NPCI New UPI Rule: ভারতের ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (এনপিসিআই) ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (ইউপিআই) লেনদেনে ভুল ব্যক্তির কাছে অর্থ প্রেরণের সমস্যা সমাধানের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নতুন একটি নির্দেশিকা জারি করে এনপিসিআই ব্যবহারকারীদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি নতুন বৈশিষ্ট্য চালু করেছে। এই নিয়ম অনুযায়ী, গুগল পে, ফোনপে, পেটিএম, ভীম-সহ সকল ইউপিআই অ্যাপকে লেনদেনের আগে প্রি-ট্রানজেকশন বিবরণ পৃষ্ঠায় শুধুমাত্র অর্থ গ্রহণকারীর প্রকৃত নাম প্রদর্শন করতে হবে। এই নামটি অবশ্যই একটি বিশ্বস্ত উৎস থেকে, অর্থাৎ ব্যাঙ্কের রেকর্ডে থাকা Perspective API থেকে প্রাপ্ত নাম হতে হবে। কিউআর কোড বা প্রেরকের দ্বারা প্রবেশ করানো কোনও অন্য নাম অ্যাপে প্রদর্শিত হবে না। এই ব্যবস্থা ব্যবহারকারীদের বিভ্রান্তি এড়াতে এবং সঠিক ব্যক্তির কাছে অর্থ প্রেরণ নিশ্চিত করতে সাহায্য করবে।
নতুন নিয়মের বিবরণ
নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, ইউপিআই অ্যাপগুলোতে ব্যবহারকারীদের অর্থ প্রেরণের সময় গ্রহণকারীর নাম পরিবর্তন করার কোনও বিকল্প থাকবে না। এর পরিবর্তে, অ্যাপটি শুধুমাত্র ব্যাঙ্কের রেকর্ডে থাকা গ্রহণকারীর প্রকৃত নাম প্রদর্শন করবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনার ফোনের পরিচিতি তালিকায় কোনও নাম ভিন্নভাবে সংরক্ষিত থাকলেও, লেনদেনের সময় আপনি ব্যাঙ্কে নথিভুক্ত নামটিই দেখতে পাবেন। এই বৈশিষ্ট্যটি নিশ্চিত করবে যে, অর্থ প্রেরণের পূর্বে ব্যবহারকারী সঠিক ব্যক্তির কাছে অর্থ পাঠাচ্ছেন কিনা তা যাচাই করতে পারবেন।
এই নতুন নিয়মটি ২০২৫ সালের ৩০ জুন থেকে কার্যকর হবে এবং এটি পিয়ার-টু-পিয়ার (পি২পি) এবং পিয়ার-টু-পিয়ার মার্চেন্ট (পি২পিএম) উভয় ধরনের লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হল ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য প্রদান করা, তাদের অর্থের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা এবং লেনদেনে বিভ্রান্তি দূর করা। ভুল পরিচিতি নির্বাচনের কারণে অনলাইন পেমেন্টে ভুল হলে, লেনদেন প্রক্রিয়াকরণের আগেই ব্যবহারকারীদের সতর্ক করা হবে।
ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধা
এই নতুন বৈশিষ্ট্য গুগল পে, ফোনপে, পেটিএম এবং ভীম-এর মতো জনপ্রিয় ইউপিআই প্ল্যাটফর্মের লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারীদের জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা নিয়ে আসবে। ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থা গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং ইউপিআই দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পেমেন্ট পদ্ধতিগুলোর একটি হয়ে উঠেছে। ২০২৪ সালে, ইউপিআই লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ২০০ ট্রিলিয়ন টাকা ছাড়িয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে এই প্ল্যাটফর্মের গুরুত্ব তুলে ধরে। তবে, ভুল ব্যক্তির কাছে অর্থ প্রেরণের ঘটনা ব্যবহারকারীদের মধ্যে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই নতুন নিয়ম এই সমস্যার সমাধান করবে এবং ব্যবহারকারীদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করবে।
