ভারতের (India) ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে পেট্রোলিয়াম পণ্যের রফতানি বড়সড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ইইউ-এর নতুন নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, রাশিয়ার ক্রুড অয়েল ব্যবহার করে তৃতীয় দেশ থেকে পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে ভারতের প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পেট্রোলিয়াম রফতানি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা গ্লোবাল ট্রেড রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ (GTRI)।
ইইউ-র ১৮তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজ:
ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ সদস্যদেশ তাদের ১৮তম নিষেধাজ্ঞা প্যাকেজে রাশিয়ার জ্বালানি খাতকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ হলো—রাশিয়ান ক্রুড অয়েল থেকে উৎপন্ন পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম পণ্য, তৃতীয় দেশের মাধ্যমে ইউরোপে আমদানি নিষিদ্ধ করা। তবে এই নিষেধাজ্ঞা থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে কেবল কয়েকটি ঘনিষ্ঠ মিত্র দেশকে, যেমন: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও সুইজারল্যান্ড।
ভারতের প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা:
GTRI-এর প্রতিষ্ঠাতা অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, “ভারতের ইউরোপে ১৫ বিলিয়ন ডলারের পেট্রোলিয়াম পণ্য রফতানি এই নিষেধাজ্ঞার ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ইউরোপে ভারতীয় ডিজেল, পেট্রোল ও জেট ফুয়েলের রফতানির একটি বড় অংশ রাশিয়ান ক্রুড ব্যবহার করে পরিশোধিত। এখন সেই রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।”
পরিসংখ্যান: রফতানি ও আমদানির চিত্র:
GTRI জানিয়েছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ভারত ইইউ-তে মোট ১৯.২ বিলিয়ন ডলারের পেট্রোলিয়াম পণ্য রফতানি করেছিল। কিন্তু ২০২৪-২৫ সালে তা ২৭.১ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১৫ বিলিয়নে নেমে এসেছে। এই পতনের অন্যতম কারণ ইউরোপের নীতিগত অবস্থান এবং নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি।
অন্যদিকে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারত ৫০.৩ বিলিয়ন ডলারের রাশিয়ান ক্রুড অয়েল আমদানি করেছে, যা দেশের মোট ১৪৩.১ বিলিয়ন ডলারের ক্রুড আমদানির এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।
তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের অবস্থান:
এই নিষেধাজ্ঞা কেবল ভারতের উপর নয়, একইভাবে তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশগুলিও প্রভাবিত হবে, যারা রাশিয়ার ক্রুড অয়েল পরিশোধন করে ইউরোপে পেট্রোলিয়াম পণ্য রফতানি করে আসছে।
ভূ-রাজনৈতিক চাপে অর্থনৈতিক কৌশল:
শ্রীবাস্তব আরও বলেন, “যদিও ভারত এখনো রাশিয়ার সঙ্গে বৈধ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলির দৃষ্টিভঙ্গিতে এর রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ছে। ভারতের পক্ষে এখন অর্থনৈতিক বাস্তবতা এবং ভূ-রাজনৈতিক চাপের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হবে।”
সম্ভাব্য প্রভাব ও করণীয়:
এই নিষেধাজ্ঞার বাস্তবায়ন হলে ভারতীয় পরিশোধনাগারগুলোর ইউরোপীয় বাজারে প্রবেশ সীমিত হয়ে যাবে। এর ফলে দেশের রফতানিকারকদের বিকল্প বাজার খুঁজে নিতে হবে যেমন: আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও লাতিন আমেরিকা। তবে এই বাজারগুলিতে প্রতিযোগিতা বেশি এবং লাভের পরিমাণ কম।
সরকারের পক্ষ থেকে এখন রফতানিকারকদের সহায়তায় কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা, নিষেধাজ্ঞার ব্যাখ্যা চাওয়া এবং প্রয়োজনে WTO-তে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হতে পারে।
ভারতের পেট্রোলিয়াম রফতানি খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের উৎস। ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই নতুন নিষেধাজ্ঞা কেবল অর্থনৈতিক ক্ষতির হুমকি নয়, বরং দেশের কূটনৈতিক অবস্থানকেও প্রভাবিত করতে পারে। তাই দ্রুত ও সুপরিকল্পিত প্রতিক্রিয়া জরুরি, যাতে ভারত তার বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষা করতে পারে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজের অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হয়।