Personal Loan Interest Rates Compared: রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই) চলতি বছরের ৯ এপ্রিল রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৬.২৫ শতাংশ করেছে। অর্থাৎ, ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যেই হারে ঋণ নেয়, সেই হার সামান্য কমেছে। এই ধরনের হার কমানোর ফলে সাধারণত ব্যাংকগুলোর ঋণগ্রহণের খরচ হ্রাস পায় এবং তারা সেই সুবিধা গ্রাহকদের কাছেও পৌঁছে দেয়—বিশেষত হোম লোন ও অন্যান্য ভাসমান সুদের হারে (ফ্লোটিং রেট) ঋণের ক্ষেত্রে।
তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই রেপো রেট হ্রাসের তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব ব্যক্তিগত ঋণের ওপর এখনও পর্যন্ত পড়েনি। অধিকাংশ ব্যক্তিগত ঋণই স্থায়ী বা নির্দিষ্ট সুদের হারে (ফিক্সড রেট) দেওয়া হয়। এর ফলে স্বল্পমেয়াদী নীতিগত পরিবর্তনের প্রতিফলন এসব ঋণে ধীরে পড়ে। ফলে যাঁরা বর্তমানে ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়ার কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য পরিস্থিতি খুব একটা সুবিধাজনক নয়।
বিভিন্ন ব্যাংকের সুদের হারের তুলনামূলক চিত্র
ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়ার আগে সুদের হার এবং প্রসেসিং ফি-র দিকগুলি ভালভাবে যাচাই করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ, এই হারগুলি গ্রাহকের ক্রেডিট স্কোর, মাসিক আয়, ঋণের পরিমাণ এবং মেয়াদের ওপর নির্ভর করে ব্যাংকভেদে পরিবর্তিত হয়।
নিচে কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকের ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার ও ফি-র বিস্তারিত তুলনা দেওয়া হলো:
বেসরকারি খাত
- এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক: এই ব্যাংক ব্যক্তিগত ঋণ দেয় বার্ষিক ১০.৯০ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশ হারে, যা মূলত আবেদনকারীর ক্রেডিট প্রোফাইলের ওপর নির্ভর করে। প্রসেসিং ফি হিসেবে ধার্য করা হয় স্থির ৬,৫০০ টাকা + জিএসটি।
- আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক: ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার শুরু হয় ১০.৮৫ শতাংশ থেকে এবং তা সর্বোচ্চ ১৬.৬৫ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে। প্রসেসিং ফি হিসেবে ধার্য হয় ঋণের মোট টাকার ২ শতাংশ + ট্যাক্স।
- কোটাক মহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক: সুদের হার ১০.৯৯ শতাংশ থেকে শুরু করে ১৬.৯৯ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছতে পারে। প্রসেসিং ফি সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে অনুমোদিত ঋণের টাকার ওপর।
- ফেডারেল ব্যাঙ্ক: যদিও এটি বেসরকারি খাতের ব্যাঙ্ক, ফেডারেল ব্যাঙ্ক তুলনামূলকভাবে কম হারে ঋণ দেয় — ১১.৪৯ শতাংশ থেকে ১৪.৪৯ শতাংশ পর্যন্ত।
সরকারি খাত
- স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI): দেশের বৃহত্তম ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে এসবিআই ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার নির্ধারণ করেছে ১০.৩০ শতাংশ থেকে ১৫.৩০ শতাংশ পর্যন্ত।
- ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া: এখানে ঋণের সুদের হার ১১.২৫ শতাংশ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১৪.৯৫ শতাংশ পর্যন্ত যায়।
ঋণ নেওয়ার আগে সতর্কতা জরুরি
বিশেষজ্ঞদের মতে, রেপো রেট কমানোর ফলে হোম লোন বা শিক্ষাঋণের মতো ভাসমান সুদের হারের ঋণে কিছুটা তাৎক্ষণিক প্রভাব পড়ে ঠিকই, কিন্তু ব্যক্তিগত ঋণের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা অনেকটা দেরিতে আসে। কারণ অধিকাংশ ব্যক্তিগত ঋণ স্থির সুদের হারে নির্ধারিত হয়, ফলে মুদ্রানীতি শিথিল হলেও তাতে সরাসরি উপকার মেলে না।
ব্যক্তিগত ঋণগ্রহীতাদের উচিত ঋণ নেওয়ার আগে নিম্নলিখিত বিষয়গুলিতে মনোযোগ দেওয়া:
- সুদের হার: যতটা সম্ভব কম সুদের হার খোঁজার চেষ্টা করা উচিত।
- প্রসেসিং ফি ও অন্যান্য চার্জ: অনেক সময় কম সুদের হার দিলেও ব্যাংকগুলি উচ্চ প্রসেসিং ফি নেয়।
- ক্রেডিট স্কোর: উচ্চ ক্রেডিট স্কোর থাকলে কম সুদের হারে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- ঋণের মেয়াদ ও ইএমআই: কিস্তি কতটা নিয়মিত পরিশোধ করা যাবে, তা মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়ার আগে বাজার বিশ্লেষণ করে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। প্রতিটি ব্যাংকের শর্ত, সুদের হার, এবং চার্জিং পদ্ধতি একে অপরের থেকে আলাদা। এক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতাদের উচিত নির্দিষ্ট তথ্য যাচাই করে এবং নিজের আর্থিক সামর্থ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া। কারণ একটি ভুল সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতের আর্থিক ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।