এবার টু হুইলারেও দিতে হবে টোল, নয়া সিদ্ধান্ত কেন্দ্রের

দেশের সড়ক পরিবহন (National Highways) ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। জুলাই মাসের ১৫ তারিখ থেকে ভারতের হাইওয়ে এবং জাতীয় সড়কগুলোতে টু হুইলার বা দুই…

No Toll Tax for Two-Wheelers on National Highways: NHAI and Gadkari Debunk July 15, 2025, Claims

দেশের সড়ক পরিবহন (National Highways) ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে। জুলাই মাসের ১৫ তারিখ থেকে ভারতের হাইওয়ে এবং জাতীয় সড়কগুলোতে টু হুইলার বা দুই চাকার যানবাহনদেরও টোল ট্যাক্স দিতে হবে। এই সিদ্ধান্তটি কেন্দ্রীয় পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং ন্যাশনাল হাইওয়েজ অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এনএইচএআই) নিয়েছে। বহুদিন ধরে টু হুইলার যানবাহনগুলো টোল থেকে মুক্ত ছিল, তবে এখন থেকে সেই সুবিধা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই নতুন নীতি সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। কেউ কেউ এটিকে অর্থনৈতিক চাপের কারণ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ কেউ মনে করছেন এটি সড়কের ভারসাম্য ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

নতুন নীতির পটভূমি
টোল ট্যাক্স সংক্রান্ত এই সিদ্ধান্তের পেছনে এনএইচএআই-এর মূল উদ্দেশ্য হলো হাইওয়ের গুণগত উন্নতি ও রক্ষণাবেক্ষণে বেশি অর্থ সংগ্রহ করা। ২০২৪ সালের পর্যন্ত দেশের প্রায় ৩০ শতাংশ গৃহস্থালি টু হুইলার যানবাহনের ওপর নির্ভরশীল (আইএসটিসি ২০২২ তথ্য অনুযায়ী), যা মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের প্রধান পরিবহন মাধ্যম। আগেকার নীতিতে টু হুইলারগুলো টোল থেকে মুক্ত ছিল, কারণ এদের নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। তবে এখন এই বিভাগের যানবাহনগুলোকেও টোলের আওতায় আনার পেছনে এনএইচএআই-এর যুক্তি হলো, হাইওয়ের উন্নতি ও রক্ষণাবেক্ষণে সবাইকে অংশ নিতে হবে।

   

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, টোল সংগ্রহে টু হুইলার যোগ করলে প্রতি বছর অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ রাজস্ব আসবে, যা হাইওয়ের গুণগত উন্নতি ও নতুন সড়ক নির্মাণে ব্যবহৃত হবে। তবে এই সিদ্ধান্তের বিরোধীদের মতে, এটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ওপর অতিরিক্ত অর্থনৈতিক ভার চাপিয়ে দেবে, যারা ইতিমধ্যেই জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি ও দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচে চাপ অনুভব করছেন।

সামাজিক প্রতিক্রিয়া
সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষ করে এক্স প্ল্যাটফর্মে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র আলোচনা চলছে। অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, যেমন—যদি সাধারণ মানুষের টোল দিতে হয়, তাহলে কেন রাজনৈতিক নেতা, এমপি-এমএলএ এবং ভিআইপি যানবাহনগুলো এখনও টোল থেকে মুক্ত? এই প্রশ্নটি তুলেছেন এক্স ব্যবহারকারী রোহন মাগদুম, যিনি জোর দিয়ে বলেছেন, “যদি সাধারণ করদাতাদের কোনো ছাড় না থাকে, তাহলে সাইরেন বাজিয়ে যাওয়া এসইউভি-এর জন্য কেন ফ্রি পাস থাকবে?” অন্য একজন ব্যবহারকারী নিখিল সায়নীও এই মতামতের সমর্থনে কথা বলেছেন এবং সকল রাজনৈতিক নেতাদের টোল ছাড় বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।

এছাড়া, কিছু ব্যবহারকারী মনে করছেন, টোল চাপের পাশাপাশি সড়কের গুণগত উন্নতি, বাইক লেন এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতি করা উচিত। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “বাইকগুলো টোল দিতে শুরু করেছে, কিন্তু তার বিনিময়ে কি আমরা পথঘাটে গর্তমুক্ত সড়ক, নিরাপদ বাইক লেন পাবো?” এই প্রশ্নগুলো সরকারের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

Advertisements

নিরাপত্তা ও অবকাঠামোর চ্যালেঞ্জ
টু হুইলারদের হাইওয়ে ব্যবহারে নিরাপত্তা একটি বড় বিষয়। ২০০৯ সালের হিন্দুস্থান টাইমসের একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে, ভারতের প্রকাশ্য হাইওয়ে বা এক্সপ্রেসওয়েতে টু হুইলারের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই নিষেধাজ্ঞা সড়ক নিরাপত্তা এবং উচ্চগতির যানবাহনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এড়ানোর জন্য প্রয়োগ করা হয়েছিল। তবে, টোল চাপার পর সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠছে—যদি হাইওয়ে ব্যবহারের জন্য টাকা দিতে হয়, তাহলে কেন টু হুইলারদের সেখানে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে না? এই দ্বন্দ্ব সমাধান করতে এনএইচএআই-কে নতুন নীতি প্রণয়ন করতে হবে।

অর্থনৈতিক প্রভাব
মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য টু হুইলার একটি অপরিহার্য পরিবহন মাধ্যম। একজন ব্যবহারকারী এক্সে লিখেছেন, “মধ্যবিত্ত ভারত বাইক কিনেছিল চলতি খরচ থেকে বাঁচতে, এখন রাস্তাও দামি হয়ে গেল।” এই মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, টোল চাপের ফলে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খরচ আরও বাড়বে। তবে, সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এই অর্থ সংগ্রহ হাইওয়ের গুণগত উন্নতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ব্যয় করা হবে, যা দীর্ঘমেয়াদীভাবে সবার পক্ষে উপকারী হবে।

টোল চাপের এই নতুন সিদ্ধান্ত ভারতের পরিবহন ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আনবে। তবে, এটি সফল হতে হলে সরকারকে সড়ক নিরাপত্তা, গুণগত উন্নতি এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রয়োজন বিবেচনা করতে হবে। সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া এবং তাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া জরুরি, নতুন নীতি যাতে ন্যায়বিচার ও সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থার জন্য কাজ করে। আগামী দিনে এই বিষয়ে আরও আলোচনা ও সংশোধন দেখা যেতে পারে, যা ভারতের সড়ক পরিবহনের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে।