খরচ বাড়ছে? ৫০-৩০-২০ নিয়মে স্মার্ট বাজেটিংয়ের সহজ কৌশল জানুন

Personal Finance Tips: বর্তমান সময়ে সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা করা কঠিন হয়ে উঠছে, বিশেষত যখন আয় সীমিত এবং চাহিদা প্রচুর। টানাটানির বাজেটে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোর একটি…

personal finance tips

Personal Finance Tips: বর্তমান সময়ে সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা করা কঠিন হয়ে উঠছে, বিশেষত যখন আয় সীমিত এবং চাহিদা প্রচুর। টানাটানির বাজেটে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোর একটি হলো ব্যয়ের অগ্রাধিকার নির্ধারণ করা। এই কঠিন কাজটি সহজ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন করা জরুরি। এমনই একটি বহুল প্রচলিত অর্থব্যবস্থাপনার কৌশল হলো ৫০/৩০/২০ নিয়ম।

এই নিয়মটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে মার্কিন সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন-এর বিখ্যাত বই “All Your Worth: The Ultimate Lifetime Money Plan”-এ উল্লেখিত হওয়ার পর থেকে। বইটিতে বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে কিভাবে একজন ব্যক্তি তার পরিশোধিত কর বাদে আয়কে তিন ভাগে ভাগ করে কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে পারেন।

কী এই ৫০/৩০/২০ নিয়ম?

  • এই নিয়ম অনুযায়ী, আপনার কর পরবর্তী মোট আয়ের
  • ৫০ শতাংশ ব্যয় হবে প্রয়োজনীয় খাতে (Needs),
  • ৩০ শতাংশ ব্যয় হবে ইচ্ছাকৃত খাতে (Wants), এবং
  • ২০ শতাংশ বরাদ্দ থাকবে সঞ্চয়ের জন্য (Savings)।

এই পদ্ধতি দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তৈরি। নিয়মিত ও ধারাবাহিকভাবে এই কৌশল অনুসরণ করলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের আর্থিক বিপর্যয় থেকেও রক্ষা পাওয়া যায়।

প্রয়োজনীয় খাত (Needs): আয়ের ৫০ শতাংশ

প্রয়োজনীয় খাতে আসে সেই সব ব্যয় যেগুলো ছাড়া জীবন যাপন কল্পনা করা কঠিন। এর মধ্যে রয়েছে—ভাড়াবাড়ি, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, বাজার সদাই, চিকিৎসা খরচ ইত্যাদি। এগুলো এমন খরচ যা আপনি এড়িয়ে যেতে পারেন না এবং দৈনন্দিন জীবনের মান বজায় রাখার জন্য অপরিহার্য।

উদাহরণস্বরূপ, কারও যদি মাসিক হাতে পাওয়া আয় হয় ১ লক্ষ টাকা, তাহলে তার মধ্যে ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করা যেতে পারে এই প্রয়োজনীয় খাতে। এর চেয়ে বেশি খরচ হলে তা বাজেটকে প্রভাবিত করতে পারে এবং অন্য দুটি খাতের বরাদ্দে ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

ইচ্ছাকৃত খাত (Wants): আয়ের ৩০ শতাংশ

চাহিদা ও প্রয়োজনের পার্থক্য নির্ধারণ করা অনেক সময়েই কঠিন, বিশেষ করে কর্মজীবনের শুরুতে বা ২০-৩০ দশকে থাকা তরুণদের জন্য। কিন্তু এই নিয়ম অনুযায়ী, Wants বলতে বোঝানো হচ্ছে সেই সব ব্যয় যা ছাড়া আপনি বেঁচে থাকতে পারেন—এগুলো আপনার বিলাসিতা বা অতিরিক্ত সুবিধার জন্য।

এই খাতে যেমন পড়ে—

  • বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের পণ্য কেনা (যেখানে সাধারণ ব্র্যান্ডও চলত),
  • হোটেলে খাওয়া (যেখানে বাড়িতে রান্না করে খাওয়া যেত),
  • প্রাইভেট গাড়ি ব্যবহার (যেখানে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট যথেষ্ট হতো),
  • নতুন গ্যাজেট কেনা শুধুমাত্র ট্রেন্ড ফলো করার জন্য।

এই খাতে ব্যয় অবশ্যই ৩০ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। অন্যথায় তা আপনার সঞ্চয়কে প্রভাবিত করবে এবং আর্থিক নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।

Advertisements

সঞ্চয় (Savings): আয়ের ২০ শতাংশ

সঞ্চয় করা কেবল ভবিষ্যতের বড় স্বপ্ন পূরণ বা অবসরকালীন নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং তা জরুরি পরিস্থিতিতেও বড় সহায়ক। হঠাৎ চাকরি হারানো, অসুস্থতা, বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সঞ্চিত অর্থই হতে পারে আপনার ভরসা।

ভারতের মতো দেশে যেখানে এখনও অনেক মানুষ অর্থনৈতিকভাবে সচেতন নয়, সঞ্চয়ের গুরুত্ব বোঝানো খুব জরুরি। সঞ্চিত অর্থ আপনি বিভিন্ন বিনিয়োগ মাধ্যম যেমন—প্রভিডেন্ট ফান্ড, সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা, বা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ডও এক জনপ্রিয় ও লাভজনক পদ্ধতি হিসেবে গণ্য হচ্ছে।

কেন এই নিয়ম প্রাসঙ্গিক?

ভারতের প্রেক্ষাপটে, যেখানে আর্থিক শিক্ষা এখনও সবার মধ্যে পৌঁছায়নি, এই ৫০/৩০/২০ নিয়মটি সাধারণ মানুষের জন্য এক কার্যকরী গাইডলাইন হতে পারে। যারা মাসিক আয়ের সঠিক ব্যবস্থাপনা করতে চান কিন্তু বুঝতে পারছেন না কোথা থেকে শুরু করবেন, তাদের জন্য এটি এক চমৎকার সূচনা।

এটি শুধু ব্যক্তিগত জীবনে নয়, পরিবারিক আর্থিক পরিকল্পনার জন্যও প্রযোজ্য। অভ্যাসে পরিণত করলে ভবিষ্যতে কোনো বড় আর্থিক চাপ এলে, আপনি প্রস্তুত থাকবেন তা মোকাবিলা করার জন্য।

৫০/৩০/২০ নিয়ম শুধুমাত্র একটি সংখ্যাতত্ত্ব নয়—এটি একটি জীবনদর্শন। এই নিয়ম আমাদের শেখায় কীভাবে নিজের খরচের অগ্রাধিকার স্থির করতে হয় এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। তাই, এই নিয়মকে মেনে চলা শুধু আজকের নয়, আগামী দিনের জন্যও একটি সচেতন ও বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপ।