গিগ কর্মীদের জন্য পার্সোনাল লোন পাওয়ার সহজ উপায়

Personal Loan for Gig Workers in India: ভারতে ফ্রিল্যান্সিং এবং গিগ ওয়ার্কের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। অনেক পেশাদার এখন আর ঐতিহ্যবাহী নিয়মিত বেতনের চাকরির দিকে…

Personal Loan for Gig Workers in India

Personal Loan for Gig Workers in India: ভারতে ফ্রিল্যান্সিং এবং গিগ ওয়ার্কের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। অনেক পেশাদার এখন আর ঐতিহ্যবাহী নিয়মিত বেতনের চাকরির দিকে ঝুঁকছেন না। গিগ ওয়ার্ক বলতে বোঝায় স্বল্পমেয়াদি, নমনীয় কাজ, যেখানে ব্যক্তিদের প্রকল্প বা কাজের ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়, পূর্ণকালীন চাকরির পরিবর্তে। এর মধ্যে রয়েছে ফ্রিল্যান্স লেখালেখি, রাইড-শেয়ারিং, ফুড ডেলিভারি, গ্রাফিক ডিজাইন এবং অনলাইন টিউশনের মতো কাজ।

Advertisements

এই পরিবর্তন স্বাধীনতা এবং নমনীয়তা প্রদান করলেও, এর সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল ব্যক্তিগত ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা। ব্যাঙ্কগুলি সবসময় স্থিতিশীল আয়ের ব্যক্তিদের ঋণ দিতে পছন্দ করে যাতে সময়মতো ঋণ পরিশোধ নিশ্চিত হয়। ফ্রিল্যান্সার এবং গিগ ওয়ার্কারদের আয় স্থির নয়, তাই তাদের জন্য ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তবে, এই প্রক্রিয়া কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।

   

গিগ ওয়ার্কার এবং ফ্রিল্যান্সাররা কি ভারতে ব্যক্তিগত ঋণ পেতে পারেন?

হ্যাঁ, ভারতে ফ্রিল্যান্সার এবং গিগ ওয়ার্কাররা ব্যক্তিগত ঋণ পেতে পারেন, তবে এই প্রক্রিয়া নিয়মিত চাকরিজীবীদের থেকে আলাদা। গৃহ বা গাড়ির ঋণের বিপরীতে, ব্যক্তিগত ঋণ অনুমোদনের জন্য আয়ের স্থিতিশীলতা এবং ঋণযোগ্যতা গুরুত্বপূর্ণ। চাকরিজীবীদের সুবিধা হল তাদের স্থির আয় এবং ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্টের মাধ্যমে মাসিক আয়ের প্রমাণ। কিন্তু ফ্রিল্যান্সার এবং গিগ ওয়ার্কারদের আয় ওঠানামা করে, যা ব্যাঙ্কের জন্য তাদের ঋণযোগ্যতা মূল্যায়ন করা কঠিন করে তোলে।

ঋণদাতারা তাদের আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করতে বিকল্প পদ্ধতি ব্যবহার করে, যেমন গত দুই-তিন বছরের আয়কর রিটার্ন (আইটিআর), ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট এবং ক্রেডিট স্কোর। ক্রেডিট স্কোর যত বেশি, ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি। অনেক ব্যাঙ্ক এবং নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানি (এনবিএফসি) এখন স্ব-নিযুক্ত ব্যক্তি এবং ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ব্যক্তিগত ঋণ দিচ্ছে। কিছু ফিনটেক কোম্পানিও গিগ ওয়ার্কারদের জন্য তাদের ডিজিটাল আর্থিক তথ্যের ভিত্তিতে কাস্টমাইজড ঋণ প্রদান করছে।

মানিকন্ট্রোল সাতটি ঋণদাতার সঙ্গে অংশীদারিত্ব করে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দ্রুত, ১০০% ডিজিটাল ঋণ প্রদান করছে। তিনটি সহজ ধাপে এই ঋণ পাওয়া যায়: আপনার তথ্য দিন, কেওয়াইসি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন এবং ইএমআই মেয়াদ নির্ধারণ করুন। কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে সুদের হার বছরে ১০.৫% থেকে শুরু হতে পারে।

ফ্রিল্যান্সার এবং গিগ ওয়ার্কারদের জন্য ব্যক্তিগত ঋণের যোগ্যতা

প্রতিটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ফিনটেক কোম্পানির নিজস্ব যোগ্যতার মানদণ্ড রয়েছে। সাধারণ কিছু শর্ত নিচে দেওয়া হল:

  1. বয়স: আবেদনকারীর বয়স ২১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে।
  2. আয়: বেশিরভাগ ব্যাঙ্ক ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ন্যূনতম মাসিক আয় ২৫,০০০ থেকে ৩০,০০০ টাকা নির্ধারণ করে। এনবিএফসি এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে এই শর্ত কিছুটা শিথিল হতে পারে।
  3. আয়ের প্রমাণ: বেতনের স্লিপ না থাকায়, গত দুই-তিন বছরের আইটিআর, ছয় থেকে বারো মাসের ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট বা ডিজিটাল ইনভয়েস দিয়ে আয়ের স্থিতিশীলতা প্রমাণ করতে হয়।
  4. ক্রেডিট স্কোর: ৭০০ বা তার বেশি সিবিল স্কোর থাকলে ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। স্কোর কম হলে গ্যারান্টার বা অতিরিক্ত প্রমাণ লাগতে পারে।
  5. অভিজ্ঞতা: কিছু ঋণের জন্য কমপক্ষে দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন।
  6. ঋণ-আয় অনুপাত (ডিটিআই): পূর্বের ঋণ কম থাকলে এবং ডিটিআই কম হলে যোগ্যতা বাড়ে।

ফ্রিল্যান্সার এবং গিগ ওয়ার্কারদের জন্য সুদের হার

অনিয়মিত আয়, বেতনের স্লিপের অভাব এবং কাজের অনিশ্চয়তার কারণে ফ্রিল্যান্সার এবং গিগ ওয়ার্কারদের উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ ঋণগ্রহীতা হিসেবে দেখা হয়। তাদের ঋণযোগ্যতা যাচাইয়ে ব্যাঙ্ক ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট এবং আইটিআর পরীক্ষা করে। চাকরিজীবীদের তুলনায় তাদের জন্য সুদের হার বেশি, সাধারণত বছরে ১২% থেকে ৩০% পর্যন্ত।

ব্যাঙ্কগুলি বহু বছরের আইটিআর, ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট এবং ক্লায়েন্ট ইনভয়েসের মতো বিস্তারিত প্রমাণ চায়। এছাড়া, ফ্রিল্যান্সারদের জন্য অনুমোদিত ঋণের পরিমাণ সাধারণত একই আয়ের চাকরিজীবীদের তুলনায় কম হয়।

দ্রুত ঋণ পাওয়ার সহজ উপায়

ভারতে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে ব্যক্তিগত ঋণ পাওয়া কঠিন হলেও অসম্ভব নয়। নিচে কিছু টিপস দেওয়া হল যা আপনার ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াবে:

  1. স্থিতিশীল ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স: নিয়মিত লেনদেন এবং সঞ্চয় ব্যাঙ্কে রাখুন। এটি আপনার আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রমাণ করে।
  2. নিয়মিত আইটিআর ফাইলিং: প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন জমা দিন। এটি আয়ের ধারাবাহিকতা দেখায়।
  3. ভালো ক্রেডিট স্কোর: সময়মতো বিল পরিশোধ করে এবং ঋণ কম রেখে সিবিল স্কোর ৭০০-এর উপরে রাখুন।
  4. ডিজিটাল প্রমাণ: ক্লায়েন্ট ইনভয়েস, পেমেন্ট রেকর্ড এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের আয়ের প্রমাণ সংগ্রহ করুন।
  5. গ্যারান্টার বা সহ-আবেদনকারী: ক্রেডিট স্কোর কম হলে স্থির আয়ের কাউকে গ্যারান্টার হিসেবে যোগ করুন।
  6. ফিনটেক প্ল্যাটফর্ম: ব্যাঙ্কের পরিবর্তে ফিনটেক কোম্পানির দিকে ঝুঁকুন, যারা গিগ ওয়ার্কারদের জন্য নমনীয় ঋণ দেয়।

গিগ অর্থনীতির ভবিষ্যৎ

ভারতে গিগ অর্থনীতি ক্রমশ বাড়ছে। এই পরিবর্তনের সঙ্গে ঋণদাতারাও আরও নমনীয় হচ্ছে। সহজ ডকুমেন্টেশন এবং কাস্টমাইজড ঋণের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার এবং গিগ ওয়ার্কারদের জন্য আর্থিক সহায়তা বাড়ছে। তবে, ঋণ নেওয়ার আগে নিজের পরিশোধের ক্ষমতা বিবেচনা করা জরুরি।

গিগ ওয়ার্কারদের জন্য ব্যক্তিগত ঋণ পাওয়া একটি চ্যালেঞ্জ, কিন্তু সঠিক প্রস্তুতি এবং তথ্য দিয়ে এটি সম্ভব। স্থিতিশীল ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স, নিয়মিত আইটিআর এবং ভালো ক্রেডিট স্কোর আপনাকে দ্রুত ঋণ পেতে সাহায্য করবে। গিগ অর্থনীতির বৃদ্ধির সঙ্গে ভ্রমণ, জরুরি খরচ বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে ঋণের চাহিদাও বাড়ছে। আপনি কি গিগ ওয়ার্কার? তাহলে এই টিপসগুলো আজই কাজে লাগান এবং আর্থিক স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যান!