আর্থিক বছর ২০২৫ (FY25) শেষ হয়েছে প্রায় এক মাস হতে চলল। আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আমাদের আয়কর রিটার্ন (ITR) দাখিল করতে হবে, তাও আবার কোনো জরিমানা ছাড়াই। ভারতের আয়কর ব্যবস্থায় বর্তমানে দুটি পদ্ধতি রয়েছে—পুরাতন কর ব্যবস্থা এবং নতুন কর ব্যবস্থা। কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর বোর্ডের (CBDT) চেয়ারম্যান রবি আগরওয়াল জানিয়েছেন, বর্তমানে ৭৫ শতাংশ করদাতা নতুন কর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন এবং অদূর ভবিষ্যতে এই সংখ্যা ৯৫ শতাংশে পৌঁছে যাবে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরাতন কর ব্যবস্থায় থাকা অনেক বেশি লাভজনক হতে পারে। নতুন ব্যবস্থায় করের হার কম এবং দাখিল প্রক্রিয়া সহজ হলেও, এতে কার্যত কোনো কর ছাড় পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, পুরাতন ব্যবস্থায় বেশ কিছু ছাড়ের সুবিধা রয়েছে, যা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে করদাতার জন্য উপকারী। আসুন, জেনে নিই কোন কোন ক্ষেত্রে পুরাতন কর ব্যবস্থা বেছে নেওয়া বেশি সুবিধাজনক।
নতুন কর ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য:
নতুন কর ব্যবস্থা সরল এবং স্বচ্ছ। এতে করের হার তুলনামূলকভাবে কম এবং বিনিয়োগ বা অন্যান্য ছাড়ের রেকর্ড জমা দেওয়ার ঝামেলা নেই। তবে এই ব্যবস্থায় বাড়ি ভাড়া ভাতা (HRA), গৃহঋণের সুদ বা মূলধন পরিশোধ, স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়াম ইত্যাদির উপর কোনো ছাড় পাওয়া যায় না। ফলে, যাঁদের আয়ের একটি বড় অংশ এই ধরনের ছাড়ের আওতায় পড়ে, তাঁদের জন্য পুরাতন ব্যবস্থা বেশি লাভজনক হতে পারে।
পুরাতন কর ব্যবস্থায় থাকার সুবিধা
বিশেষজ্ঞদের মতে, নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে পুরাতন কর ব্যবস্থা বেছে নেওয়া বেশি সুবিধাজনক:
১. উচ্চ পরিমাণের বাড়ি ভাড়া ভাতা (HRA):
যদি কোনো করদাতা তাঁর বেতনের একটি বড় অংশ বাড়ি ভাড়া ভাতা হিসেবে পান, তবে পুরাতন কর ব্যবস্থায় থাকা তাঁর জন্য বেশি লাভজনক। আয়কর আইন, ১৯৬১-এর ধারা ১০(১৩এ)-এর অধীনে, বেতনভোগী ব্যক্তিরা HRA-এর উপর ছাড় দাবি করতে পারেন। এই ধারার অধীনে বিবেচিত HRA করদাতার বেতনের অংশ হিসেবে গণ্য হয় না। উদাহরণস্বরূপ, যদি কেউ মহানগরে থাকেন এবং তাঁর বেতনের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত HRA হিসেবে পান Dyslexia হিসেবে পান, তবে তিনি পুরোপুরি এই ভাতার উপর ছাড় পেতে পারেন। নতুন কর ব্যবস্থায় এই সুবিধা একেবারেই নেই। ফলে, যাঁদের HRA-এর পরিমাণ বেশি, তাঁরা পুরাতন ব্যবস্থায় থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কর বাঁচাতে পারেন।
২. গৃহঋণের উচ্চ সুদ ও মূলধন পরিশোধ:
গৃহঋণের ক্ষেত্রেও পুরাতন কর ব্যবস্থা অনেক বেশি সুবিধা দেয়। আয়কর আইনের ধারা ২৪(বি)-এর অধীনে, নিজের বাড়ি বা ফ্ল্যাটের জন্য গৃহঋণের সুদের উপর বছরে সর্বাধিক ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় দাবি করা যায়। এছাড়া, ধারা ৮০(সি)-এর অধীনে গৃহঋণের মূলধন পরিশোধের উপরও বছরে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ছাড় পাওয়া যায়। নতুন কর ব্যবস্থায় এই দুটি ছাড়ই অনুপস্থিত। ফলে, যাঁরা প্রতি বছর গৃহঋণের সুদ ও মূলধন হিসেবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করছেন, তাঁদের জন্য পুরাতন ব্যবস্থা বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে।
৩. ধারা ৮০(সি) এবং ৮০(ডি)-এর সুবিধা:
ধারা ৮০(সি)-এর অধীনে, করদাতারা ট্যাক্স সেভার ফিক্সড ডিপোজিট (FD), পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড (PPF), ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (NSC), সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা ইত্যাদির মাধ্যমে বছরে সর্বাধিক ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগের উপর ছাড় পেতে পারেন। অন্যদিকে, ধারা ৮০(ডি)-এর অধীনে, নিজের, স্ত্রী/স্বামী, নির্ভরশীল সন্তান এবং নির্ভরশীল পিতামাতার জন্য স্বাস্থ্য বীমার প্রিমিয়ামের উপর ছাড় পাওয়া যায়। এই ছাড়গুলো পুরাতন ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কর বাঁচাতে সাহায্য করে।
কাদের জন্য পুরাতন ব্যবস্থা বেশি লাভজনক?