উদাহরণস্বরূপ, ধরুন আপনি আপনার ফোনের পরিচিতি তালিকায় কাউকে “মা” বা “ভাই” নামে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। পূর্বে, লেনদেনের সময় এই নামটিই প্রদর্শিত হতো, যা বিভ্রান্তির কারণ হতে পারত। এখন, আপনি ব্যাঙ্কে নথিভুক্ত প্রকৃত নামটি দেখতে পাবেন, যেমন “রাহুল সিং” বা “প্রিয়া শর্মা”। এটি আপনাকে লেনদেন নিশ্চিত করার আগে গ্রহণকারীর পরিচয় যাচাই করার সুযোগ দেবে।
শিল্পের প্রতিক্রিয়া এবং বাস্তবায়ন
ইউপিআই প্ল্যাটফর্মগুলো এই নতুন নিয়ম বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত প্রস্তুতি নিচ্ছে। ফোনপে-এর একজন মুখপাত্র বলেন, “এই পদক্ষেপ আমাদের ব্যবহারকারীদের জন্য লেনদেনের নিরাপত্তা এবং স্বচ্ছতা বাড়াবে। আমরা নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে এই বৈশিষ্ট্যটি সংহত করার জন্য কাজ করছি।” একইভাবে, পেটিএম জানিয়েছে, তারা এই নিয়মকে স্বাগত জানায় এবং এটি ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা উন্নত করবে। গুগল পে এবং ভীম-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোও এই পরিবর্তনের জন্য তাদের সিস্টেম আপডেট করছে।
শিল্প বিশেষজ্ঞরা এই পদক্ষেপকে ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করছেন। ফিনটেক বিশেষজ্ঞ রমেশ কুমার বলেন, “ইউপিআই লেনদেনে ভুল প্রেরণের ঘটনা ব্যবহারকারীদের আস্থা কমিয়ে দেয়। এই নতুন বৈশিষ্ট্যটি এই সমস্যার সমাধান করবে এবং ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করবে।” তিনি আরও বলেন, এই নিয়ম ব্যাঙ্ক এবং পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে সমন্বয় বাড়াবে।
চ্যালেঞ্জ এবং সমাধান
যদিও এই নতুন নিয়ম ব্যবহারকারীদের জন্য উপকারী, তবে এর বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে। প্রথমত, সকল ব্যাঙ্কের Validate Address API-এর সঙ্গে ইউপিআই অ্যাপগুলোর সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, ব্যবহারকারীদের এই নতুন ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতন করতে হবে, যাতে তারা প্রকৃত নাম প্রদর্শনের বিষয়ে বিভ্রান্ত না হন। এনপিসিআই ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্ক এবং পেমেন্ট প্ল্যাটফর্মগুলোর সঙ্গে কাজ করছে যাতে এই রূপান্তর মসৃণভাবে সম্পন্ন হয়।
এছাড়া, গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে ডিজিটাল সাক্ষরতা তুলনামূলকভাবে কম, ব্যবহারকারীদের এই পরিবর্তন সম্পর্কে শিক্ষিত করা প্রয়োজন। এনপিসিআই এবং ইউপিআই প্ল্যাটফর্মগুলো সামাজিক মাধ্যম এবং প্রচারাভিযানের মাধ্যমে এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
ভবিষ্যৎ প্রভাব
এই নতুন নিয়ম ইউপিআই লেনদেনের নির্ভরযোগ্যতা এবং নিরাপত্তা বাড়াবে, যা ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করবে। এটি ব্যবহারকারীদের মধ্যে আস্থা বৃদ্ধি করবে এবং ছোট ব্যবসায়ী থেকে বড় বণিক—সকলের জন্য ইউপিআই ব্যবহারকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলবে। দীর্ঘমেয়াদে, এই পদক্ষেপ ভারতের ক্যাশলেস লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এনপিসিআই-এর নতুন ইউপিআই নিয়ম গুগল পে, ফোনপে, পেটিএম এবং ভীম ব্যবহারকারীদের জন্য একটি গেম-চেঞ্জার হতে চলেছে। গ্রহণকারীর প্রকৃত নাম প্রদর্শনের মাধ্যমে, এই বৈশিষ্ট্য ভুল লেনদেনের ঝুঁকি হ্রাস করবে এবং ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। ২০২৫ সালের ৩০ জুন থেকে কার্যকর এই নিয়ম ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট ল্যান্ডস্কেপে একটি নতুন মান স্থাপন করবে। ব্যবহারকারীদের উচিত এই পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং নিরাপদ ও স্বচ্ছ লেনদেনের সুবিধা গ্রহণ করা।