New Tax Regime: ২০২৪-২৫ অর্থবছর (মূল্যায়ন বছর ২০২৫-২৬) হতে পারে শেষ সুযোগ, যখন আপনি পুরনো কর ব্যবস্থার অধীনে বিভিন্ন কর ছাড় এবং ছাড়পত্রের সুবিধা নিতে পারবেন। কারণ আগামী অর্থবছর থেকে (২০২৫-২৬ / মূল্যায়ন বছর ২০২৬-২৭) নতুন কর ব্যবস্থা এমনভাবে বদল হচ্ছে, যেখানে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয় কার্যত করমুক্ত হয়ে যাবে।
পুরনো বনাম নতুন কর ব্যবস্থা: কোনটা উপযুক্ত আপনার জন্য?
বর্তমানে বেতনভুক্ত কর্মীরা পুরনো ও নতুন—দুই কর ব্যবস্থার মধ্যে যে কোনও একটিকে বেছে নিতে পারেন। তবে পরিবর্তন আসন্ন। সরকারের লক্ষ্য নতুন কর ব্যবস্থাকে আরও জনপ্রিয় করে তোলা এবং পুরনো ব্যবস্থার উপর নির্ভরতা কমানো।
এ বছর কর রিটার্ন ফাইল করার শেষ তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫। ফলে, এখনও হাতে কিছুটা সময় আছে পুরনো ব্যবস্থার ছাড়গুলি পুরোপুরি কাজে লাগানোর। কিন্তু আগামী বছর থেকে নতুন কর ব্যবস্থার সুবিধার কথা মাথায় রেখে অনেকেই স্থায়ীভাবে সেটি বেছে নিতে পারেন।
পুরনো কর ব্যবস্থার সুবিধাগুলি
পুরনো কর ব্যবস্থায় বিভিন্ন কর ছাড় পাওয়া যায়, যা আয়কর কমাতে সাহায্য করে। যেমন:
গৃহ ভাড়া ভাতা (HRA)
ছুটির ট্রাভেল ভাতা (LTA)
গৃহ ঋণের সুদের ওপর ছাড় (ধারা ২৪বি)
৮০সি থেকে ৮০ইউ ধারার অধীনে ছাড় — যার মধ্যে পড়ে পিপিএফ, ইএলএসএস, এলআইসি প্রিমিয়াম, সন্তানদের টিউশন ফি, এনএসসি ইত্যাদি।
এই ছাড়গুলি কার্যকর হলেও এর জন্য যথেষ্ট পরিমাণে পরিকল্পনা ও প্রামাণ্য নথি প্রয়োজন।
নতুন কর ব্যবস্থায় কী থাকছে?
নতুন কর ব্যবস্থা অনেক সহজ এবং কম জটিল হলেও এতে ছাড়পত্রের সংখ্যা কম। তবে বেশ কিছু বড়সড় সুবিধা থাকছে:
ধারা ৮৭এ’র ছাড়: পুরনো ব্যবস্থায় ৫ লক্ষ পর্যন্ত আয়ে কর ছাড়, নতুন ব্যবস্থায় ৭ লক্ষ পর্যন্ত।
স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন: পুরনো ব্যবস্থায় ৫০,০০০ টাকা, নতুন ব্যবস্থায় ৭৫,০০০ টাকা।
সর্বোচ্চ রিবেট: পুরনো ব্যবস্থায় ১২,৫০০ টাকা, নতুন ব্যবস্থায় ২৫,০০০ টাকা।
নতুন ব্যবস্থায় বীমা, পিপিএফ, এনএসসি-র মত কর বাঁচানোর উপকরণ আর আগের মত প্রভাব ফেলবে না। তবে কিছু সীমিত ছাড় থাকবে, যেমন:
নিয়োগকর্তার অবদান জাতীয় পেনশন স্কিমে (NPS – ধারা ৮০CCD(2))
অগ্নিবীর কর্পাস ফান্ডে অবদান (ধারা ৮০CCH(2))
১২ লক্ষ টাকার মধ্যে আয় হলে কতটা কর বাঁচতে পারে?
নতুন কর ব্যবস্থায় ১২ লক্ষ টাকার মধ্যে যাঁদের বার্ষিক আয়, তাঁদের কর কার্যত শূন্য বা খুব সামান্য হয়ে যাবে:
উদাহরণস্বরূপ:
৭.৫ লক্ষ টাকা আয় হলে, স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ও রিবেট বাদ দিলে কর প্রায় শূন্য।
৯ লক্ষ টাকা আয় হলে, প্রায় ১৫,০০০ টাকার কর।
১২ লক্ষ টাকা আয় হলেও, ৪৫,০০০ টাকার মধ্যে করের পরিমাণ থেকে যাবে, যা পুরনো ব্যবস্থার তুলনায় অনেকটাই কম।
কেন এই বদল?
সরকারের বক্তব্য, নতুন কর ব্যবস্থা বিনিয়োগভিত্তিক কর ছাড়ের জটিলতা থেকে রেহাই দেয়। এতে একদিকে যেমন করদাতাদের হিসাব রাখা সহজ, অন্যদিকে করদাতারাও বিনিয়োগের চাপ ছাড়াই কর বাঁচাতে পারেন। ফলে, ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে নতুন কর ব্যবস্থা একটি ডিফল্ট বা প্রাথমিক কর ব্যবস্থা হয়ে উঠতে চলেছে।
এবার কী করবেন?
যাঁরা এখনো পুরনো কর ব্যবস্থা ব্যবহার করছেন এবং যাঁদের বার্ষিক আয় ১২ লক্ষ টাকার মধ্যে, তাঁদের জন্য ২০২৪-২৫ হতে পারে শেষ বছর যখন তাঁরা এই কর ছাড়গুলি পূর্ণ মাত্রায় উপভোগ করতে পারবেন। ফলে, চলতি বছরের আয়কর রিটার্ন ফাইল করার সময় এই ছাড়গুলি যতটা সম্ভব কাজে লাগান।
তবে একবার আগামী বছরের জন্য নতুন কর ব্যবস্থা কার্যকর হয়ে গেলে, বিনিয়োগ-ভিত্তিক ছাড়ের চাহিদা কমে আসবে এবং অধিকাংশ মানুষের জন্য নতুন কর ব্যবস্থাই হয়ে উঠবে সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী।
২০২৪-২৫ অর্থবছর শেষ হতেই চলেছে, এবং পুরনো কর ব্যবস্থার সময়সীমাও। তাই শেষবারের মত ছাড়গুলি বুঝে শুনে প্রয়োগ করুন। আর ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য নতুন কর ব্যবস্থার সুবিধাগুলি বিশ্লেষণ করে আগামী কর পরিকল্পনা তৈরি করুন। সরকারের লক্ষ্য কর ব্যবস্থা সহজতর করা, আর আপনার লক্ষ্য হওয়া উচিত—সেই সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার।