ভারতে ব্যক্তি এবং ব্যবসায়ীদের জন্য পার্মানেন্ট অ্যাকাউন্ট নম্বর (Pan Card) কার্ড একটি অপরিহার্য নথি। কর-সংক্রান্ত কাজ থেকে শুরু করে আর্থিক লেনদেনে এই কার্ডের গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণত প্যান কার্ড (Pan Card) পেতে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লাগে। তবে, জরুরি প্রয়োজনে এই প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্যান নম্বর পাওয়া সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন অনলাইন আবেদন এবং ই-স্বাক্ষরের মাধ্যমে দ্রুত নথি যাচাই।
ভারত সরকারের অধীনস্থ প্রোটিন (পূর্বে NSDL) পরিচালিত ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই দ্রুত পরিষেবা গ্রহণ করা যায়। আবেদনকারীদের ই-কেওয়াইসি (নো ইয়োর কাস্টমার) এবং ই-স্বাক্ষরের মাধ্যমে নথি জমা দিতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় শারীরিক প্যান কার্ডের (Pan Card) জন্য অপেক্ষা না করে ই-মেইলে প্যান নম্বর পাওয়া যায়, যা ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন হয়।
অনলাইনে প্যান কার্ডের (Pan Card) জন্য কীভাবে আবেদন করবেন?
প্যান কার্ডের (Pan Card) জন্য অনলাইনে আবেদন করার ধাপগুলি:
ধাপ ১: প্রথমে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (https://www.protean-tinpan.com/services/pan/pan-index) দেখুন।
ধাপ ২: হোমপেজে স্ক্রল করে ‘নতুন প্যান কার্ডের (Pan Card) জন্য আবেদন’ বিভাগের নীচে ‘এখনই আবেদন করুন’ বোতামে ক্লিক করুন।
ধাপ ৩: আবেদনের ধরন, বিভাগ, নাম, জন্মতারিখ, ই-মেইল এবং মোবাইল নম্বরের মতো প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করুন। তারপর ‘জমা দিন’ বোতামে ক্লিক করুন।
ধাপ ৪: একটি টোকেন নম্বর পাবেন, যা দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যান।
ধাপ ৫: নথি জমার জন্য ‘ই-কেওয়াইসি এবং ই-স্বাক্ষরের মাধ্যমে ডিজিটালি জমা’ বিকল্পটি বেছে নিন। ফিজিক্যাল প্যান কার্ড চান কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে ‘না’ বলুন, কারণ তা ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় নেয়।
ধাপ ৬: ব্যক্তিগত, যোগাযোগ এবং অ্যাসেসিং অফিসার (এও) বিবরণ দিয়ে ফর্মটি পূরণ করুন।
ধাপ ৭: প্রয়োজনীয় নথি আপলোড করুন, নির্ধারিত ফি প্রদান করুন এবং ‘জমা দিন’ বোতামে ক্লিক করুন।
আবেদন জমা দেওয়ার পর একটি স্বীকৃতি নম্বর পাবেন, যা দিয়ে আবেদনের অগ্রগতি ট্র্যাক করা যাবে। নথি যাচাই হয়ে গেলে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আপনার নথিভুক্ত ই-মেইল ঠিকানায় প্যান নম্বর পাঠানো হবে।
প্রয়োজনীয় নথি:
দ্রুত প্যান কার্ড (Pan Card) পেতে তিন ধরনের নথি জমা দিতে হবে: পরিচয় প্রমাণ, জন্মতারিখ প্রমাণ এবং ঠিকানা প্রমাণ।
পরিচয় প্রমাণ: এর জন্য আধার কার্ড, পাসপোর্ট, কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকার বা পাবলিক সেক্টরের জারি করা ছবিযুক্ত পরিচয়পত্র, ভোটার আইডি, রেশন কার্ড, কেন্দ্রীয় সরকারের স্বাস্থ্য প্রকল্প কার্ড, পেনশনার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স বা অস্ত্রের লাইসেন্স গ্রহণযোগ্য।
জন্মতারিখ প্রমাণ: জন্ম সার্টিফিকেট, ভারতীয় কনস্যুলেটের জারি করা জন্ম সার্টিফিকেট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, স্বীকৃত বোর্ডের মাধ্যমে ম্যাট্রিকুলেশন সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট, পেনশন পেমেন্ট অর্ডার, বা ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে স্বাক্ষরিত জন্মতারিখের হলফনামা জমা দেওয়া যায়। এছাড়াও বিবাহ নিবন্ধন অফিসের জারি করা বিবাহ সার্টিফিকেট বা সরকারের জারি করা ডোমিসাইল সার্টিফিকেট গ্রহণযোগ্য।
ঠিকানা প্রমাণ: ইউটিলিটি বিল (তিন মাসের বেশি পুরনো নয়), পাসপোর্ট, ভোটার আইডি, আধার কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্ট, পোস্ট অফিস পাসবুক, স্ত্রী/স্বামীর পাসপোর্ট, সম্পত্তি করের মূল্যায়ন আদেশ, সম্পত্তি নিবন্ধন নথি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, সরকারের জারি করা ডোমিসাইল সার্টিফিকেট, বা কেন্দ্রীয়/রাজ্য সরকারের জারি করা আবাসন বরাদ্দপত্র (তিন বছরের বেশি পুরনো নয়) জমা দিতে হবে।
বর্তমানে ডিজিটাল ভারতের যুগে আর্থিক লেনদেন থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে প্যান কার্ডের (Pan Card) প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে। জরুরি পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা, ঋণের আবেদন বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে দ্রুত প্যান নম্বর পাওয়া অত্যন্ত সুবিধাজনক। ই-প্যান কার্ডের সুবিধা হলো এটি তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবহারযোগ্য এবং শারীরিক কার্ডের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। তবে, যারা ফিজিক্যাল কার্ড চান, তাঁদের জন্য প্রক্রিয়াটি কিছুটা দীর্ঘ হতে পারে।
অনলাইনে আবেদনের সময় সঠিক তথ্য ও নথি প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি। ভুল তথ্যের কারণে আবেদন বাতিল হতে পারে। এছাড়া, ফি প্রদানের সময় সুরক্ষিত পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার করুন এবং স্বীকৃতি নম্বরটি সংরক্ষণ করুন। এই দ্রুত পরিষেবার মাধ্যমে ভারত সরকার নাগরিকদের সুবিধার্থে আরও একটি পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই, জরুরি প্রয়োজনে এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেন।