ইউপিআই লেনদেনে বড় পরিবর্তন, NPCI ঘোষণা করল নতুন সীমা

ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (NPCI)। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সোমবার থেকে কার্যকর হতে চলেছে ইউপিআই…

UPI Goes Global: List of 8 Countries Accepting India’s Unified Payments Interface in 2025

ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (NPCI)। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, সোমবার থেকে কার্যকর হতে চলেছে ইউপিআই লেনদেনের নতুন নিয়ম। নতুন নিয়মে শুধু সাধারণ ব্যবহারকারীর সুবিধাই নয়, ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, বড় সংস্থা—সবার জন্যই উন্মুক্ত হলো উচ্চমূল্যের লেনদেনের সুযোগ।

কোন ক্ষেত্রে বাড়ছে সীমা?
এনপিসিআই-এর বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কিছু খাতের জন্য লেনদেনের সীমা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। যেমন— বীমা প্রিমিয়াম, ক্যাপিটাল মার্কেট বা বিনিয়োগ খাত, ক্রেডিট কার্ড বিল পরিশোধ, সরকারি ই-মার্কেটপ্লেস (GeM), ভ্রমণ খাত।
এই ক্ষেত্রগুলোতে প্রতি লেনদেনে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ইউপিআই-এর মাধ্যমে পরিশোধ করা যাবে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেন করার সুযোগ থাকবে।

   

ক্যাটেগরি অনুযায়ী নতুন সীমা:
১. ক্যাপিটাল মার্কেট, ইনশিওরেন্স, সরকারী ই-মার্কেটপ্লেস ও ট্রাভেল খাত – প্রতি লেনদেনে ৫ লাখ টাকা এবং প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা।
২. ক্রেডিট কার্ড বিল ও গয়না ক্রয় – প্রতি লেনদেনে ৫ লাখ টাকা, প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৬ লাখ টাকা।
৩. ব্যবসা ও মার্চেন্ট পেমেন্ট – প্রতি লেনদেনে ৫ লাখ টাকা, দৈনিক কোনও সীমা নেই।
৪. ডিজিটাল অ্যাকাউন্ট খোলা (e-KYC/অ্যাকাউন্ট ওপেনিং) – প্রতি লেনদেনে ৫ লাখ টাকা এবং প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা।

সাধারণ ইউপিআই লেনদেন অপরিবর্তিত:
তবে যাঁরা প্রতিদিন ব্যক্তি-থেকে-ব্যক্তি (P2P) অর্থাৎ সাধারণ ইউপিআই লেনদেন করেন, তাঁদের জন্য কোনও পরিবর্তন আসেনি। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা পর্যন্ত টাকা স্থানান্তর করার নিয়ম আগের মতোই বহাল থাকবে। এনপিসিআই জানিয়েছে, এই সীমা বজায় রাখা হচ্ছে যাতে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য নিরাপত্তা ও সুবিধার মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে।

কেন গুরুত্বপূর্ণ এই পরিবর্তন?
গত কয়েক বছরে ভারতে ইউপিআই ব্যবহারের হার বহুগুণ বেড়েছে। প্রথমদিকে ছোট খরচ বা দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য তৈরি হলেও এখন ইউপিআই হয়ে উঠেছে দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির মূল স্তম্ভ। বড় বিনিয়োগ, বিমার প্রিমিয়াম, ব্যবসার চুক্তি কিংবা ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ—সব ক্ষেত্রেই মানুষ ইউপিআইকে প্রাধান্য দিচ্ছেন।

Advertisements

বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন সীমা কার্যকর হলে—
বড় ব্যবসায়ী এবং ই-কমার্স কোম্পানিগুলি আরও বেশি পরিমাণে ইউপিআই ব্যবহার করবে।
সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষদের জন্য বিমা ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুবিধা বাড়বে।
সরকারী পরিষেবায় ডিজিটাল লেনদেন আরও গতি পাবে।

ইউপিআই ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে:
এনপিসিআই-এর পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৫ সালে ইউপিআই-এর মাধ্যমে প্রতিদিন কয়েক কোটি লেনদেন হচ্ছে, যার পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এই প্রবণতা দেখেই এনপিসিআই উচ্চমূল্যের লেনদেনে সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে শুধুমাত্র সাধারণ মানুষ নয়, বরং ব্যাংক, বিমা সংস্থা, বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীরাও সরাসরি উপকৃত হবেন।

নতুন নিয়ম কার্যকর হলে ইউপিআই শুধু ছোট খরচ বা মোবাইল রিচার্জের মাধ্যম নয়, বরং বড় আর্থিক লেনদেনের জন্যও দেশের অন্যতম ভরসাযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে। ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আগামী সোমবার থেকে কার্যকর হতে চলা এই পরিবর্তন নিঃসন্দেহে ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে এবং ভবিষ্যতের জন্য এক নতুন দিশা দেখাবে।