উত্তেজনার মাঝেও পাকিস্তান থেকে ভারতে আসছে কোটি কোটি টাকা

Pakistan Imports from India: পাক-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক দীর্ঘদিন ধরেই নানা টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্তির পর থেকে দুই দেশের মধ্যে…

Pakistan Imports from India

Pakistan Imports from India: পাক-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক দীর্ঘদিন ধরেই নানা টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিলুপ্তির পর থেকে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক কার্যত বন্ধ। সীমান্ত উত্তেজনা, কূটনৈতিক ঠান্ডা যুদ্ধ, এমনকি অল্প সময়ের সামরিক সংঘর্ষ—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি বরাবরই উত্তপ্ত থেকেছে।

তবুও, এই জটিল সম্পর্কের আবহে এক আশ্চর্য তথ্য উঠে এসেছে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) ভারতের থেকে পাকিস্তানের আমদানি দাঁড়িয়েছে ২১১.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগের অর্থবর্ষে এই পরিমাণ ছিল ২০৭ মিলিয়ন ডলার, আর তার আগের বছরে ১৯০ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ, কূটনৈতিক সম্পর্ক যতই শীতল হোক না কেন, অর্থনৈতিক নির্ভরতায় তাপ বজায় আছে।

   

বিশেষ করে ২০২৫ সালের মে মাসে—যখন মাসের শুরুতেই চারদিনের এক সামরিক সংঘর্ষ হয় দুই দেশের মধ্যে—তখনও পাকিস্তান ভারত থেকে ১৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। যদিও আগের বছরের একই মাসে সেই অঙ্ক ছিল ১৭ মিলিয়ন ডলার, তবে সংঘর্ষের পরও আমদানির ধারা বজায় থাকা অনেককেই বিস্মিত করেছে।

একমুখী বাণিজ্য: ভারতে রপ্তানিতে পাকিস্তানের ভরাডুবি
এই আমদানি যখন তুঙ্গে, তখন পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতে রপ্তানির পরিসংখ্যান কার্যত শূন্য। চলতি অর্থবর্ষে জুলাই-মে সময়কালে পাকিস্তান থেকে ভারতে রপ্তানি হয়েছে মাত্র ৫ লাখ ডলারের পণ্য। মে মাসে সেই রপ্তানি ছিল মাত্র ১ হাজার ডলার! আগের দুই অর্থবর্ষে এই অঙ্ক ছিল যথাক্রমে ৩.৪৪ মিলিয়ন এবং ৩.৩৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য কার্যত সম্পূর্ণ একমুখী হয়ে পড়েছে।

“তৃতীয় দেশ” তত্ত্বে আশ্রয় ব্যবসায়ীদের
এই অস্বাভাবিক বাণিজ্য চলার পেছনে মুখ খুলতে নারাজ বেশিরভাগ ব্যবসায়ী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ীর দাবি, “এই পণ্যগুলি হয়তো সরাসরি ভারত থেকে আসেনি। তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে এসেছে—যেমন দুবাই বা শ্রীলঙ্কা। আর মে মাসের পণ্যগুলোর টাকা যুদ্ধ শুরুর আগেই মিটে গিয়েছিল।”

এই বক্তব্যে ওজন রয়েছে, কারণ পাকিস্তানের স্টেট ব্যাংকের তথ্য ছাড়াও ভারতের গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI) এক বিস্ফোরক দাবি করেছে—পাকিস্তানে ভারতের অপ্রাতিষ্ঠানিক রপ্তানি বছরে ১০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি! এই পণ্যগুলি মূলত দুবাই, কলম্বো ও সিঙ্গাপুরের মতো তৃতীয় দেশ ঘুরে পাকিস্তানে পৌঁছচ্ছে।

Advertisements

চোরাচালান ও শিল্প নির্ভরতাই বড় কারণ
বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তানের উচ্চ উৎপাদন খরচ, শিল্পে বিদেশি কাঁচামালের ওপর নির্ভরতা এবং রুপির অবমূল্যায়নই ভারতের পণ্যের জন্য বাজার তৈরি করে দিয়েছে। এক রপ্তানিকারক বলেন, “আমাদের উৎপাদন খরচ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ফলে চীন, ভারত এমনকি বাংলাদেশ থেকেও পণ্য ঢোকার পথ খোলা থাকে। চোরাচালানের পথও সম্পূর্ণ রুদ্ধ নয়।” তিনি আরও যোগ করেন, “আমরা যতই বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা দিই, চাহিদা যদি থাকে এবং অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ব্যর্থ হয়, তাহলে বাজার স্বাভাবিকভাবেই বিকল্প পথ খুঁজে নেবে।”

রাজনৈতিক সংকটেও অদৃশ্য সেতু রয়ে গেছে
২০১৯ সালে কাশ্মীর ইস্যুতে সম্পর্ক ছিন্নের পর ভারত-পাকিস্তান বাণিজ্য বন্ধ ছিল বলেই ধরা হয়। কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে, রাজনৈতিক সম্পর্ক ভেঙে পড়লেও অর্থনৈতিক যোগাযোগ ভেতরে ভেতরে বহমান। পণ্য, কাঁচামাল, ওষুধ, চিনি, চা, প্লাস্টিক, শিল্প যন্ত্রাংশ—এসবই এখনও ঢুকছে পাকিস্তানে, যদিও সরাসরি নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “ভারত ও পাকিস্তান রাজনৈতিকভাবে যতই দূরে থাকুক না কেন, অর্থনীতির ক্ষেত্রে একে অপরের প্রয়োজন অস্বীকার করা যায় না। তাই অনানুষ্ঠানিক পথেই হোক, সেই সম্পর্ক এখনও টিকে আছে।”

ভারত ও পাকিস্তানের রাজনৈতিক সম্পর্ক যতই উত্তেজনাপূর্ণ হোক, বাস্তবতা বলছে অর্থনীতির জগতে তারা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। পরিসংখ্যান, গবেষণা ও ব্যবসায়ীদের বক্তব্য—all point to one undeniable fact—যুদ্ধের ময়দানে না হলেও বাজারের মাঠে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক এখনও চালু রয়েছে।

এমন অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে—আসলে কি বাণিজ্য রাজনীতিকে হার মানাচ্ছে? নাকি অর্থনীতি এখন কূটনৈতিক সমীকরণের বাইরে এক নতুন সেতুবন্ধন গড়ে তুলছে? সময়ই তার উত্তর দেবে।