রিটেইল অ্যালগো ট্রেডিং মনিটর করতে ফ্রেমওয়ার্ক গড়ল NSE

ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE) অ্যালগোরিদমিক ট্রেডিং সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছে। অ্যালগো প্রোভাইডারদের এমপ্যানেলমেন্ট এবং রিটেইল অ্যালগো স্ট্র্যাটেজি নিবন্ধনের জন্য বিস্তারিত অপারেশনাল গাইডলাইন প্রকাশ করেছে…

NSE

ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE) অ্যালগোরিদমিক ট্রেডিং সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছে। অ্যালগো প্রোভাইডারদের এমপ্যানেলমেন্ট এবং রিটেইল অ্যালগো স্ট্র্যাটেজি নিবন্ধনের জন্য বিস্তারিত অপারেশনাল গাইডলাইন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। এই নির্দেশিকাগুলি ১ আগস্ট, ২০২৫ থেকে কার্যকর হবে। লক্ষ্য – অ্যালগো ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে রিটেইল বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নিরাপদ এবং স্বচ্ছ ইকোসিস্টেম গঠন।

বাধ্যতামূলক অ্যালগো স্ট্র্যাটেজি রেজিস্ট্রেশন এবং ইউনিক আইডি:
NSE-এর ২২ জুলাইয়ের সার্কুলারে বলা হয়েছে, এখন থেকে প্রত্যেকটি অ্যালগোরিদমিক ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজিকে বাধ্যতামূলকভাবে রেজিস্টার করতে হবে এবং প্রতিটি অ্যালগোর একটি ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (অ্যালগো আইডি) প্রদান করা হবে। এই অ্যালগো আইডির মাধ্যমে এক্সচেঞ্জ ‘Client Direct API’-এর মাধ্যমে প্লেস হওয়া অর্ডারগুলিকে আলাদা করে শনাক্ত করতে পারবে।

   

অ্যালগো প্রোভাইডারদের এমপ্যানেলমেন্ট বাধ্যতামূলক:
অ্যালগো রেজিস্ট্রেশনের আগে সংশ্লিষ্ট অ্যালগো প্রোভাইডারকে NSE-এর সঙ্গে এমপ্যানেল্ড হতে হবে। শুধুমাত্র একটি ট্রেডিং মেম্বারের মাধ্যমে আবেদন জমা দেওয়া যাবে, এবং সেই মেম্বারই NSE-এর কাছে নির্দিষ্ট অ্যালগোর ইউনিক আইডির জন্য আবেদন করবে।

এই নির্দেশনার আওতায় সব ধরণের অ্যালগো— তা ইন-হাউস হোক বা এমপ্যানেল্ড ভেন্ডর অথবা এক্সটারনাল প্রোভাইডার— রেজিস্ট্রেশনের জন্য ট্রেডিং মেম্বারই দায়ী থাকবে।

ক্লায়েন্ট ডাইরেক্ট API: রিটেইল ট্রেডারদের জন্য নতুন সুযোগ:
রিটেইল ক্লায়েন্টদের জন্য ‘Client Direct API’ নামে নতুন একটি ক্যাটেগরি চালু করছে NSE, যার মাধ্যমে অ্যালগো এক্সেস দেওয়া যাবে। এই API ব্যবহার করে যারা ট্রেড করবেন, প্রত্যেকটি অ্যালগোর স্ট্র্যাটেজি রেজিস্টার করতে হবে এবং এক্সচেঞ্জ থেকে অ্যালগো আইডি সংগ্রহ করতে হবে।

সেইসঙ্গে, API ব্যবহারকারীদের PAN এবং ইউনিক ক্লায়েন্ট কোড (UCC) ডেটা UCI পোর্টালে আপলোড করতে হবে ট্রেডিং মেম্বারদের।

ট্রেডিং মেম্বারদের দায়িত্ব ও ঝুঁকি:
NSE স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে, API-র মাধ্যমে অথবা অ্যালগো প্রোভাইডারের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্লেস হওয়া সব অর্ডারের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্রোকার বা ট্রেডিং মেম্বার সম্পূর্ণ দায়িত্বশীল থাকবে। ক্লায়েন্টরা API বা অ্যালগো ব্যবহারের যোগ্য কি না, তা নিশ্চিত করার দায়িত্বও তাদের।

Advertisements

API ব্যবহারে যদি কোনো ঝুঁকি বা অনিয়ম ঘটে, তার দায় ব্রোকারদের কাঁধেই বর্তাবে। ফলে প্রযুক্তিগত কাঠামো আরও শক্তিশালী করা এবং রিয়েল টাইম মনিটরিং সিস্টেম গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা বেড়েছে।

পর্যাপ্ত মনিটরিং ও থ্রেশহোল্ড সুরক্ষা ব্যবস্থা:
ট্রেডিং মেম্বারদের অবশ্যই নির্ধারিত অর্ডার থ্রেশহোল্ডের মধ্যে ক্লায়েন্টদের অর্ডার রাখতে হবে এবং প্রতিটি অর্ডারে সঠিকভাবে অ্যালগো আইডি ট্যাগ করতে হবে। এতে সম্ভাব্য অনিয়ম দ্রুত শনাক্ত করা সহজ হবে।

স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে NSE-এর পদক্ষেপ:
এনএসই জানিয়েছে যে, সমস্ত রেজিস্টার্ড এবং এমপ্যানেল্ড অ্যালগো প্রোভাইডারদের একটি পাবলিক লিস্ট এক্সচেঞ্জের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এটি রিটেইল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সচেতনতা এবং আস্থা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

প্রযুক্তিগত দিক ও ভবিষ্যতের ইঙ্গিত:
অ্যালগোরিদমিক ট্রেডিং দীর্ঘদিন ধরেই প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে জনপ্রিয়। তবে সম্প্রতি রিটেইল বিনিয়োগকারীদের মধ্যেও এর চাহিদা বেড়েছে। প্রযুক্তির প্রসার এবং অ্যাক্সেসিবিলিটির কারণে এখন অনেক রিটেইল ট্রেডারই কাস্টমাইজড অ্যালগো স্ট্র্যাটেজি তৈরি করছেন বা ব্যবহার করছেন। এ অবস্থায় NSE-এর এই পদক্ষেপ রিটেইল সেগমেন্টে অনিয়ন্ত্রিত ও ঝুঁকিপূর্ণ ট্রেডিং কমাতে সাহায্য করবে।

অ্যালগোর স্ট্র্যাটেজিগুলিকে রেজিস্টার করা, তাদের যাচাই করা, ক্লায়েন্টদের যোগ্যতা নিশ্চিত করা এবং ট্রেড মনিটরিং— এই চারটি স্তরে শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই ভারতীয় শেয়ার বাজারে অ্যালগোর ব্যবহার নিরাপদ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

NSE-এর এই নতুন নির্দেশিকাগুলি রিটেইল অ্যালগো ট্রেডিংয়ে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা করছে। এটি একদিকে যেমন বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেবে, তেমনই অ্যালগো প্রোভাইডারদের জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ডাইজড ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করবে। এভাবেই ভারতে অ্যালগোর বাজার আরও পরিণত, স্বচ্ছ এবং নিরাপদ হয়ে উঠবে— এমনটাই প্রত্যাশা।