ইনকাম ট্যাক্স বার অ্যাসোসিয়েশন কলকাতার সেক্রেটারি হিমাদ্রি মুখোপাধ্যায় এক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, তাঁরা প্রয়োজনীয় হিসাব-নিকাশ করে দেখেছেন যে, যদি কোনো ব্যক্তি গৃহঋণের সুদ ও মূলধন হিসেবে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করেন এবং ধারা ৮০(সি) ও ৮০(ডি)-এর বিধানগুলোর উল্লেখযোগ্য ব্যবহার করেন, তবে পুরাতন কর ব্যবস্থায় থাকা বেশি লাভজনক হতে পারে। তিনি আরও বলেন, “যদি কোনো করদাতার বেতনে HRA-এর উল্লেখযোগ্য অংশ থাকে, তবে পুরাতন ব্যবস্থায় তিনি বেশি কর বাঁচাতে পারেন।”
এছাড়া, কনসালটেন্সি সংস্থা ডেলয়েট সম্প্রতি একটি হিসাব করে দেখিয়েছে যে, যাঁদের বার্ষিক আয় ২৪ লক্ষ টাকার বেশি, তাঁরা কেবল তখনই পুরাতন ব্যবস্থায় থাকলে লাভবান হবেন, যদি তাঁরা বছরে ৮ লক্ষ টাকার বেশি ছাড় দাবি করতে পারেন। এই ছাড়ের মধ্যে HRA, গৃহঋণের সুদ ও মূলধন, ধারা ৮০(সি) ও ৮০(ডি)-এর অধীনে বিনিয়োগ বা ব্যয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
কী করবেন করদাতারা?
পুরাতন এবং নতুন কর ব্যবস্থার মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে করদাতাদের তাঁদের আয়, ব্যয় এবং বিনিয়োগের বিস্তারিত হিসাব করা উচিত। যাঁদের HRA, গৃহঋণ বা ধারা ৮০(সি) ও ৮০(ডি)-এর অধীনে উল্লেখযোগ্য ছাড়ের সুযোগ রয়েছে, তাঁদের জন্য পুরাতন ব্যবস্থা বেছে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে। অন্যদিকে, যাঁদের এই ধরনের ছাড়ের পরিমাণ কম এবং সরল ব্যবস্থা পছন্দ করেন, তাঁরা নতুন ব্যবস্থা বেছে নিতে পারেন।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, আয়কর রিটার্ন দাখিলের আগে একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বা ট্যাক্স কনসালট্যান্টের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। এতে করে করদাতারা তাঁদের আর্থিক পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে সঠিক ব্যবস্থা বেছে নিতে পারবেন এবং সর্বাধিক কর সাশ্রয় করতে পারবেন।
আয়কর রিটার্ন দাখিলের সময় এগিয়ে আসছে। পুরাতন এবং নতুন কর ব্যবস্থার মধ্যে সঠিক পছন্দ করা নির্ভর করছে আপনার আয়, ব্যয় এবং বিনিয়োগের ধরনের উপর। যাঁদের HRA, গৃহঋণ বা অন্যান্য ছাড়ের পরিমাণ বেশি, তাঁদের জন্য পুরাতন ব্যবস্থা এখনও লাভজনক হতে পারে। তবে, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বিস্তারিত হিসাব এবং বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।