ভারতে আধার কার্ড (Aadhaar Card ) একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি, যা নাগরিকদের পরিচয় প্রমাণের জন্য ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে আধার একটি অপরিহার্য মাধ্যম হয়ে উঠেছে। তবে অনেক সময় তথ্যের গরমিল বা মৃত্যুর রেজিস্ট্রেশনে ভুলের কারণে কিছু নাগরিকের আধার নম্বর ভুলবশত নিষ্ক্রিয় (ডিঅ্যাক্টিভেট) হয়ে যায়। এই ধরনের বিভ্রান্তি সংশোধনের জন্য ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (UIDAI) সম্প্রতি একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া চালু করেছে, যা ভুলভাবে নিষ্ক্রিয় আধার পুনরায় সক্রিয় করার ক্ষেত্রে কার্যকর হবে।
আধারের গুরুত্ব:
আধার হলো একটি ১২-সংখ্যার ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর, যা UIDAI ভারতের সরকারের পক্ষে জারি করে। এটি জীবনভর বৈধ এবং এটি নাগরিকদের পরিচয়ের প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। আধার ছাড়া ব্যাংকিং পরিষেবা, টেলিকম পরিষেবা, বিভিন্ন সরকারি সুবিধার সরাসরি হস্তান্তর (Direct Benefit Transfer), রেশন কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ট্যাক্স ফাইলিংসহ অসংখ্য ক্ষেত্রেই অসুবিধা দেখা দেয়। ফলে, আধার নিষ্ক্রিয় হলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় চরম অসুবিধা সৃষ্টি হয়।
কীভাবে আধার ভুলবশত নিষ্ক্রিয় হয়?
UIDAI-র নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর রেজিস্ট্রেশনের তথ্য আধার ডেটাবেসের সাথে মেলানো হয়। এই প্রক্রিয়ায় যদি কোনো গরমিল বা ভুল হয়, তাহলে ভুল করে জীবিত ব্যক্তির আধারকে মৃত ঘোষণা করে নিষ্ক্রিয় করা হতে পারে। অনেক সময় জেলা বা পৌরসভা স্তরে মৃত্যুর নথি রেজিস্ট্রেশনের সময় এমন ভুল হয়।
UIDAI-র নতুন প্রক্রিয়া:
এই বিভ্রান্তি থেকে মুক্তি দিতে UIDAI একটি নির্দিষ্ট ধাপ-ভিত্তিক পদ্ধতি চালু করেছে, যা নিম্নরূপ:
১. আবেদন জমা দেওয়া:
প্রথমে, নাগরিকদের UIDAI-এর নিকটতম আঞ্চলিক অফিস বা রাজ্য অফিসে গিয়ে অথবা ডাক/ই-মেইলের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে। আবেদনপত্রের নির্ধারিত ফর্ম্যাটে (Annexure) সমস্ত তথ্য দিতে হবে। আবেদন ফর্মে নাগরিকের আধার নম্বর, নাম, পিতামাতার নাম, লিঙ্গ, জন্মতারিখ, ঠিকানা, স্বাক্ষর ইত্যাদি সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।
নির্ধারিত ফর্ম্যাটটি এই লিঙ্ক থেকে ডাউনলোড করা যাবে:
https://uidai.gov.in/images/Circular_for_reactivation_of_wrongly_reported_deceased_cases.pdf
২. বায়োমেট্রিক তথ্য জমা:
আবেদনপত্র গ্রহণের পর UIDAI আবেদন যাচাই করবে এবং আবেদনকারীর জন্য একটি নির্দিষ্ট আধার সেন্টারে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নির্ধারণ করবে। এই সেন্টারে গিয়ে নাগরিককে নিজের বায়োমেট্রিক তথ্য দিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে ফেস স্ক্যান, আইরিস স্ক্যান এবং আঙুলের ছাপ। পুরো প্রক্রিয়া UIDAI-এর একটি অফিসারের তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন হবে। সাধারণত, আবেদন জমা দেওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে হয়।
৩. পুনর্চালনার অবস্থা:
বায়োমেট্রিক তথ্য জমা দেওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে UIDAI নাগরিককে আধার পুনর্চালনার স্থিতি জানাবে। নাগরিক SMS-এর মাধ্যমে আপডেট পাবেন এবং চাইলে e-Aadhaar পোর্টাল থেকেও চেক করতে পারবেন।
যদি প্রমাণিত হয় যে সংশ্লিষ্ট আধার নম্বরটি ভুলবশত নিষ্ক্রিয় হয়েছে, তবে UIDAI পুনরায় তা সক্রিয় করবে। একই সঙ্গে, জন্ম-মৃত্যু রেজিস্ট্রারের দফতর, Registrar General of India এবং আধারধারীকে বিষয়টি জানানো হবে।
কেন এই প্রক্রিয়া গুরুত্বপূর্ণ?
ভারতে ডিজিটাল ইকোসিস্টেমের একটি মূখ্য ভিত্তি হলো আধার। প্রতিদিনের ছোট-বড় প্রয়োজনীয় কাজে আধারের প্রয়োজন হয়। ফলে, কোনো নাগরিককে ভুলবশত মৃত হিসেবে ঘোষণা করে তার আধার বাতিল হলে, তার জীবনযাত্রা সম্পূর্ণভাবে ব্যাহত হতে পারে। যেমন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়া, সরকারি সুবিধা বন্ধ হয়ে যাওয়া, মোবাইল সিম ব্লক হওয়া ইত্যাদি।
এছাড়া, এই প্রক্রিয়া প্রমাণ করে যে, UIDAI নাগরিকদের স্বার্থ সুরক্ষায় কতটা সচেতন। নাগরিকদের নিরাপত্তা ও অধিকারকে অগ্রাধিকার দিতে এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিক এবং গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষ, যাদের কাগজপত্র বা নথি প্রায়ই গরমিল থাকে, তাদের জন্য এই প্রক্রিয়া অত্যন্ত জরুরি।
নাগরিকদের প্রতি পরামর্শ:
যদি কেউ অনুভব করেন যে তার আধার কার্ড ভুলবশত নিষ্ক্রিয় হয়েছে, তাহলে আতঙ্কিত না হয়ে দ্রুত UIDAI-এর অফিসে যোগাযোগ করুন। সঠিক নথি এবং বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের মাধ্যমে সহজেই পুনর্চালনার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা সম্ভব। পাশাপাশি, আধার সংক্রান্ত কোনো তথ্য পরিবর্তন বা আপডেটের সময় সর্বদা সতর্ক থাকতে হবে এবং সরকারী ওয়েবসাইট বা অফিসের মাধ্যমে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
এই নতুন প্রক্রিয়াটি আধার ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বড় স্বস্তির খবর। সরকারের ডিজিটাল ইন্ডিয়া উদ্যোগকে সফল করতে এবং সাধারণ মানুষের প্রতি আস্থা বজায় রাখতে UIDAI-এর এই পদক্ষেপ এক বড় মাইলফলক। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ভুল কম হয় এবং নাগরিকরা নির্বিঘ্নে আধার-সংক্রান্ত সকল পরিষেবা গ্রহণ করতে পারেন, সেই দিকেই এখন নজর UIDAI-এর।