ভারতের রাষ্ট্রীয় তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সংস্থা (ONGC) ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট ৫৭৮টি কূপ খনন করেছে, যা গত ৩৫ বছরে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি। শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনি এ ঘোষণা দেন।
মন্ত্রী বলেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতের শক্তি স্বনির্ভরতার যাত্রা এক নতুন গতি পাচ্ছে। ‘নো গো’ অঞ্চল নিয়ে নেওয়া সাহসী সিদ্ধান্তের ফলে নতুন এলাকায় অনুসন্ধানের দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “যেমন একটি দালান নির্মাণের জন্য মজবুত ভিত্তি দরকার, তেমনি শক্তি ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হতে গেলে অনুসন্ধান ও উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করা জরুরি।”
অনুসন্ধানে ঐতিহাসিক অগ্রগতি:
ওএনজিসি’র এই ৫৭৮টি কূপ খনন শুধুমাত্র সংখ্যাত্মক দিক থেকে নয়, গুণগত দিক থেকেও একটি বড় সাফল্য বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এত বিশাল সংখ্যক কূপ খননের পেছনে আছে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, নীতিগত সমর্থন এবং নীতিনির্ধারকদের দৃঢ় সিদ্ধান্ত।
সরকারের ‘ওপেন একরেজ লাইসেন্সিং পলিসি (OALP)’ এর অধীনে বরাদ্দপ্রাপ্ত ব্লকে এই কূপ খননের কাজ হচ্ছে, যা বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধির পাশাপাশি অনুসন্ধান ক্ষেত্রেও নতুন দরজা খুলে দিচ্ছে।
‘সূর্যমণি’ ও ‘বজ্রমণি’: নতুন আবিষ্কার:
গত মাসে ওএনজিসি ঘোষণা করেছে যে মুম্বাই অফশোর হাইড্রোকার্বন বেসিনে নতুন তেল ও গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই আবিষ্কার দুটি — ‘সূর্যমণি’ ও ‘বজ্রমণি’ — ওএলপি নীতির অধীনে বরাদ্দকৃত ব্লকে ঘটেছে।
এই আবিষ্কারগুলি ওএনজিসি-র ভবিষ্যত উৎপাদন বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। শুধু মুম্বাই নয়, একই সময়ে পূর্ব উপকূলের কৃষ্ণা-গোদাবরী (KG) অববাহিকায় স্থলভাগে (land block) আরও একটি হাইড্রোকার্বন আবিষ্কারের কথা জানানো হয়েছে।
বৃদ্ধিপ্রাপ্ত আমদানি নির্ভরতা ও ওএনজিসি’র ভূমিকা:
বর্তমানে ভারতের প্রায় ৮৫ শতাংশ তেলের চাহিদা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করা হয়, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণ ও শক্তি নিরাপত্তার জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। ভারত বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ।
দেশের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন মূলত সীমাবদ্ধ রাজস্থান, গুজরাট, আসাম, মুম্বাই হাই ও কৃষ্ণা-গোদাবরী বেসিন অঞ্চলে। তবে এই সব খনি ও গ্যাস ক্ষেত্র ধীরে ধীরে বার্ধক্যজনিত কারণে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। ফলে নতুন অনুসন্ধান ও উৎপাদনের প্রয়াস অত্যন্ত জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওএনজিসি’র এই সাফল্য একদিকে যেমন দেশে শক্তি সংস্থান বৃদ্ধি করবে, তেমনি বিদেশ নির্ভরতা কমিয়ে স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে ভারতের অগ্রগতি নিশ্চিত করবে।
‘নো গো’ অঞ্চল নিয়ে ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত:
সাধারণত ‘নো গো’ অঞ্চল বলতে পরিবেশগতভাবে সংবেদনশীল এলাকা বোঝানো হয়, যেখানে খনন বা শিল্প কার্যক্রম সীমিত বা নিষিদ্ধ থাকে। তবে মোদী সরকারের অধীনে বিশেষ নীতিগত বিশ্লেষণের মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় সীমিত পরিসরে খননের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অনুসন্ধানে একটি নতুন গতি এনেছে। মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে এই সাহসী পদক্ষেপ দেশের শক্তি নিরাপত্তাকে নতুন দিশা দিয়েছে।”
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা:
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ওএনজিসি ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এই গতিতে কূপ খনন ও অনুসন্ধান চালিয়ে যায়, তাহলে আগামী ১০ বছরে ভারতের জ্বালানি আমদানির হার ২০-২৫ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস করা সম্ভব।
সেইসঙ্গে ওএনজিসি’র আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ মানবসম্পদ এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিগত সহায়তা দেশের তেল ও গ্যাস খাতে এক নতুন যুগের সূচনা করতে পারে।
এই কূপ খনন ও আবিষ্কারের খবর এমন সময়ে এল, যখন বিশ্ব বাজারে তেলের দাম অস্থির এবং ভৌগোলিক-রাজনৈতিক টানাপোড়েন অব্যাহত। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানো শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ওএনজিসি’র ২০২৪-২৫ অর্থবছরের রেকর্ড সংখ্যক কূপ খনন ভারতের শক্তি খাতে এক ঐতিহাসিক মাইলফলক। এটি প্রমাণ করে যে সঠিক নেতৃত্ব, সাহসী সিদ্ধান্ত ও প্রযুক্তিনির্ভর পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারত তার শক্তি ভবিষ্যত আরও শক্তিশালী করতে পারে। প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘আত্মনির্ভর ভারত’ অভিযানের সঙ্গে যুক্ত এই অগ্রগতি দেশের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের পথে এক বড় পদক্ষেপ।