মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা ক্রমেই জোরাল হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে উত্তপ্ত ইরান—ইজরায়েলের ধারাবাহিক এয়ার স্ট্রাইকে কেঁপে উঠেছে রাজধানী তেহরান-সহ একাধিক শহর। ইরান পাল্টা জবাব দিতে চাইলেও বাস্তবে সামরিক শক্তিতে পিছিয়ে পড়েছে বলেই আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের মত।
এই পরিস্থিতিতে ইরানে আটকে পড়া ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ছড়ায় সারা দেশে। অবশেষে ভারত সরকারের দ্রুত পদক্ষেপে ১১০ জন ভারতীয়কে নিয়ে একটি বিশেষ বিমান দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে, যা অল্প সময়ের মধ্যেই পৌঁছবে বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন পড়ুয়া ও পেশাদার কর্মী, যারা সীমান্তবর্তী এলাকায় অবস্থান করছিলেন।
কোটা, রাজস্থান থেকে আসা এক অভিভাবক জানিয়েছেন, “আমার ছেলে ইরানে এমবিবিএস করছিল। সে সীমান্ত অঞ্চলে ছিল, তাই পরিস্থিতি অতটা খারাপ ছিল না। ভারত সরকার যে বিশেষ বিমানের ব্যবস্থা করেছে, তাতে করে সে আর্মেনিয়া হয়ে ফিরছে। আমি খুবই খুশি যে সে সুস্থভাবে ফিরছে। তবে তেহরান-সহ ইরানের ভিতরের অংশে যারা এখনও আটকে রয়েছেন, তাদের ফেরানো খুব জরুরি।”
তিনি আরও বলেন, “ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় আমরা প্রায় এক সপ্তাহ ধরে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারিনি। এই মানসিক চাপ কোনো বাবা-মায়ের পক্ষে সহ্য করা সহজ নয়। আমি ভারতীয় দূতাবাস এবং সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, তবে এখনও অনেককে ফেরানোর দায়িত্ব বাকি।”
জানা গেছে, ইরানে এখনও অন্তত ২০০০-এর বেশি ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন, যাদের মধ্যে তেহরানেই রয়েছেন প্রায় ৭০০ জন। যুদ্ধ পরিস্থিতির জেরে বিমান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখান থেকে সরাসরি ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই ভারত সরকার বিকল্প রুট, যেমন আর্মেনিয়া বা তুরস্ক হয়ে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছি। যে কোনও প্রয়োজনে তাঁদের সহায়তা করা হচ্ছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ থাকলেও আমাদের টিম কাজ করছে দিন-রাত।”
ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার মাধ্যমে। তেহরানে বেশ কিছু প্রশাসনিক ভবন ও বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এটি এখন আর শুধু সীমান্ত লড়াই নয়, বরং একটি পূর্ণমাত্রার আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে।
এই অবস্থায় ইরান ছেড়ে ফিরতে চাইলেও অনেক ভারতীয় নাগরিক এখনও সেখানে আটকে আছেন। যাঁদের অনেকে মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য উচ্চশিক্ষার কোর্সে ভর্তি ছিলেন। তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা।
এই উদ্ধার মিশনের (Operation Sindhu) মাধ্যমে ভারত আবার প্রমাণ করল, আন্তর্জাতিক সংকটেও নিজের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে প্রস্তুত। তবে পরিস্থিতি এখনও জটিল এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়া ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই।