ভারতের আয়কর আইন অনুযায়ী, নন-রেসিডেন্ট ইন্ডিয়ান (NRI) রা যেমন ভারতের ট্যাক্সের আওতায় পড়ে, তেমনি অনেকেই সম্পূর্ণ বৈধ পদ্ধতিতে বড় অঙ্কের কর দেওয়া এড়াতে সক্ষম হয়েছেন। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, তারা কোনো নিয়ম লঙ্ঘন করছেন না; বরং, আয়কর আইনের বিশেষ সেকশন ব্যবহার করে সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে পুঁজি লাভের উপর ট্যাক্স ফাঁকি না দিয়ে কর ছাড় পাচ্ছেন। এই প্রক্রিয়ার মূল চাবিকাঠি হলো সেকশন 115F।
কে হবেন এনআরআই?
সবাই বিদেশে বসবাস করলেই এনআরআই হয়ে যায় না। আয়কর আইনের সেকশন 6 অনুযায়ী, একজন ব্যক্তিকে এনআরআই হিসেবে বিবেচনা করা হয় যদি—
তিনি আর্থিক বছরে 182 দিনের কম সময় ভারতে অবস্থান করেন, বা 60 দিনের কম সময় ওই বছরে ভারতে থাকেন এবং পূর্ববর্তী চার বছরে 365 দিনের কম অবস্থান করেন।
তবে কিছু ব্যতিক্রমও আছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কারো ভারতের আয় ১৫ লাখ টাকার নিচে হয়, তবে ৬০ দিনের শর্তটি ১২০ দিনে উন্নীত হয়। আবার, যারা চাকরির জন্য বিদেশে যাচ্ছেন, তাদের জন্য এই সীমা ১৮২ দিন পর্যন্ত হতে পারে।
এনআরআইদের আয়করের নিয়ম:
ভারতের মধ্যে এনআরআইদের আয়ের উপর করের ধরন:
ভাড়ার আয়: সম্পূর্ণভাবে করযোগ্য। এর ওপর ৩০% স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন এবং সুদের ছাড় পাওয়া যায়।
এনআরও (NRO) অ্যাকাউন্টের সুদ: পূর্ণ করযোগ্য।
এনআরই (NRE) এবং এফসিএনআর (FCNR) ডিপোজিটের সুদ: ট্যাক্স ফ্রি, যদি বিদেশী আয়ের মাধ্যমে অর্থ আসা হয় এবং এনআরআই স্ট্যাটাস বজায় থাকে।
ডিভিডেন্ড: কোনো বেসিক ছাড় নেই, পুরোপুরি করযোগ্য।
স্বল্পমেয়াদী পুঁজি লাভ (STCG): তালিকাভুক্ত শেয়ারের জন্য ২০% হারে কর।
দীর্ঘমেয়াদী পুঁজি লাভ (LTCG): ১.২৫ লাখ টাকার উপরে লাভের ক্ষেত্রে ১২.৫% হারে কর।
ব্যবসায় আয়: শুধুমাত্র তখনই করযোগ্য, যদি ব্যবসা ভারতের ভিতর থেকে নিয়ন্ত্রিত বা পরিচালিত হয়।
উপহার: আত্মীয়দের কাছ থেকে পাওয়া উপহার করমুক্ত, কিন্তু অ-আত্মীয়দের কাছ থেকে ৫০,০০০ টাকার উপরে উপহার করযোগ্য।
সেকশন 115F: এনআরআই দের জন্য সোনার সুযোগ:
এখন আসল কথায় আসা যাক। আয়কর আইনের সেকশন 115F অনুযায়ী, এনআরআইরা বিদেশী মুদ্রায় কেনা সম্পদ বিক্রি করে যে পুঁজি লাভ হয়, তার ওপর পূর্ণ বা আংশিক কর ছাড় পেতে পারেন যদি তারা সেই অর্থের পুরো বিক্রয়মূল্য নির্দিষ্ট কিছু ভারতীয় বিনিয়োগে পুনঃবিনিয়োগ করেন, বিক্রয়ের পর ৬ মাসের মধ্যে।
বিদেশি মুদ্রায় সম্পদ মানে কি?
যেকোনো শেয়ার বা ডিবেঞ্চার, যা রূপান্তরযোগ্য বিদেশি মুদ্রা দিয়ে কেনা হয়েছে, তাকেই বিদেশি মুদ্রায় সম্পদ বলা হয়।
কোথায় বিনিয়োগ করলে ছাড় মিলবে?
ভারতীয় কোম্পানির ইকুইটি শেয়ার
ভারতীয় পাবলিক কোম্পানির ডিবেঞ্চার
ভারতীয় কোম্পানির পাবলিক ডিপোজিট
সরকারি সিকিউরিটি
যেসব জায়গায় বিনিয়োগ করলে চলবে না-
মিউচুয়াল ফান্ড, রিয়েল এস্টেট, সোনা, অথবা অন্য কোনো অননুমোদিত সম্পদে বিনিয়োগ করলে এই ছাড় পাওয়া যাবে না।
শর্ত:
এই নতুন বিনিয়োগ অন্তত তিন বছর ধরে রাখতে হবে। এর আগে বিক্রি বা রূপান্তর করলে, আগের ছাড় পাওয়া পুঁজি লাভ আবার করযোগ্য হয়ে যাবে।
উদাহরণ:
ধরি, একজন এনআরআই ভারতীয় শেয়ার বিক্রি করে ৪ কোটি টাকা পেয়েছেন। শেয়ারের ক্রয়মূল্য ছিল ২ কোটি টাকা। ফলে ২ কোটি টাকার পুঁজি লাভ হয়েছে। যদি তিনি বিক্রয়মূল্যের মধ্যে থেকে ৩ কোটি টাকা যোগ্য সম্পদে পুনঃবিনিয়োগ করেন, তবে:
করমুক্ত পুঁজি লাভ = (৩ কোটি / ৪ কোটি) × ২ কোটি = ১.৫ কোটি টাকা
করযোগ্য পুঁজি লাভ = ৫০ লাখ টাকা
ট্যাক্স সেভিং = ১.৫ কোটি × ১২.৫% = প্রায় ১৮.৭৫ লাখ টাকা
কী মনে রাখতে হবে?
1. ৬ মাসের সময়সীমা: বিক্রয়ের ৬ মাসের মধ্যে পুনঃবিনিয়োগ করতে হবে, এবং তা সম্পূর্ণ বিক্রয়মূল্য হতে হবে, কেবল লাভ নয়।
2. যোগ্য বিনিয়োগ: শুধুমাত্র শেয়ার, ডিবেঞ্চার, পাবলিক ডিপোজিট অথবা সরকারি সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করতে হবে।
3. ৩ বছরের হোল্ডিং পিরিয়ড: তিন বছরের আগে বিক্রি করা যাবে না।
4. এনআরআই স্ট্যাটাস বজায় রাখা: করমুক্ত সুবিধার জন্য বিদেশি আয়ের উৎসের প্রমাণ এবং এনআরআই স্ট্যাটাসের প্রমাণ রাখতে হবে।
সেকশন 115F শুধুমাত্র আইনি ফাঁক নয়, বরং একটি সুবিবেচিত আর্থিক সুবিধা, যা অনেক এনআরআই এর অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সঠিক পরিকল্পনা এবং আইনি সঠিকতা বজায় রাখলে, এই সুবিধা কাজে লাগিয়ে এনআরআইরা কোটি কোটি টাকার কর সাশ্রয় করতে পারছেন। অর্থাৎ, সঠিক বিনিয়োগে চূড়ান্ত লাভ — করও বাঁচে, সম্পদও বাড়ে।