তেলের ফিউচার (Oil Futures) মূল্য টানা তিন দিনের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার পর হ্রাস পেয়েছে, যা দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে মাসিক ও ত্রৈমাসিক উভয় ক্ষেত্রেই কমে গেছে। ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি অটুট থাকায় তেলের মূল্যে যুদ্ধজনিত প্রিমিয়াম অনুপস্থিত রয়েছে, এবং বাজারের মনোযোগ এখন ওপেক+ (পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশগুলির সংস্থা ও তার মিত্রদের) আগামী রবিবারের (৬ জুলাই, ২০২৫) বৈঠকের দিকে। ওপেক+ আগস্টে প্রতিদিন কমপক্ষে ৪১১,০০০ ব্যারেল উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে বলে জানা গেছে। এই সিদ্ধান্ত তেলের বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করেছে, যা মূল্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অ্যাগেইন ক্যাপিটালের জন কিলডাফ বলেন, “ওপেক+ এখন যা করবে, তা আগামী কয়েক মাসের জন্য তেলের বাজারের প্রধান চালিকাশক্তি হবে। বাজারে এখনই অতিরিক্ত সরবরাহ নেই, তবে এই বৃদ্ধি বাজারকে অতিরিক্ত সরবরাহের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা মূল্যের জন্য বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।”
মার্কিন বেঞ্চমার্ক ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) ক্রুড তেলের মূল্য ০.৮% হ্রাস পেয়ে ব্যারেল প্রতি ৬৫.০২ ডলারে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, ব্রেন্ট ক্রুড তেলের মূল্য ০.২% কমে ব্যারেল প্রতি ৬৬.৬৮ ডলারে স্থির হয়েছে। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ডব্লিউটিআই ৮.৯% এবং ব্রেন্ট ৯.৫% হ্রাস পেয়েছে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির কারণে তেলের বাজারে ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি কমে গেছে, যা গত ১৩ জুন ইসরায়েলের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণের পর তেলের মূল্যে যে অতিরিক্ত প্রিমিয়াম যুক্ত হয়েছিল, তা কমিয়ে দিয়েছে।
এছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার মধ্যে বাণিজ্য আলোচনা পুনরায় শুরু হওয়ায় ডব্লিউটিআই তেলের মূল্য আরও চাপের মুখে পড়েছে। গত সপ্তাহে কানাডার সঙ্গে শুল্ক সংক্রান্ত উত্তেজনার কারণে মার্কিন বাজারে কানাডার তেল সরবরাহের পরিমাণ বা মূল্যের উপর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা ছিল, যা ডব্লিউটিআই-এর মূল্যকে সমর্থন দিয়েছিল। কিলডাফের মতে, “শুল্ক বিতর্কের কারণে কানাডার তেল সরবরাহে ঘাটতি বা মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা ছিল, যা মার্কিন বাজারে ডব্লিউটিআই-এর তুলনায় ব্রেন্টের তুলনামূলক শক্তি বাড়িয়েছিল।” তবে, বাণিজ্য আলোচনার পুনরায় শুরু হওয়ায় এই সমর্থন কমে গেছে, এবং ডব্লিউটিআই-এর মূল্য আরও হ্রাস পেয়েছে।
ওপেক+ এর উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা তেলের বাজারে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। গত এপ্রিলে ওপেক+ মে মাসে ৪১১,০০০ ব্যারেল প্রতিদিন উৎপাদন বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছিল, এবং জুলাই ও আগস্টে আরও অনুরূপ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে। এই বৃদ্ধি বিশ্ব বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়িয়ে মূল্যের উপর নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি করতে পারে। এদিকে, মার্কিন তেলের ইনভেন্টরি সীমিত থাকলেও, চাহিদার তুলনায় সরবরাহের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ওপেক+-এর এই পদক্ষেপ গুরুত্বপূর্ণ। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করেন, যদি সরবরাহ অতিরিক্ত বেড়ে যায়, তবে তেলের মূল্য আরও কমতে পারে।
ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি তেলের বাজারে স্থিতিশীলতা এনেছে। গত ১৩ জুন ইসরায়েলের ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় আক্রমণের পর তেলের মূল্য পাঁচ মাসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছিল। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর তেলের মূল্যে উল্লেখযোগ্য হ্রাস দেখা গেছে। বাজার এখন এই যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব পর্যবেক্ষণ করছে, কারণ এর ভঙ্গুরতা তেলের মূল্যে নতুন ঝুঁকি যোগ করতে পারে।
মার্কিন অর্থনীতির তথ্যও তেলের মূল্যের উপর প্রভাব ফেলছে। গত সপ্তাহে প্রকাশিত মার্কিন ভোক্তা আস্থা সূচক অপ্রত্যাশিতভাবে হ্রাস পেয়েছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং তেলের চাহিদা কমার আশঙ্কা তৈরি করেছে। ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা তেলের চাহিদা বাড়াতে পারে, তবে বর্তমানে বাজার এই বিষয়ে সতর্ক রয়েছে।
তেলের ফিউচার মূল্যে সাম্প্রতিক হ্রাস ওপেক+-এর উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা, ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি এবং মার্কিন-কানাডা বাণিজ্য আলোচনার পুনরায় শুরুর প্রভাবে ঘটেছে। বাজার এখন ওপেক+-এর সিদ্ধান্ত এবং ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার উপর নির্ভর করছে। যদি যুদ্ধবিরতি অটুট থাকে এবং ওপেক+ উৎপাদন বাড়ায়, তবে তেলের মূল্য আরও কমতে পারে। তবে, যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ হলে বা সরবরাহে বাধা সৃষ্টি হলে মূল্য আবার বাড়তে পারে। বিনিয়োগকারীরা এখন এই গতিশীল পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন।