্যে থাকে। অন্যদিকে, ক্রেডিট কার্ড EMI-র সুদের হার ১৮ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। পার্সোনাল লোনে সুদ স্থির থাকে, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সমান EMI দিতে হয় এবং পুরো পরিশোধের পরিমাণ আগে থেকেই হিসাব করা সহজ হয়। বিশেষ করে দীর্ঘমেয়াদি খরচ—যেমন ২ থেকে ৫ বছরের পরিশোধকাল—এর ক্ষেত্রে পার্সোনাল লোন অধিক সাশ্রয়ী বিকল্প হিসেবে ধরা হয়।
কখন ক্রেডিট কার্ড EMI ভালো বিকল্প?
তবে সব পরিস্থিতিতে পার্সোনাল লোনই সর্বোত্তম নয়। ছোটখাটো খরচ—যেমন ২০–৩০ হাজার টাকার কেনাকাটা—যদি কয়েক মাসের মধ্যে পরিশোধ করা সম্ভব হয়, তাহলে ক্রেডিট কার্ড EMI কার্যকর হতে পারে। অনেক ব্যাংক বা সংস্থা বিশেষ অফারের মাধ্যমে কম সুদের বা “জিরো কস্ট” EMI দেয়, যা স্বল্প মেয়াদে লাভজনক হতে পারে। তবে এখানে সতর্কতা জরুরি—প্রসেসিং ফি, GST, ও লেট ফি যোগ হলে মোট খরচ বেড়ে যেতে পারে।
সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যা যাচাই করা জরুরি:
কেবল সুদের হার নয়, ঋণ নেওয়ার আগে মোট খরচ হিসাব করা উচিত—এর মধ্যে প্রসেসিং ফি, ইনস্যুরেন্স, প্রিপেমেন্ট চার্জ এবং অন্যান্য লুকানো খরচ অন্তর্ভুক্ত। ক্রেডিট কার্ড EMI বেছে নিলে সেই পরিমাণ টাকা কার্ডের ক্রেডিট লিমিটে লক হয়ে যায়, ফলে ভবিষ্যতে কার্ড ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আসে এবং ক্রেডিট স্কোরের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
যদি বড় অঙ্কের ঋণ বা দীর্ঘ সময়ের পরিশোধের পরিকল্পনা থাকে, তাহলে পার্সোনাল লোনই বেশি সাশ্রয়ী ও নিরাপদ বিকল্প। আর যদি অল্প টাকার খরচ হয়, যা কয়েক মাসেই পরিশোধ করা সম্ভব, তাহলে ক্রেডিট কার্ড EMI নেওয়া যেতে পারে—তবে শর্ত, সময়মতো পরিশোধ করতেই হবে।
অর্থাৎ, সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে নিজের পরিশোধ ক্ষমতা, মেয়াদ ও মোট খরচের হিসাব মিলিয়ে দেখাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।


