পহেলগাঁও হামলায় কাশ্মীরের পর্যটন ও সিনেমা শিল্প বিপর্যস্ত

কাশ্মীর আবারও রক্তাক্ত।  পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা কেবল পর্যটকদের (Kashmir Tourism) উপর আঘাতই নয়, বরং সমগ্র কাশ্মীর ও এর জনগণের শান্তি ও সমৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষার…

Pahalgam Attack Deals Major Blow to Kashmir Tourism and Film Industry

কাশ্মীর আবারও রক্তাক্ত।  পহেলগাঁওয়ে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা কেবল পর্যটকদের (Kashmir Tourism) উপর আঘাতই নয়, বরং সমগ্র কাশ্মীর ও এর জনগণের শান্তি ও সমৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষার উপর এক নৃশংস আক্রমণ। এই বর্বরোচিত ঘটনা আমাদের সকলের হৃদয় ভেঙে দিয়েছে। আমরা এই সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপের দাবি জানাচ্ছি। কাশ্মীরের মানুষ পর্যটকদের উন্মুক্ত হৃদয়ে স্বাগত জানায়, এবং এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা আমাদের মধ্যে থাকতে পারে না। আমরা এই মর্মান্তিক ঘটনায় প্রিয়জন হারানো পরিবারগুলির পাশে সংহতি প্রকাশ করছি। আমরা বিশ্বাস করি, ভারত সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে এবং কাশ্মীর উপত্যকায় শান্তি পুনরুদ্ধার করবে।

   

পর্যটন ও চলচ্চিত্র শিল্পের উপর প্রভাব

পহেলগাঁওয়ের এই হামলা কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে। দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় আমরা কাশ্মীরকে পর্যটন ও চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে, যা স্থানীয় অর্থনীতির উপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। পর্যটন ও চলচ্চিত্র নির্মাণের উপর নির্ভরশীল কাশ্মীরের অর্থনীতি এই ঘটনার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা আশা করি, সরকার এই ধরনের ঘটনা রোধে কঠোর পদক্ষেপ নেবে এবং পর্যটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করবে। এটি প্রথমবারের মতো এত বড় ধরনের একটি ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ করছি, এবং আমরা আশা করি ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না। আমরা আশাবাদী যে, কাশ্মীর শীঘ্রই এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠবে।

চলচ্চিত্র গন্তব্য হিসেবে কাশ্মীরের প্রচার

সাম্প্রতিক সময়ে কাশ্মীরকে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য একটি আদর্শ গন্তব্য হিসেবে প্রচারের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ফারহান আখতার, অভিনেতা ইমরান হাশমি এবং ‘গ্রাউন্ড জিরো’ চলচ্চিত্রের দল সম্প্রতি তাদের চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ারের জন্য কাশ্মীরে এসেছিলেন। এটি কাশ্মীরের পর্যটন ও চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি নতুন সূচনা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। এছাড়াও, এক্সেল এন্টারটেইনমেন্ট প্রযোজিত ‘সঙ্গস অফ প্যারাডাইস’ নামে একটি আসন্ন চলচ্চিত্র এই বছর আমাজন প্রাইমে মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। আমরা এই চলচ্চিত্রের প্রিমিয়ার ফারহান আখতার ও তার দলের সঙ্গে কাশ্মীরে আয়োজন করার পরিকল্পনা করছিলাম। আমরা আত্মবিশ্বাসী যে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। সরকার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে এবং চলচ্চিত্র নির্মাণ ও পর্যটন বৃদ্ধিতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাবে বলে আমরা আশাবাদী।

কাশ্মীরে চলচ্চিত্র শুটিংয়ের বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে কাশ্মীরে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র ও ওয়েব সিরিজের শুটিংয়ের পরিকল্পনা ছিল। সম্প্রতি আমরা ‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’ নামে একটি ওয়েব সিরিজের শুটিং সফলভাবে সম্পন্ন করেছি, যেখানে কর্তৃপক্ষের পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া গেছে। তবে, সাম্প্রতিক হামলার কারণে, সরকারের কাছ থেকে অনুমোদন না পাওয়া পর্যন্ত অন্যান্য শুটিংয়ের পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে হবে। আমরা বর্তমানে বিভিন্ন লোকেশনের রেকি প্রক্রিয়ায় রয়েছি, তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত শুটিং শুরু করা সম্ভব হবে না।

চলচ্চিত্রের মাধ্যমে কর্মসংস্থান

চলচ্চিত্র নির্মাণ কাশ্মীরে উল্লেখযোগ্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। আমাদের দলে প্রায় ৭০% ক্রু সদস্য কাশ্মীরের স্থানীয় বাসিন্দা, যারা আলোকসজ্জা, শব্দ, মেকআপ, ক্যামেরা সহায়তা, সেট ডিজাইন ইত্যাদি বিভিন্ন বিভাগে কাজ করেন। অনেক প্রযোজনা সংস্থা খরচ কমানোর জন্য স্থানীয় কর্মী নিয়োগকে প্রাধান্য দেয়। এছাড়াও, স্থানীয় অভিনেতা ও এক্সট্রা অভিনেতাদের সহায়ক ভূমিকা ও ব্যাকগ্রাউন্ড শটের জন্য নিয়োগ করা হয়। স্থানীয় লাইন প্রযোজকরা লোকেশন অনুমতি, পরিবহন ও লজিস্টিক সংক্রান্ত কাজে সহায়তা করেন।
একটি মাঝারি আকারের চলচ্চিত্র প্রকল্পে সরাসরি ২০০-৩০০ জন স্থানীয় বাসিন্দা কর্মসংস্থান পেতে পারেন, এবং পর্যটন ও অন্যান্য সহায়ক পরিষেবার মাধ্যমে আরও শত শত মানুষ পরোক্ষভাবে উপকৃত হন। জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের প্রণোদনার ফলে প্রতি বছর কয়েক ডজন শুটিং হয়, যা সামগ্রিকভাবে কর্মসংস্থানের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে।

কাশ্মীরের পর্যটন

২০১৭ সালে কাশ্মীরে প্রায় ৮ লক্ষ পর্যটক এসেছিলেন। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ৩৫ লক্ষে পৌঁছেছে। এই বছর আমরা ৪০ লক্ষ পর্যটকের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম। কিন্তু পহেলগাঁওয়ের সাম্প্রতিক ঘটনার পর এই লক্ষ্য অর্জন করা এখন অসম্ভব মনে হচ্ছে। তবে আমরা আশাবাদী যে, সরকার শান্তি পুনরুদ্ধার ও নিরাপত্তা জোরদার করতে কঠোর পদক্ষেপ নেবে।

কাশ্মীরের পর্যটন ও চলচ্চিত্র শিল্প এই মুহূর্তে একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে, আমরা বিশ্বাস করি, সরকার ও স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কাশ্মীর আবারও উঠে দাঁড়াবে। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতা, সামাজিক সংহতি এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একত্রিত প্রতিরোধের মাধ্যমে আমরা শান্তি ও ঐক্য ফিরিয়ে আনতে পারি। কাশ্মীরের সৌন্দর্য ও সম্ভাবনা পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের সকলের একযোগে কাজ করতে হবে। আমরা আশাবাদী যে, কাশ্মীর শীঘ্রই তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে এবং পর্যটন ও চলচ্চিত্র শিল্পের মাধ্যমে নতুন সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে।