পুরনো নাকি নতুন ট্যাক্স রেজিম? কোনটি বেছে নেবেন? জানুন বিস্তারিত

মূল্যায়ন বছর ২০২৫-২৬ (অর্থবছর ২০২৪-২৫)-এর জন্য আয়কর রিটার্ন (ITR) জমা দেওয়ার সময় শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গেই করদাতাদের আবার সেই চিরন্তন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে—পুরনো…

ITR Filing Deadline

মূল্যায়ন বছর ২০২৫-২৬ (অর্থবছর ২০২৪-২৫)-এর জন্য আয়কর রিটার্ন (ITR) জমা দেওয়ার সময় শুরু হয়েছে। এর সঙ্গে সঙ্গেই করদাতাদের আবার সেই চিরন্তন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে—পুরনো ট্যাক্স রেজিম বেছে নেবেন নাকি নতুনটি? যদিও নতুন রেজিম এখন ডিফল্ট হিসেবে চালু, তবুও সরকার এখনও করদাতাদের সুবিধা অনুযায়ী রেজিম বেছে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে।

পুরনো ট্যাক্স রেজিম কী?
পুরনো রেজিম এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে করদাতারা নানা রকম ছাড় এবং কর-সাশ্রয়ী সুবিধা নিতে পারেন। যেমন ধারা 80C-র অধীনে ১.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায় PPF, ELSS, LIC ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করলে। এছাড়াও, বাড়ি ভাড়া ভাতা (HRA), ছুটির ট্রাভেল ভাতা (LTA), গৃহঋণের সুদের উপর ছাড় (ধারা ২৪), স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়াম (ধারা 80D), শিক্ষা ঋণের সুদের ছাড় (ধারা 80E), এবং চাকরিজীবীদের জন্য ৫০ হাজার টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন পাওয়া যায়।

   

পুরনো রেজিমে করের হার (অর্থবছর ২০২৪-২৫):
যদি কারো আয় ২.৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়, তাহলে কোনো কর দিতে হয় না।
২.৫ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে হলে ৫ শতাংশ কর দিতে হয়।
৫ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকার মধ্যে হলে ২০ শতাংশ কর দিতে হয়।
১০ লাখ টাকার বেশি আয়ের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়।
এছাড়া, ধারা 87A অনুসারে, মোট আয় ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত হলে সর্বোচ্চ ১২,৫০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। অর্থাৎ, এই সীমার মধ্যে থাকলে কার্যত কোনো কর দিতে হয় না।

নতুন ট্যাক্স রেজিম কী?
নতুন রেজিম প্রথমে বাজেট ২০২০-এ প্রস্তাব করা হয়েছিল এবং ২০২৩ সালের বাজেটে আরও সহজ করে তোলা হয়। এই রেজিমে করের হার তুলনায় কম, কিন্তু বড় কোনো ছাড় বা কাটছাঁটের সুবিধা নেই। কিছু বেছে নেওয়া ছাড়, যেমন নিয়োগকর্তার দেওয়া NPS অবদান এবং ৫০ হাজার টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন (২০২৩-২৪ থেকে) অনুমোদিত।

নতুন রেজিমে করের হার (অর্থবছর ২০২৪-২৫):
৩ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে কোনো কর দিতে হয় না।
৩ লাখ থেকে ৬ লাখ টাকার মধ্যে হলে ৫ শতাংশ কর দিতে হয়।
৬ লাখ থেকে ৯ লাখ টাকার মধ্যে হলে ১০ শতাংশ কর দিতে হয়।
৯ লাখ থেকে ১২ লাখ টাকার মধ্যে হলে ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়।
১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকার মধ্যে হলে ২০ শতাংশ কর দিতে হয়।
১৫ লাখ টাকার বেশি আয়ের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কর দিতে হয়।
নতুন রেজিমে চাকরিজীবী এবং পেনশনভোগীদের জন্য ৫০ হাজার টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন অনুমোদিত।

প্রধান পার্থক্য:
পুরনো রেজিমে করের হার তুলনায় বেশি, কিন্তু বিভিন্ন ছাড় এবং কাটছাঁট নেওয়ার সুযোগ আছে। যেমন ধারা 80C, HRA, গৃহঋণ ইত্যাদি। অন্যদিকে নতুন রেজিমে করের হার কম, কিন্তু ছাড়ের সংখ্যা সীমিত।
স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন দুই রেজিমেই ৫০ হাজার টাকা অনুমোদিত।
ধারা 87A অনুসারে পুরনো রেজিমে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে ১২,৫০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়।
নতুন রেজিমে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে ২৫,০০০ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়।
২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে নতুন রেজিমই ডিফল্ট হিসেবে ধরা হচ্ছে।

কার জন্য উপযুক্ত পুরনো রেজিম?
যদি আপনি বড় অঙ্কের ছাড় দাবি করতে পারেন, যেমন 80C, 80D, HRA, বা গৃহঋণের সুদ, তাহলে পুরনো রেজিমে আপনার সাশ্রয় বেশি হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার মোট আয় ১০ লাখ টাকা হয় এবং আপনি ২.৫ থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড় নিতে পারেন, তাহলে আপনার করযোগ্য আয় ৭ লাখ টাকায় নেমে যাবে। এর ফলে, পুরনো রেজিমে আপনার করের পরিমাণ কম হবে।

Advertisements

কার জন্য উপযুক্ত নতুন রেজিম?
যারা বেশি ছাড়ের সুযোগ নেন না, যেমন নবীন চাকরিজীবী, ফ্রিল্যান্সার, গিগ কর্মী বা যাদের আয় সহজ এবং সরল, তাদের জন্য নতুন রেজিম উপযোগী। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো আয় ৯ লাখ টাকা হয় এবং কোনো বড় ছাড় না থাকে, তাহলে নতুন রেজিমে কম কর দিতে হবে। কারণ এখানে কম কর হার এবং ৫০ হাজার টাকার স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন রয়েছে।

রেজিম পরিবর্তন সম্পর্কিত নিয়ম:
চাকরিজীবীরা প্রতি বছর রেজিম বেছে নিতে পারেন। বছরের শুরুতে নিয়োগকর্তাকে জানানো হলেও, শেষ পর্যন্ত ITR ফাইলের সময় চূড়ান্তভাবে বেছে নেওয়া যায়। ব্যবসায়ী বা পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে একবার রেজিম পরিবর্তনের পর পুনরায় পরিবর্তন করা সম্ভব নয়।

ধারা 87A-এর ছাড়:
পুরনো রেজিমে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ১২,৫০০ টাকা ছাড় পাওয়া যায়।
নতুন রেজিমে ৭ লাখ টাকা পর্যন্ত আয়ের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫,০০০ টাকা ছাড় পাওয়া যায়।

রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ:
মূল্যায়ন বছর ২০২৫-২৬ (অর্থবছর ২০২৪-২৫)-এর জন্য ITR জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫।
যাদের অডিটের প্রয়োজন, তাদের জন্য শেষ তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০২৫।

কোন রেজিমে আপনার সুবিধা?
এক কথায়, সবার জন্য এক উত্তর নেই। আপনার আয়, বিনিয়োগ, এবং কর সাশ্রয়ের পরিমাণ অনুযায়ী সঠিক রেজিম বেছে নেওয়া উচিত। বেশি ছাড় নিতে চাইলে পুরনো রেজিম এবং কম ঝামেলা ও সরলতা চাইলে নতুন রেজিম বেছে নেওয়া ভালো।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আয়কর বিভাগের ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে বা কোনো কর পরামর্শকের সঙ্গে আলোচনা করে সঠিক রেজিম নির্বাচন করা উচিত। সঠিক রেজিম বেছে নিয়ে এবং সময়মতো ITR ফাইল করে বড় অঙ্কের কর সাশ্রয় এবং ভবিষ্যতের ঝামেলা এড়ানো সম্ভব।