আয়কর রিটার্ন (ITR) দাখিলের মৌসুমে অনেক করদাতা বিভ্রান্তিতে পড়ছেন যে, একাধিক বাড়ি থাকলেও ভাড়া না পেলে তারা আইটিআর-১ (সাহজ) ফর্মে রিটার্ন দাখিল করতে পারবেন কি না। বিষয়টি নিয়ে ট্যাক্স বিশেষজ্ঞদের স্পষ্ট মত—যদি কোনও করদাতার একাধিক বাড়ি থাকে, তবে ভাড়া না পেলেও আইটিআর-১ নয়, বাধ্যতামূলকভাবে আইটিআর-২ ফাইল করতে হবে।
চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট পরাগ জৈন, ট্যাক্স হেড, 1 Finance জানাচ্ছেন—আয়বর্ষ ২০২৫-২৬ থেকে আইটিআর-১ শুধুমাত্র তাঁদের জন্য খোলা, যাঁরা একটি মাত্র বাড়ির মালিক। কারও যদি দুই বা ততোধিক বাড়ি থাকে, তবে দ্বিতীয় বাড়িটি খালি, তালাবদ্ধ বা ভাড়া না দেওয়া থাকলেও তা “Deemed Let-Out Property” হিসেবে ধরা হবে। অর্থাৎ ওই বাড়ি থেকে ন্যূনতম সম্ভাব্য ভাড়ার একটি ‘কাল্পনিক আয়’ হিসাব করে রিটার্নে দেখাতে হবে। সেই কারণে এমন ক্ষেত্রে আইটিআর-২ ব্যবহার করাই বাধ্যতামূলক।
আইটিআর-১ কাদের জন্য?
আইটিআর-১, যা সাহজ নামে পরিচিত, এটি মূলত বেতনভোগী বা পেনশনভোগী সাধারণ করদাতাদের জন্য। শর্তগুলি হলো—
করদাতা অবশ্যই Resident Individual হতে হবে।
মোট আয়ের সীমা ৫০ লক্ষ টাকার মধ্যে হতে হবে।
শুধুমাত্র একটি বাড়ি থেকে আয় ধরা যাবে।
কৃষি আয় সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা পর্যন্ত থাকতে পারে।
সঞ্চয়ী বা স্থায়ী আমানতের সুদ, বা ছোটখাটো অন্যান্য উৎস থেকে আয় থাকলে তা অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
সীমিত পর্যায়ের মূলধনী লাভ (Section 112A অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১.২৫ লক্ষ টাকা) দেখানো যাবে।
তবে যাঁদের একাধিক সম্পত্তি, বিদেশি সম্পদ, ব্যবসা/পেশা সংক্রান্ত আয়, জুয়া/লটারি/ঘোড়দৌড় ইত্যাদি থেকে আয় আছে, তাঁদের আইটিআর-১ ফাইল করার অনুমতি নেই।
আইটিআর-২ কাদের জন্য?
আইটিআর-২ ফর্ম অনেক বিস্তৃত। এটি মূলত তাঁদের জন্য—
যাঁদের একাধিক বাড়ি রয়েছে।
যাঁদের মোট আয় ৫০ লক্ষ টাকার বেশি।
কৃষি আয় ৫,০০০ টাকার বেশি।
শেয়ার/মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ থেকে মূলধনী লাভ হয়েছে।
বিদেশি সম্পদ বা বিদেশি আয় আছে।
যাঁরা অ-নিবাসী (NRI) বা কোনও কোম্পানির পরিচালক।
যাঁদের জুয়া, লটারি বা অন্যান্য বিশেষ উৎস থেকে আয় আছে।
এখানে ব্যবসা বা পেশাজীবী আয়ের মানুষদের জন্য আলাদা আইটিআর-৩ প্রযোজ্য, কিন্তু অন্য সব ক্ষেত্রের জন্য আইটিআর-২ নিরাপদ বিকল্প।
কেন আইটিআর-২ বাধ্যতামূলক?
আয়কর আইনের ধারা অনুযায়ী, একজন করদাতা নিজের একটি বাড়িকে Self-Occupied Property (SOP) হিসেবে ঘোষণা করতে পারেন। কিন্তু দ্বিতীয় বা অতিরিক্ত যেকোনও সম্পত্তিকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে Deemed Let-Out Property (DLOP) ধরা হয়। এর মানে হলো, ভাড়াটে না থাকলেও কল্পিত ভাড়ার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ আয় হিসেবে দেখাতে হবে।
এই তথ্য আইটিআর-১ ফর্মে সঠিকভাবে দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। তাই আয়কর বিভাগ স্পষ্টভাবে বলেছে, একাধিক সম্পত্তি থাকলে আইটিআর-২ ব্যবহার করতে হবে। ভুল ফর্মে রিটার্ন দাখিল করলে তা বাতিল হতে পারে এবং ভবিষ্যতে নোটিশ বা জরিমানার মুখে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।
করদাতাদের কী করণীয়?
যাঁদের পরিস্থিতি প্রশ্নে উল্লিখিত উদাহরণের মতো—অর্থাৎ দুইটি বাড়ির মালিক কিন্তু কোনও ভাড়ার আয় নেই—তাঁদের ক্ষেত্রে কর বিশেষজ্ঞদের একটাই পরামর্শ: আইটিআর-২ ফাইল করুন। এতে সমস্ত সম্পত্তির তথ্য সঠিকভাবে উল্লেখ করা সম্ভব হবে এবং আয়কর বিভাগের সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় ঝামেলায় পড়তে হবে না।
পরাগ জৈন বলেন— “আইটিআর-২ ব্যবহারে স্বচ্ছতা বজায় থাকে এবং করদাতারা নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন যে তাঁদের রিটার্ন সম্পূর্ণ নিয়ম অনুযায়ী দাখিল হয়েছে। ভুল ফর্মে রিটার্ন জমা দিলে ভবিষ্যতে CPC বা আয়কর দপ্তর থেকে প্রশ্ন আসতে পারে।”
সাধারণ ভুল যেগুলি এড়ানো উচিত:
১. একাধিক বাড়ি থাকা সত্ত্বেও আইটিআর-১ ব্যবহার করা।
২. দ্বিতীয় বাড়িকে ভাড়া না দেওয়া থাকলেও আয় শূন্য দেখানো।
৩. মূলধনী লাভ (শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, সম্পত্তি বিক্রি ইত্যাদি) আইটিআর-১ এ রিপোর্ট করার চেষ্টা।
৪. বিদেশি সম্পদ বা NRI স্ট্যাটাস গোপন রাখা।
কর বিশেষজ্ঞদের মতে, ফর্ম বাছাই করার সময় করদাতাদের অবশ্যই নিজের আয়ের ধরন, সম্পত্তি সংখ্যা ও বিনিয়োগ প্রোফাইল যাচাই করা উচিত। এতে রিটার্ন বাতিল বা জরিমানার ঝুঁকি থাকবে না।
একাধিক বাড়ির মালিক হলে যদি দ্বিতীয় বাড়ি খালি থাকে—আইটিআর-১ নয়, বাধ্যতামূলকভাবে আইটিআর-২ ফাইল করতে হবে। সঠিক ফর্ম বেছে নেওয়া মানে কেবল নিয়ম মেনে চলা নয়, ভবিষ্যতের অডিট বা তদন্তের আশঙ্কা থেকেও নিজেকে সুরক্ষিত রাখা।