বর্তমান সময়ে হঠাৎ কোনো আর্থিক প্রয়োজন দেখা দিলে ব্যক্তিগত ঋণ (Personal Loan) একটি সহজলভ্য সমাধান হিসেবে উঠে এসেছে। চিকিৎসার খরচ, বিয়ের খরচ, বিদেশ ভ্রমণ, বাড়ির সংস্কার বা আগের ঋণ মিটিয়ে দিতে — নানা ব্যক্তিগত প্রয়োজনে এই ঋণ ব্যবহৃত হয়। বড় কথা হলো, এর জন্য কোনো সম্পত্তি বা সোনা বন্ধক রাখতে হয় না, অর্থাৎ এটি একটি “অসুরক্ষিত ঋণ”।
২০২৫ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ভারতের শীর্ষ ব্যাঙ্কগুলি তাদের ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার ও প্রক্রিয়ার ফি ঘোষণা করেছে। চলুন দেখে নিই, কোন ব্যাঙ্ক কত সুদ নিচ্ছে এবং
কোন শর্তে ঋণ দিচ্ছে।
শীর্ষ ব্যাঙ্কের ব্যক্তিগত ঋণের সুদের হার (জুলাই ১৩, ২০২৫ অনুযায়ী):
ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র: ৯.৫০% বার্ষিক সুদ, প্রক্রিয়ার ফি সর্বোচ্চ ১% পর্যন্ত।
HSBC ব্যাঙ্ক: ১০.১৫% থেকে ১৬.০০% পর্যন্ত বার্ষিক সুদ, প্রক্রিয়ার ফি সর্বোচ্চ ২%।
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI): ১০.৩০% থেকে ১৫.৩০% পর্যন্ত বার্ষিক সুদ, ফি সর্বোচ্চ ১.৫%।
সাউথ ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক: ১০.৫০% থেকে ২২.৩১% বার্ষিক সুদ, প্রক্রিয়ার ফি ১% (২৫ লাখের বেশি ঋণে)।
ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক: ১০.৫০% থেকে ১৩.৯০% বার্ষিক সুদ, ফি সর্বোচ্চ ০.৫০%।
ICICI ব্যাঙ্ক: ১০.৮৫% থেকে ১৬.৬৫% বার্ষিক সুদ, ফি সর্বোচ্চ ২%।
IDFC ফার্স্ট ব্যাঙ্ক: ১০.৭০% থেকে শুরু, ফি সর্বোচ্চ ২%।
ইন্ডাসইন্ড ব্যাঙ্ক: ১০.৪৯% থেকে শুরু, প্রক্রিয়ার ফি ৩.৫% পর্যন্ত।
প্রক্রিয়ার ফি সাধারণত ২% থেকে ৩.৫% পর্যন্ত হয়ে থাকে। এছাড়া, GST এবং অন্যান্য চার্জও কেটে নেওয়া হয়।
ব্যক্তিগত ঋণের সুবিধা:
ব্যক্তিগত ঋণের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এর জন্য কোনো জামানত লাগে না। অর্থাৎ বাড়ি, জমি, গয়না কিছুই বন্ধক রাখতে হয় না। এছাড়া:
খুব দ্রুত অনুমোদন ও বিতরণ।
নির্দিষ্ট EMI এবং নির্দিষ্ট মেয়াদ।
ঋণের অর্থকে যে কোনো ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায়।
অনেক ক্ষেত্রেই অনলাইনে আবেদন ও অনুমোদনের সুবিধা পাওয়া যায়।
অসুবিধা ও ঝুঁকি:
তবে এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। যেহেতু কোনো জামানত লাগে না, তাই সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। সাধারণত ব্যক্তিগত ঋণে বার্ষিক ৯.৫০% থেকে ২২% পর্যন্ত সুদ দিতে হয়। এছাড়া:
প্রক্রিয়ার ফি (১% থেকে ৫% পর্যন্ত), GST, প্রিপেমেন্ট চার্জ এবং লেট ফাইন দিতে হয়।
ঋণ মিস করলে বা সময়মতো EMI না দিলে ক্রেডিট স্কোর খারাপ হয়, যা ভবিষ্যতে অন্য কোনো ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
বেশি সুদের কারণে মাসিক EMI-এর চাপ অনেকের পক্ষে সামলানো কঠিন হয়ে যায়।
যোগ্যতা ও শর্ত:
যে কেউ ব্যক্তিগত ঋণের জন্য আবেদন করতে চাইলে তার ক্রেডিট স্কোর ৭০০-এর বেশি থাকা প্রয়োজন। এছাড়া, নিয়মিত ও স্থিতিশীল আয়, চাকরি বা ব্যবসার প্রমাণ, এবং বৈধ নথিপত্র (প্যান কার্ড, আয় প্রমাণ, ঠিকানা প্রমাণ ইত্যাদি) থাকা বাধ্যতামূলক।
কখন নেওয়া উচিত?
ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়া উচিত তখনই, যখন সত্যিই জরুরি আর্থিক প্রয়োজন থাকে এবং অন্য কোনো সস্তা বিকল্প নেই। উদাহরণস্বরূপ, হঠাৎ চিকিৎসা খরচ, জরুরি ভিত্তিতে কোনো ঋণ পরিশোধ, বা খুব প্রয়োজনীয় বাড়ির মেরামত।
তবে, মজা বা বিলাসিতার জন্য, যেমন দামি গ্যাজেট কেনা, ব্যয়বহুল হোলিডে, বা অপ্রয়োজনীয় শপিংয়ের জন্য ব্যক্তিগত ঋণ নেওয়া উচিত নয়। এতে শুধুমাত্র ঋণের বোঝা বাড়বে এবং আর্থিক ভারসাম্য নষ্ট হবে।
২০২৫ সালে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের ব্যক্তিগত ঋণ অফার নিয়ে বিস্তারিতভাবে জানার পর বোঝা যায়, সঠিক ব্যাঙ্ক বেছে নেওয়া, সুদের হার ও শর্ত ভালোভাবে যাচাই করা এবং নিজের আর্থিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঋণ নিলেও, তা যেন আপনার ভবিষ্যতের সঞ্চয় বা দৈনন্দিন জীবনের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি না করে, সেই দিকেও নজর রাখা জরুরি।
ব্যক্তিগত ঋণ হতে পারে জরুরি প্রয়োজনে একটি কার্যকরী হাতিয়ার — তবে তা হতে হবে সঠিকভাবে বাছাই করা, সঠিক সময়ে নেওয়া এবং সঠিকভাবে পরিশোধ করা। সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিলে ঋণ আপনার জীবনের সহায়ক হয়ে উঠতে পারে, বিপরীতে অযথা বা অতিরিক্ত ঋণ আপনার আর্থিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।