আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমল

মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম (Oil Prices) সামান্য কমেছে। সোমবারের তীব্র বৃদ্ধির পর ব্যবসায়ীরা নতুন করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সর্বশেষ ঘটনাপ্রবাহ ও তার…

Oil Market Chaos: Volatility Surges as Tariffs, OPEC Shocks Hit

মঙ্গলবার বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম (Oil Prices) সামান্য কমেছে। সোমবারের তীব্র বৃদ্ধির পর ব্যবসায়ীরা নতুন করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সর্বশেষ ঘটনাপ্রবাহ ও তার প্রভাব জ্বালানি সরবরাহে কেমন পড়তে পারে, সেই অনিশ্চয়তাই এখন বাজারকে নাড়া দিচ্ছে।

সকালে লন্ডনের বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুড ফিউচার্সের দাম কমেছে ৩২ সেন্ট বা ০.৫ শতাংশ, যা দাঁড়িয়েছে প্রতি ব্যারেল ৬৮.৪৮ ডলারে। একই সময়ে ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) তেলের দাম কমেছে ৩৩ সেন্ট বা ০.৫ শতাংশ, যা দাঁড়িয়েছে ৬৪.৪৭ ডলারে। সোমবার উভয় সূচকই গত দুই সপ্তাহের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল, যেখানে WTI তার ১০০ দিনের চলতি গড়ের উপরে চলে যায়।

   

সোমবারের দাম বৃদ্ধির মূল কারণ ছিল রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামোর উপর ইউক্রেনের হামলা। এই হামলায় মস্কোর তেল শোধনাগার ও রপ্তানিতে প্রভাব পড়েছে, যার ফলে রাশিয়ার কিছু অঞ্চলে পেট্রোলের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি, রাশিয়াও পাল্টা হামলা চালিয়ে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ও গ্যাস নেটওয়ার্ককে নিশানা করছে।

লন্ডনভিত্তিক ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠান আইজি-এর বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে অপরিশোধিত তেলের দামে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। যদি দাম ৬৪-৬৫ ডলারের উপরে স্থায়ীভাবে অবস্থান করে, তাহলে আরও বৃদ্ধি দেখা যেতে পারে।”

বার্কলেস ব্যাংক তাদের ক্লায়েন্ট নোটে জানিয়েছে, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও বাজারের মৌলিক শক্তি তেলের দামের ওঠানামাকে সীমিত পরিসরে রাখলেও ঝুঁকির ভার এখনও উপরের দিকেই রয়েছে।

অবস্থাকে আরও জটিল করেছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য। তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি না হলে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে বিনিয়োগকারীদের দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে।

একই সঙ্গে ভারতের জন্য নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। মার্কিন প্রশাসন ভারতীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছে, যা বুধবার থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে ভারতীয় রপ্তানিপণ্যে মোট শুল্কের চাপ প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছাবে—ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে এত উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ বিরল ঘটনা।

এই সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ ভারতের রাশিয়ান অপরিশোধিত তেল আমদানি। যুক্তরাষ্ট্র বহুবার সতর্ক করার পরও ভারত রাশিয়া থেকে ছাড়মূল্যে তেল কিনে আসছে। এখন মার্কিন শুল্কনীতির কারণে ভারতের রপ্তানিকারকরা বড়সড় ধাক্কা খাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।

Advertisements

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাড়তি চাপ ভারতের জ্বালানি কৌশলেও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে, রাশিয়ার উপর নির্ভরশীলতা কতটা রাখা হবে—তা নিয়ে সরকারকে নতুন করে ভাবতে হবে।

এখন বাজারের দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের তেল মজুতের দিকে। আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট (API) মঙ্গলবার তাদের সাপ্তাহিক তথ্য প্রকাশ করবে। প্রাথমিক অনুমান বলছে, অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোল মজুত কমতে পারে, তবে ডিস্টিলেট বা ভারী জ্বালানির মজুত সামান্য বাড়বে।

এই তথ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ মজুতের মাত্রা চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য বোঝায় এবং এর উপর ভিত্তি করেই স্বল্পমেয়াদি দাম নির্ধারণ হয়।

বিশ্ববাজারের এই পরিস্থিতি ভারতের জন্য বিশেষভাবে জটিল। একদিকে তেলের আন্তর্জাতিক দামে ওঠানামা, অন্যদিকে মার্কিন শুল্কনীতির চাপ—দুটিই দেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারে। ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ। তেলের দাম বাড়লে সরাসরি প্রভাব পড়ে মুদ্রাস্ফীতি ও আমদানি খরচে।

যদি শুল্কের কারণে ভারতীয় রপ্তানিতে ধাক্কা লাগে, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর সঙ্গে তেলের দামের বাড়তি চাপ মিলিয়ে অর্থনীতির উপর বাড়তি চাপ তৈরি হওয়া একেবারেই অনিবার্য।

সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সাম্প্রতিক উত্তেজনা, যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা এবং ভারতের উপর শুল্কের চাপ—সব মিলিয়ে তেলের বাজারে অনিশ্চয়তা বাড়ছে। মঙ্গলবার দাম সামান্য কমলেও পরিস্থিতি এখনও অস্থির। পরবর্তী দিকনির্দেশ আসবে মার্কিন তেল মজুতের তথ্য ও ভূরাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে।

ভারতের জন্য এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—কীভাবে একদিকে সস্তা রাশিয়ান তেলের সুবিধা নেওয়া যায়, অন্যদিকে মার্কিন বাণিজ্যনীতির শাস্তি এড়ানো যায়। আগামী কয়েক সপ্তাহে সরকারের নীতি ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক আলোচনার উপর নির্ভর করবে ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা।