শুল্ক নিয়ে বৈঠক আসন্ন, যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল ভারত

Trump On Trade Tariffs: “চাপ নয়, সময়সীমার ভয় নয় – যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা হবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে, জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে।” এমনই স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন…

Piyush Goyal Launches Startup India Desk

Trump On Trade Tariffs: “চাপ নয়, সময়সীমার ভয় নয় – যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা হবে আত্মবিশ্বাস নিয়ে, জাতীয় স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে।” এমনই স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। তিনি জানিয়েছেন, আসন্ন আলোচনা দু’টি স্তম্ভে দাঁড়িয়ে— ‘বিকসিত ভারত’ ও ‘আত্মনির্ভর ভারত’।

আগামী ২৫ আগস্ট ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নির্ধারিত বাণিজ্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। আমেরিকার অন্যতম বৃহৎ বাণিজ্য অংশীদার হওয়া সত্ত্বেও, ভারত পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে— কোনও চাপে বা সময়সীমার মধ্যে পড়ে কোনও চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে না।

   

আত্মবিশ্বাসের পিছনে কী কারণ?
বাণিজ্যমন্ত্রীর মতে, ভারতের এই আত্মবিশ্বাসের পিছনে রয়েছে একাধিক শক্তিশালী কারণ।
বর্তমানে ভারত একটি ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি।
বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে ভারত।
ভারতের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ও বাজার সম্ভাবনা বিশ্ব অর্থনীতির নজর কাড়ছে।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সফলভাবে একটি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছে ভারত।
এই সাফল্য আন্তর্জাতিক মহলে স্পষ্ট বার্তা পাঠিয়েছে— ভারত নিজের শর্তেই চুক্তি করবে, জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করেই।

রাশিয়ান তেলের প্রশ্নেও স্পষ্ট অবস্থান:
প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনলে ১০ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। কিন্তু ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়ে দেয়— ভারতের জ্বালানি চাহিদা পূরণে কোন দেশ থেকে তেল কেনা হবে, তা ঠিক করবে বাজার পরিস্থিতি এবং দেশের স্বার্থ। আমেরিকার চাপের সামনে মাথা নত করার কোনও প্রশ্নই নেই।

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ছাড়? ভারত উদ্বিগ্ন নয়:
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, ট্রাম্প প্রশাসন পাকিস্তান ও বাংলাদেশকে কিছু পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু ভারত তা নিয়ে মোটেই উদ্বিগ্ন নয়। কারণ, ওই দুই দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য। বরং ভারত জানিয়ে দিয়েছে, তারা শক্তিশালী ও আত্মনির্ভর এবং কোনও চাপেই তাদের অবস্থান বদলাবে না।

Advertisements

আসন্ন বৈঠকে ভারতের স্পষ্ট বার্তা:
আসন্ন মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে ভারত যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে অনড় থাকবে, তা আগেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। সেগুলি হল:
কৃষিক্ষেত্রে কোনও রকম ছাড় নয়।
জিএম (জেনেটিক্যালি মডিফায়েড) খাবারের প্রবেশাধিকার থাকবে না।
ভারতীয় শ্রমনির্ভর শিল্পে কোনও ক্ষতি বরদাস্ত করা হবে না।
আমেরিকান পণ্যের জন্য ভারতের বাজার সহজলভ্য হবে না।
ভারতের মতে, এই কড়া অবস্থানের ফলে আমেরিকান ভোক্তাদেরই ক্ষতি হবে, কারণ ভারতীয় পণ্য ইতিমধ্যেই আমেরিকার বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

অ্যাপলের প্রধানের প্রশংসা ভারতীয় শ্রমশক্তির প্রতি:
অ্যাপল কর্পোরেশনের সিইও টিম কুক সম্প্রতি ভারতীয় শ্রমশক্তির প্রশংসা করে বলেন, “বিশ্বে ভারতীয়দের মতো দক্ষ কর্মীশক্তি বিরল।” তাঁর এই মন্তব্য ভারতীয় অর্থনীতির বিশ্বমানের দক্ষতার প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে।

ভারত আজ আর কোনও তৃতীয় বিশ্বের দেশ নয়, যাকে মার্কিন চাপে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বরং, ‘বিকসিত ভারত’ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর দর্শনে ভর করে ভারত বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর সঙ্গে সমানে সমানে কথা বলছে। শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা এই বাস্তবতারই প্রমাণ। বাণিজ্যমন্ত্রী গোয়েলের কথায়, “ভারতের কিছুই হারানোর নেই, বরং ভারতের বাজার ও শিল্প-দক্ষতা আজ বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।” সুতরাং, ভারতের এই কড়া ও দৃঢ় অবস্থান আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে।