ইনকাম প্রুফ নেই? তাও গড়ে তুলুন আপনার ক্রেডিট স্কোর, এই সহজ পদ্ধতিতে

Build Your Credit Score: জয়পুরের ২৫ বছর বয়সী ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক ডিজাইনার রিয়া সম্প্রতি একটি নতুন ল্যাপটপ কিনতে একটি ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন। মাসিক আয়ের…

Credit Score Check Understanding Soft Inquiry vs Hard Inquiry Impact india

Build Your Credit Score: জয়পুরের ২৫ বছর বয়সী ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক ডিজাইনার রিয়া সম্প্রতি একটি নতুন ল্যাপটপ কিনতে একটি ক্রেডিট কার্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন। মাসিক আয়ের নির্দিষ্টতা থাকা সত্ত্বেও, এবং নিজের খরচ সঠিকভাবে সামলালেও, তার আবেদনটি বাতিল হয়ে যায়। কারণ? তার কোনো ক্রেডিট ইতিহাস নেই।

এই অভিজ্ঞতা শুধু রিয়ার একার নয়। ভারতের কোটি কোটি মানুষ, বিশেষ করে যারা নতুন অর্থনৈতিক যাত্রা শুরু করছেন—ফ্রিল্যান্সার, গিগ ওয়ার্কার, গৃহিণী কিংবা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনেকেই একই সমস্যার মুখোমুখি হন। তারা হয় “নিউ-টু-ক্রেডিট” (NTC), অর্থাৎ যাদের আগে কোনো ঋণ বা ক্রেডিট ব্যবহারের ইতিহাস নেই, অথবা তাদের ক্রেডিট প্রোফাইল অত্যন্ত দুর্বল। এই দুই শ্রেণির মানুষদের জন্য ভারতীয় আর্থিক ব্যবস্থায় প্রবেশের দরজা প্রায় বন্ধই বলা চলে।

   

ক্রেডিট স্কোর কী এবং কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ?
ক্রেডিট স্কোর হল একটি তিন সংখ্যার মান (৩০০ থেকে ৯০০-এর মধ্যে), যা একজন ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ করার অভ্যাসকে প্রতিফলিত করে। ৭৫০-এর উপরে স্কোর থাকলে সেটি ভালো বলে ধরা হয়, এবং ৮০০-এর ওপরে থাকলে সেটি চমৎকার। কিন্তু, যদি কেউ আগে কখনো ঋণ না নিয়ে থাকেন বা নিয়মিত আয়প্রমাণ দেখাতে না পারেন, তাহলে তার স্কোর গড়ে ওঠে না—যা ভবিষ্যতে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

TransUnion CIBIL-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে ৪০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এখনো আনুষ্ঠানিক ক্রেডিট ব্যবস্থার বাইরে রয়েছেন। কিন্তু, ডিজিটাল লেনদেন ও অনলাইন ঋণপ্রদান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেডিট স্কোরের প্রভাব শুধু ঋণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই—এটি চাকরি, বাড়ি ভাড়া, এমনকি বিমার প্রিমিয়ামের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

ক্রেডিট কনানড্রাম: আগে স্কোর না আগে ক্রেডিট?
এই সমস্যাটি অনেকটাই “মুরগি আগে না ডিম” ধরনের। আপনি যদি ক্রেডিট না নেন, তাহলে স্কোর গড়ে উঠবে না। কিন্তু, স্কোর না থাকলে বা আয়ের প্রমাণ না থাকলে আপনি ক্রেডিটই পাবেন না। অধিকাংশ ব্যাংক বা NBFC আয় যাচাই করতে স্যালারি স্লিপ, ITR বা ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট চায়—যা অনানুষ্ঠানিক খাতের অনেকের পক্ষে যোগান দেওয়া সম্ভব নয়।

তাহলে উপায় কী?
নতুন প্রযুক্তিনির্ভর আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাঙ্কগুলি এখন এমন কিছু বিকল্প পদ্ধতি আনছে, যার মাধ্যমে কোনো আয় প্রমাণ ছাড়াও আপনি নিজের ক্রেডিট স্কোর গড়ে তুলতে পারেন।

১. সিকিউরড ক্রেডিট কার্ড (FD-নির্ভর)

এটি সবচেয়ে সহজ এবং নিরাপদ উপায়গুলির একটি। এখানে আপনাকে আগে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ব্যাঙ্কে Fixed Deposit (FD) হিসেবে রাখতে হয়। সেই FD-এর ভিত্তিতে ব্যাঙ্ক আপনাকে একটি ক্রেডিট কার্ড দেয়, যার লিমিট সাধারণত FD-এর ৮০%-১০০% হয়।

এই কার্ড দিয়ে আপনি প্রতিদিনের খরচ—বাজার, বিল, ট্র্যাভেল ইত্যাদির জন্য ব্যবহার করতে পারেন। সময়মতো রিটার্ন দিলে সেই তথ্য CIBIL এবং Experian-এর মতো ক্রেডিট ব্যুরোগুলিতে যায়, এবং ধীরে ধীরে আপনার স্কোর তৈরি হয়।

Advertisements

এই কার্ডগুলি UPI-এর সাথেও লিঙ্ক করা যায়, ফলে দৈনন্দিন লেনদেন আরও সহজ হয়ে যায়। যেহেতু ব্যাঙ্কের হাতে FD থাকে, তাই রিস্ক কম এবং অ্যাপ্রুভাল রেটও বেশি।

২. ‘বাই নাও, পে লেটার’ (BNPL) পরিষেবা – সাবধানে ব্যবহার করুন

আজকাল অনেক ফিনটেক প্রতিষ্ঠান BNPL পরিষেবা দিচ্ছে, যেখানে আপনি এখন কিছু কিনে পরে কিস্তিতে টাকা ফেরত দিতে পারেন। কিছু BNPL পরিষেবা এখন ক্রেডিট ব্যুরোতে রিটার্ন রিপোর্ট করে, যা স্কোর গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে।

তবে, একটু অসতর্কতা বা দেরিতে পেমেন্ট করলে সেটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই BNPL ব্যবহার করলে দায়িত্বের সাথে ব্যবহার করাই শ্রেয়।

স্মার্ট অভ্যাস যা স্কোর বাড়াতে সাহায্য করে:
একবার আপনি কোনো ক্রেডিট প্রোডাক্ট পেয়ে গেলে, তখন আপনার আচরণই নির্ধারণ করবে আপনার স্কোরের ভবিষ্যৎ। সময়মতো সব বিল পরিশোধ করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। একটি মিসড পেমেন্টও আপনার স্কোর কমিয়ে দিতে পারে।

আরও কিছু ভালো অভ্যাস:

  • মোট ক্রেডিট লিমিটের ৩০%-এর কম ব্যবহার করুন
  • নিয়মিত স্কোর চেক করুন (CIBIL বা অন্য ফ্রি অ্যাপে)
  • সময়ের সাথে সাথে আপনার FD বাড়ালে ক্রেডিট লিমিটও বাড়বে

কাগজ নয়, যোগ্যতা হোক মাপকাঠি:
আজকের দিনে ক্রেডিট স্কোর শুধু ধনীদের সুবিধা নয়, বরং এটা অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তির অন্যতম চাবিকাঠি হয়ে উঠেছে। এবং এখন এমন এক সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা যেখানে ফিনটেক এবং স্মার্ট ব্যাঙ্কিং মডেলের মাধ্যমে আয় প্রমাণ ছাড়াই স্কোর গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে।

রিয়ার মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ যারা অর্থনৈতিকভাবে দায়িত্ববান, কিন্তু ঐতিহ্যবাহী কাগজপত্র দেখাতে অপারগ, তারা আজ নতুন এক আর্থিক যাত্রার পথে পা রাখতে পারছেন। নথিপত্র ছাড়াও যে আর্থিক ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব, সেটাই আজকের সময়ের সবচেয়ে বড় বার্তা।