Patanjali Faces Government Notice: দেশের অন্যতম আলোচিত ও পরিচিত সংস্থা পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ আবারও চাপে পড়েছে। এইবার কেন্দ্রীয় সরকারের কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের তরফে সরাসরি নোটিস পাঠানো হয়েছে সংস্থাকে, সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে। সরকার দাবি করেছে, পতঞ্জলির কিছু আর্থিক লেনদেন অস্বাভাবিক এবং সন্দেহজনক বলেই প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এর ভিত্তিতেই আগামী দুই মাসের মধ্যে ওই লেনদেনগুলির সম্পূর্ণ ব্যাখ্যা ও বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে পতঞ্জলিকে।
এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই দেশের ব্যবসা জগতে শোরগোল পড়ে যায়। পতঞ্জলির শেয়ার বাজারে তীব্র ধাক্কা খায়। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেকেই তড়িঘড়ি বিনিয়োগ তুলে নিতে শুরু করেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পতঞ্জলির প্রতি মানুষের আস্থা এতদিন যে রকম ছিল, সাম্প্রতিক নানা বিতর্ক ও অভিযোগের জেরে তা অনেকটাই নষ্ট হয়েছে।
উল্লেখযোগ্যভাবে, পতঞ্জলি আয়ুর্বেদের যৌথ প্রধান বাবা রামদেব ও আচার্য বালকৃষ্ণ – দুজনেই গত কয়েক বছরে একাধিক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। বিভ্রান্তিকর বিজ্ঞাপন প্রচার থেকে শুরু করে মিথ্যে দাবি, আদালতের অবমাননা, আয়কর সংক্রান্ত অনিয়ম—সব মিলিয়ে পতঞ্জলিকে ঘিরে একাধিক প্রশ্ন উঠে এসেছে। আদালতের তরফে কড়া ভাষায় তিরস্কার তো হয়েছেই, পাশাপাশি জরিমানা ও ক্ষমা চেয়েও পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে প্রতিষ্ঠানকে।
এইবার কেন্দ্র সরকারের তরফে সরাসরি সন্দেহজনক লেনদেনের নোটিস জারি হওয়ায় সংস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত পতঞ্জলি কিংবা এর প্রধান দুই ব্যক্তিত্ব – রামদেব ও বালকৃষ্ণ, এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। সংবাদমাধ্যমের সামনে তাঁরা সম্পূর্ণ নীরবতা বজায় রেখেছেন। তাদের এই নীরবতা পরিস্থিতিকে আরও ঘোলাটে করে তুলেছে বলে মনে করছেন অনেকে।
পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ প্রতিষ্ঠার প্রথম দিন থেকে দেশীয়তা, সংস্কার ও আয়ুর্বেদের প্রচারকে সামনে রেখে একটি বিকল্প পথ দেখিয়েছিল। বিশাল বিপণন কৌশল ও ভারতীয় ভাবধারাকে ব্যবহার করে তারা বাজারে এক বিশাল অবস্থান তৈরি করেছিল। তবে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ভাবমূর্তি ধীরে ধীরে ক্ষয়ে যেতে শুরু করে। নানা বিতর্ক, অতিরঞ্জিত বিজ্ঞাপন ও প্রতিশ্রুতির বাস্তবতা না মেলায় অনেকেই পতঞ্জলির পণ্যের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন। সেইসঙ্গে কর ফাঁকি ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ পতঞ্জলির উপর আস্থা কমাতে থাকে।
বর্তমানে এই নতুন অভিযোগ পতঞ্জলির সংকটকে আরও গভীর করেছে। কেন্দ্রের নোটিসে সাফ জানানো হয়েছে, যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপযুক্ত জবাব না আসে, তাহলে তদন্ত আরও গভীরতর হবে এবং প্রয়োজনে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের তদন্ত যদি প্রমাণ সহকারে সামনে আসে, তবে শুধু পতঞ্জলি নয়, পুরো আয়ুর্বেদিক ও দেশীয় পণ্যখাতের ওপরই প্রভাব পড়তে পারে।
এই পরিস্থিতিতে পতঞ্জলির তরফে সঠিক জবাব ও স্বচ্ছ ব্যাখ্যা না এলে বাজারে তাদের অবস্থান আরও দুর্বল হবে বলেই মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। একসময় যে প্রতিষ্ঠান ‘স্বদেশি’র নাম করে কোটি কোটি মানুষের আস্থা অর্জন করেছিল, আজ তারাই যদি বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটে পড়ে, তাহলে তা শুধুমাত্র একটি সংস্থার পতন নয়, একটি ভাবনারও অবমূল্যায়ন হতে পারে।