দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকা ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জ (NSE)-এর আইপিও (IPO) অবশেষে আলো দেখতে পারে। সম্প্রতি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, NSE এবং সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI)-র মধ্যে বহু প্রতীক্ষিত সহবাস মামলা (co-location case) নিষ্পত্তির জন্য আলোচনার নতুন দফা শুরু হয়েছে। এই খবরে অপর তালিকাভুক্ত বাজারে NSE-র শেয়ারের দাম রেকর্ড সর্বোচ্চ ২,৩০০ টাকা ছুঁয়েছে।
এই মূল্যবৃদ্ধির ফলে NSE-র আনুমানিক বাজার মূলধন (market capitalisation) দাঁড়িয়েছে প্রায় ₹৫.৬৯ লক্ষ কোটি টাকা। এটি NSE-র ইতিহাসে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন ওয়েলথ উইজডম ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড-এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কৃষ্ণ পাতওয়ারি।
কী এই সহবাস মামলা?
সহবাস মামলা এক ধরনের বাজার-অসাম্য সংক্রান্ত অভিযোগ। এতে বলা হয়েছে, NSE-র কিছু ব্রোকার তাদের সার্ভার স্টক এক্সচেঞ্জের সার্ভারের নিকটে বসিয়ে ফেলেছিল, যা তাদেরকে দ্রুত ট্রেডিং তথ্য পাওয়ার সুবিধা দেয়। এর ফলে তারা অন্য ব্রোকারদের তুলনায় বাজারে বাড়তি সুবিধা পেয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে।
২০১৯ সালে SEBI এই মামলায় NSE-র বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং মোটা অঙ্কের জরিমানা ধার্য করে। NSE এই রায় চ্যালেঞ্জ করে সিকিউরিটিজ আপিলেট ট্রাইব্যুনাল (SAT)-এর দ্বারস্থ হয়। SAT তুলনামূলকভাবে হালকা সাজা দেয়, কিন্তু SEBI সেটিকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যায়। বর্তমানে এই মামলা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন।
আলোচনার নতুন দিগন্ত
MoneyControl-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, NSE ও SEBI-এর মধ্যে আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে প্রায় দেড় মাস আগে। দুই পক্ষই একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করছে, যার মাধ্যমে এই দীর্ঘসূত্রিতার অবসান ঘটানো সম্ভব হতে পারে। সূত্রের খবর, SEBI এই নিষ্পত্তির জন্য ₹৬৪৩ কোটির TAP মামলার দ্বিগুণ অর্থ দাবি করতে পারে।
তবে ইতিমধ্যেই SAT-এর রায় NSE-র পক্ষে থাকায়, তারা উচ্চ পরিমাণের জরিমানায় সম্মতি দিতে দ্বিধা প্রকাশ করছে। এর ফলে আলোচনায় কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে।
বিনিয়োগকারীদের আশার আলো
এই ঘটনাপ্রবাহ NSE-র প্রস্তাবিত আইপিও-র ক্ষেত্রে একটি বড় মোড় এনে দিয়েছে। বহু বছর ধরেই NSE-র আইপিও রেগুলেটরি জটিলতার কারণে ঝুলে আছে। সম্প্রতি NSE একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা গত ৩০ মাসে অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে এই বিষয় নিয়ে কোনো যোগাযোগ করেনি। তবে SEBI-এর সদ্য গৃহীত ইতিবাচক মনোভাবকে বাজারে একটি আশাব্যঞ্জক ইঙ্গিত হিসেবেই দেখছে বিশ্লেষক মহল।
কৃষ্ণ পাতওয়ারি বলেন, “SEBI-এর এই পরিবর্তিত মনোভাব একটি বড় অগ্রগতি। NSE-ও তাদের পুরনো ইস্যুগুলি নিষ্পত্তির জন্য বড় অঙ্কের অর্থ প্রদানে প্রস্তুত, যা তাদের সদিচ্ছার প্রতিফলন। নতুন চেয়ারম্যানের অধীনে SEBI-এর এই সহযোগিতামূলক অবস্থান বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেকটাই বাড়িয়ে তুলেছে।”
তিনি আরও বলেন, “NSE-র শেয়ারের দাম অপর তালিকাভুক্ত বাজারে ২,৩০০ টাকায় পৌঁছেছে, যা স্পষ্টভাবে বিনিয়োগকারীদের আশাবাদের প্রতিফলন। এটি বোঝায় যে NSE-র আইপিও বাস্তবায়নের সম্ভাবনা এখন অনেকটাই বেশি।”
আইপিও-এর ভবিষ্যৎ
NSE-র আইপিও দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের বৃহত্তম এবং বহুল প্রত্যাশিত পাবলিক ইস্যুগুলির একটি। NSE নিজেই দেশীয় ক্যাপিটাল মার্কেটের মেরুদণ্ড, এবং এর তালিকাভুক্তি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করবে।
যদিও এখনো সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় আসেনি, তবে SEBI এবং NSE-এর মধ্যে আলোচনার এই অগ্রগতি ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক দিশা তৈরি করছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, একবার এই মামলা নিষ্পত্তি হলে NSE-র আইপিও রাস্তায় কোনও বড় বাধা থাকবে না।
একদিকে SEBI-এর পরিবর্তিত দৃষ্টিভঙ্গি, অন্যদিকে NSE-র সক্রিয় পদক্ষেপ — এই দুইয়ের মিলনে দেশের সবচেয়ে বড় স্টক এক্সচেঞ্জের আইপিও অবশেষে বাস্তবে রূপ নিতে পারে। শেয়ারহোল্ডার ও বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটাতে পারে এই সমঝোতা। এখন দেখার বিষয়, দুই পক্ষের মধ্যে আর্থিক নিষ্পত্তি কত দ্রুত এবং কী শর্তে সম্পন্ন হয়, এবং তা NSE-র আইপিও সূচনার ক্ষেত্রে কী প্রভাব ফেলে।