পহেলগাঁও হামলায় শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পরিবার পিছু কোটি টাকা সাহায্যের ঘোষণা NSE-র

Pahalgam Terror Attack : জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ ২২ এপ্রিল, ২০২৫-এ সংঘটিত মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এই ঘটনা…

nse-pledges-one-crore-per-family-for-pahalgam-terror-attack-martyrs

Pahalgam Terror Attack : জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁও-এ ২২ এপ্রিল, ২০২৫-এ সংঘটিত মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে, যাদের অধিকাংশই ছিলেন পর্যটক। এই ঘটনা গোটা দেশে শোকের ছায়া ফেলেছে এবং অঞ্চলটির নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই দুঃখজনক পরিস্থিতিতে ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE) এক হৃদয়গ্রাহী উদ্যোগের মাধ্যমে হামলায় নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

NSE ঘোষণা করেছে, তারা নিহতদের নিকটাত্মীয়দের জন্য ১ কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য প্রদান করবে। NSE-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (এমডি ও সিইও) আশীষকুমার চৌহান এই উদ্যোগের কথা সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা করেছেন। তিনি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করে বলেছেন, “এই কঠিন সময়ে আমরা নিহতদের পরিবারের পাশে রয়েছি। একটি বিনীত অঙ্গভঙ্গি হিসেবে, NSE নিহতদের নিকটাত্মীয়দের জন্য ১ কোটি টাকার সাহায্য প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।”

   

এই ঘোষণা দেশব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে শিল্পপতিরা NSE-এর এই দ্রুত এবং সহানুভূতিশীল পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। একজন এক্স ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন, “এটি শুধু আর্থিক সাহায্য নয়, এটি একটি বৃহত্তর বার্তা প্রদান করে। এনএসই এবং আপনাকে ধন্যবাদ।” আরেকজন এই পদক্ষেপকে জাতীয় শোকের সময়ে কর্পোরেট সহানুভূতির একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই সাহায্য কেবল আর্থিক সহায়তা নয়, বরং দুর্যোগের মুখে দেশের ঐক্য ও স্থিতিস্থাপকতার একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে।

হামলার প্রেক্ষাপট এবং জাতীয় প্রতিক্রিয়া:

২২ এপ্রিল পহেলগাঁও-এর বাইসারান মেডোতে সন্ত্রাসীরা নির্বিচারে গুলি চালায়, যার ফলে ২৫ জন ভারতীয় এবং একজন নেপালি নাগরিকের মৃত্যু হয়। এই হামলা ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর কাশ্মীর উপত্যকায় বেসামরিক নাগরিকদের উপর সবচেয়ে মারাত্মক হামলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তান-ভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট, যা নিষিদ্ধ লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা। এই ঘটনা জম্মু ও কাশ্মীরে সদ্য সম্পন্ন নির্বাচন এবং অঞ্চলটির অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে উদ্বেগজনক।

হামলার পর ভারত সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ক্যাবিনেট কমিটি অন সিকিউরিটি (সিসিএস) বৈঠকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কয়েকটি কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত ইন্দুস ওয়াটার ট্রিটি (ইন্দু নদী চুক্তি) স্থগিত করা, যা তিনটি যুদ্ধের মধ্যেও অক্ষুণ্ণ ছিল। এই চুক্তি স্থগিত থাকবে যতক্ষণ না পাকিস্তান সীমান্ত-পার সন্ত্রাসবাদের সমর্থন বন্ধ করে। এছাড়া, অটারি-ওয়াঘা সীমান্তে অবস্থিত ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট (আইসিপি) অবিলম্বে বন্ধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র বৈধ অনুমোদনপ্রাপ্ত পাকিস্তানি নাগরিকদের ১ মে, ২০২৫ পর্যন্ত এই পথে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।

এছাড়াও, পাকিস্তানি নাগরিকদের জন্য সার্ক ভিসা এক্সেম্পশন স্কিম (এসভিইএস) বাতিল করা হয়েছে। পূর্বে জারি করা এই ভিসাগুলি অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে, এবং ভারতে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভারত আরও ঘোষণা করেছে যে নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তানি হাইকমিশনের প্রতিরক্ষা, নৌ ও বিমান উপদেষ্টাদের ‘পার্সোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করা হয়েছে, এবং তাঁদের এক সপ্তাহের মধ্যে ভারত ছাড়তে হবে। একইভাবে, ভারত ইসলামাবাদে অবস্থিত নিজেদের হাইকমিশন থেকে সমতুল্য উপদেষ্টাদের প্রত্যাহার করবে।

Advertisements

NSE-এর উদ্যোগ ও সমাজের প্রতিক্রিয়া:

NSE-এর এই আর্থিক সাহায্য কেবল নিহতদের পরিবারের জন্য একটি তাৎক্ষণিক স্বস্তি নয়, বরং এটি জাতীয় ঐক্যের একটি শক্তিশালী প্রতীক। আশীষ চৌহানের এই ঘোষণা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। একজন নাগরিক এক্স-এ লিখেছেন, “এটি একটি মহৎ উদ্যোগ। এনএসই দেখিয়েছে যে কর্পোরেট সংস্থাগুলোও জাতীয় দুর্যোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।” এই পদক্ষেপকে অনেকে দেশের কর্পোরেট খাতের সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন।

NSE ছাড়াও অন্যান্য সংস্থা ও ব্যক্তিত্বরা এই হামলার শিকারদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি ঘোষণা করেছেন, আহতদের জন্য মুম্বাইয়ের রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন স্যার এইচএন হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া, লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এলআইসি) নিহতদের পরিবারের জন্য দাবি নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া সহজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

জাতীয় সংহতি ও প্রতিবাদ:

পহেলগাঁও হামলার প্রতিবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংহতি প্রকাশ করা হয়েছে। দিল্লির ব্যবসায়ী সম্প্রদায় ২৫ এপ্রিল শুক্রবার বাজার বন্ধের ডাক দিয়েছে এবং কনট প্লেসে মোমবাতি মিছিলের আয়োজন করেছে। কনফেডারেশন অফ অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্স (সিএআইটি) জানিয়েছে, এই বন্ধে ১০০টিরও বেশি বাজার অংশ নেবে। শ্রীনগরের ডাল লেকে শিকারা মালিকরা হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন। এই ঘটনায় বলিউড সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শোক ও নিন্দা প্রকাশ করেছেন।

পহেলগাঁও-এর সন্ত্রাসী হামলা ভারতের জন্য একটি গভীর শোকের মুহূর্ত। তবে, NSE-এর মতো প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ এবং জাতীয় সংহতির প্রকাশ এই দুঃখের মধ্যেও আশার আলো জাগায়। আশীষকুমার চৌহানের নেতৃত্বে NSE-এর ১ কোটি টাকার সাহায্য প্রতিশ্রুতি কেবল আর্থিক সহায়তা নয়, বরং জাতির ঐক্য ও সহানুভূতির প্রতীক।

সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের সংহতি প্রমাণ করে যে ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত। এই কঠিন সময়ে, দেশবাসীকে একযোগে দাঁড়িয়ে নিহতদের পরিবারের পাশে থাকতে হবে এবং কাশ্মীরের শান্তি ও সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে অবদান রাখতে হবে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News