আয়কর রিটার্ন ফাইলিং ও সরাসরি ভর্তুকি প্রদানে স্বচ্ছতা ও গতি আনতে বড় পদক্ষেপ নিল ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (NPCI)। এক নতুন সার্কুলারে তারা সমস্ত সদস্য ব্যাঙ্ককে নির্দেশ দিয়েছে যে, আয়কর দফতরের ই-ফাইলিং পোর্টালের সঙ্গে রিয়েল-টাইম প্যান ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যাচাইয়ের ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
এই ব্যবস্থার মাধ্যমে এখন থেকে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিভিন্ন সরকারি দফতরগুলি একটি নির্দিষ্ট এপিআই (API) ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য—যেমন প্যান স্ট্যাটাস, অ্যাকাউন্ট ভ্যালিডেশন এবং অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম—সরাসরি সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের কোর ব্যাঙ্কিং সিস্টেম (CBS) থেকে যাচাই করতে পারবে।
কী বলেছে এনপিসিআই?
এনপিসিআই এক নির্দেশিকায় জানিয়েছে, “এই এপিআইটি ব্যবহার করে সরকারি দফতরগুলি গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট সম্পর্কিত তথ্য যাচাই করতে পারবে, যেমন—প্যান যাচাই, অ্যাকাউন্ট স্ট্যাটাস যাচাই, এবং অ্যাকাউন্ট হোল্ডারের নাম যাচাই। এসব তথ্য সরাসরি ব্যাঙ্কের কোর ব্যাঙ্কিং সিস্টেম থেকে পাওয়া যাবে, ফলে প্রক্রিয়ায় গতি ও নির্ভরযোগ্যতা বাড়বে।”
এছাড়া এনপিসিআই স্পষ্ট জানিয়েছে যে, যেহেতু এটি সরকারের জন্য চালু করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সেবা, তাই সদস্য ব্যাঙ্কগুলিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে এটি বাস্তবায়নের ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাস্তবায়নে তৎপরতা চায় এনপিসিআই:
সদস্য ব্যাঙ্কগুলির কাছে বার্তা দিয়ে এনপিসিআই বলেছে, “এটি যেহেতু ভারত সরকারের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেবা, তাই সমস্ত সদস্য ব্যাঙ্ককে দ্রুততার সঙ্গে এই এপিআই ইন্টিগ্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।”
এছাড়া, ব্যাঙ্কগুলিকে কারিগরি স্পেসিফিকেশন ও গাইডলাইন শীঘ্রই আলাদা করে পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছে তারা। যাতে ব্যাঙ্কগুলি তাদের সিস্টেমকে দ্রুত প্রয়োজনীয় আপগ্রেড করতে পারে।
এই সার্কুলারটি ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে শেয়ার করা যাবে, যাতে সমস্ত স্টেকহোল্ডার এই পরিবর্তন সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকে।
পরিবর্তনের প্রভাব:
এই নতুন ব্যবস্থা চালু হলে করদাতাদের আয়কর ফেরতের প্রক্রিয়া আরও দ্রুত এবং নির্ভুল হবে। কারণ, আগের মতো আর ম্যানুয়াল যাচাইয়ের অপেক্ষা করতে হবে না, বা ভুল তথ্যের কারণে ফেরতের বিলম্ব ঘটবে না।
তদুপরি, ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (DBT), পিএম কিষাণ যোজনার মত বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের অর্থ হস্তান্তর এখন আরও স্বচ্ছ ও কার্যকর হবে। কারণ প্যান এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত বিভ্রান্তি একেবারে দূর করা যাবে এই বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
আরও বড় লক্ষ্যের পথে এক ধাপ:
এই পদক্ষেপটি সরকারের সামগ্রিক ডিজিটাল গভর্নেন্স ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ক্ষেত্রে এপিআই-নির্ভর তথ্য বিনিময়কে উৎসাহিত করছে যাতে পরিষেবা আরও দ্রুত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হয়।
এই নতুন ব্যবস্থায় ই-গভর্নেন্স প্রকল্পগুলি আরও মসৃণভাবে কাজ করবে। যেমন—প্যান ও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক না হওয়ার কারণে যেসব মানুষ সরকারী ভর্তুকি পান না বা ভুল অ্যাকাউন্টে চলে যায়, সেই সমস্যাগুলি অনেকাংশে কমবে।
প্রশ্ন থাকলে কোথায় জানাবেন?
যেকোনো কারিগরি বা বাস্তবায়ন সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর পেতে ব্যাঙ্কগুলিকে এনপিসিআই-র CRM ট্র্যাকার সিস্টেম ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা দ্রুত সহায়তা পাবে এবং সমস্যা দ্রুত সমাধান হবে।
ডিজিটাল ভারত গঠনের লক্ষ্য পূরণে এনপিসিআই-র এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। সরকারি ভর্তুকি, ট্যাক্স রিফান্ড, এবং অন্যান্য আর্থিক পরিষেবা এখন হবে আরও সহজ, দ্রুত ও নির্ভুল। পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও এর সুবিধা মিলবে সরাসরি। ব্যাঙ্কগুলির কাছে এটি এখন একটি উচ্চ অগ্রাধিকার সম্পন্ন কার্য—যা যত দ্রুত বাস্তবায়ন হবে, তত তাড়াতাড়ি দেশব্যাপী নাগরিকরা এর সুফল পাবেন।