ভারতের ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম (NPS) এখন বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় অবসরকালীন বিনিয়োগ পরিকল্পনা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে PFRDA আয়োজিত ‘NPS দিবস সম্মেলন’-এ অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানালেন, এনপিএসের ইক্যুইটি স্কিম শুরু থেকে প্রতি বছর গড়ে ১৩ শতাংশের বেশি রিটার্ন দিয়েছে। অন্যদিকে কর্পোরেট ঋণ ও সরকারি সিকিউরিটিজ স্কিমও দীর্ঘমেয়াদে গড়ে প্রায় ৯ শতাংশ বার্ষিক মুনাফা দিয়েছে।
অর্থমন্ত্রীর কথায়, “এনপিএসের বিভিন্ন স্কিম ধারাবাহিকভাবে আকর্ষণীয় রিটার্ন দিচ্ছে। ইক্যুইটি স্কিমে গড়ে ১৩% এর বেশি এবং কর্পোরেট ঋণ ও সরকারি বন্ডে প্রায় ৯% রিটার্ন মেলে। এই শক্তিশালী রিটার্ন, কম খরচ, পোর্টেবিলিটি ও ফ্লেক্সিবিলিটির কারণে এনপিএস আজ অবসরকালীন সুরক্ষার এক মূল স্তম্ভ।”
২০০৪ থেকে আজ পর্যন্ত: এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন:
২০০৪ সালে তৎকালীন এনডিএ সরকার এনপিএস চালু করে। এর মাধ্যমে ভারতীয় পেনশন ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসে। আগের ডিফাইন্ড বেনিফিট (DB) মডেলের জায়গায় ডিফাইন্ড কন্ট্রিবিউশন (DC) মডেল চালু হয়, যা দীর্ঘমেয়াদে আরও টেকসই। প্রথমে শুধুমাত্র সরকারি কর্মচারীদের জন্য শুরু হলেও, আজ এটি সাধারণ নাগরিক, বেসরকারি কর্মী থেকে শুরু করে স্বনিযুক্ত পেশাজীবী সবার জন্য উন্মুক্ত।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “এনপিএস অবসর পরিকল্পনাকে সরকারি কর্মীদের বিশেষ সুবিধা থেকে বের করে এনে সর্বজনীন করে তুলেছে। এটি বিশ্বের অন্যতম সস্তা ও কার্যকর পেনশন ফান্ড ম্যানেজমেন্ট স্কিম। কম খরচের কারণে বিনিয়োগকারীর টাকার বড় অংশ বাজারে থেকে যায় এবং দীর্ঘমেয়াদে চক্রবৃদ্ধি হারে বৃদ্ধি পায়।”
সহজ ও নমনীয় সুবিধা: NPS equity returns 13 percent average
এনপিএস অ্যাকাউন্ট চালু রাখতে বছরে ন্যূনতম মাত্র ১,০০০ টাকা জমা দিলেই চলে। মাসিক কিস্তি বাধ্যতামূলক নয়। ফলে অনানুষ্ঠানিক বা গিগ অর্থনীতির কর্মীরাও সহজে যোগ দিতে পারেন।
অর্থমন্ত্রী জানান, চাকরি বদল, শহর পরিবর্তন বা স্বনিযুক্ত পেশায় গেলেও একই পেনশন অ্যাকাউন্ট চালু রাখা যায়। এতে সাধারণ মানুষের জন্য ঝামেলাহীন অবসর পরিকল্পনা সম্ভব হয়েছে।
প্রযুক্তিগত উন্নয়ন:
২০২৪ সালে এনপিএস প্ল্যাটফর্মে ডাইরেক্ট রেমিট (D-Remit) সুবিধা আরও উন্নত করা হয়। এর ফলে জমাকৃত অর্থ একই দিনে Net Asset Value (NAV) অনুযায়ী হিসাব হয়। দ্রুত পরিবর্তনশীল বাজারে এই সুবিধা বিনিয়োগকারীদের সম্ভাব্য মুনাফা হারানো থেকে রক্ষা করে।
অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, “বাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকলে প্রসেসিং বিলম্বের কারণে রিটার্ন হাতছাড়া হওয়ার ঝুঁকি এখন আর নেই।”
বিকশিত ভারতের স্বপ্নে পেনশনের ভূমিকা:
অর্থমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে উন্নত দেশে পরিণত করার স্বপ্নে নিরাপদ অবসরভাতা অপরিহার্য। পেনশন শুধু প্রবীণদের আর্থিক সুরক্ষাই দেয় না, এটি পরিবারকে শক্তিশালী করে, কর্মক্ষম প্রজন্মের উপর চাপ কমায় এবং জাতীয় অগ্রাধিকারে দীর্ঘমেয়াদী সঞ্চয় বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করে।
তিনি বলেন, “বিকশিত ভারত @ ২০৪৭ অভিযাত্রায় প্রতিটি নাগরিক বার্ধক্যে আর্থিক মর্যাদা কল্পনা করতে পারবেন। পেনশন প্রবীণদের মর্যাদার সুরক্ষা দেয়, পরিবারকে শক্ত করে এবং অর্থনীতিতে স্থায়ী বিনিয়োগ যোগায়।”
এভাবে এনপিএস শুধু একটি অবসর পরিকল্পনা নয়, বরং ভারতের ভবিষ্যৎ আর্থিক নিরাপত্তার অন্যতম স্তম্ভে পরিণত হচ্ছে।