প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা (PMMY)-র দশম বার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মঙ্গলবার একগুচ্ছ গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করলেন। তিনি জানান, গত দশ বছরে এই প্রকল্প দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (Women Entrepreneurs) ক্ষমতায়নের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বিশেষত, মহিলাদের মধ্যে এই যোজনার প্রভাব অত্যন্ত ইতিবাচক, কারণ মোট মুদ্রা ঋণ অ্যাকাউন্টের প্রায় ৬৮ শতাংশ মহিলাদের নামে মঞ্জুর হয়েছে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “মুদ্রা যোজনা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথ খুলে দেয়নি, এটি মহিলাদের আত্মনির্ভরতা ও উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার পথেও অনুপ্রাণিত করেছে।” তিনি আরও বলেন, ২০২৪-২৫ বাজেট অনুযায়ী, গত বছর চালু হওয়া ‘তরুণ প্লাস’ নামক একটি নতুন শ্রেণির অধীনে ঋণের সীমা ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা উন্নত উদ্যোক্তাদের তাদের ব্যবসাকে আরও প্রসারিত করতে সাহায্য করবে।
মুদ্রা যোজনার সাফল্য ও পরিসংখ্যান
২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই যোজনার সূচনা করেছিলেন। লক্ষ্য ছিল দেশের অ-কর্মসংস্থানধর্মী (non-corporate) ও অ-কৃষিভিত্তিক (non-farm) ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সহজ, জামানতবিহীন ঋণ প্রদান করে আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে (financial inclusion) শক্তিশালী করা। এই প্রকল্পের অধীনে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়।
অর্থমন্ত্রী জানান, গত ১০ বছরে ৫২ কোটিরও বেশি মুদ্রা ঋণ অ্যাকাউন্টে প্রায় ৩৩.৬৫ লক্ষ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১.৫৮ লক্ষ কোটি টাকা সংরক্ষিত জাতি (SC), উপজাতি (ST) ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (OBC) উদ্যোক্তাদের মঞ্জুর হয়েছে, যা সরকারের ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস ও সবকা প্রচেষ্টা’-র মূলমন্ত্রকে বাস্তবায়িত করে।
নতুন ‘তরুণ প্লাস’ ক্যাটাগরি
নতুন ঘোষিত ‘তরুণ প্লাস’ ক্যাটাগরি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে সেইসব উদ্যোক্তাদের জন্য, যারা পূর্বে ‘তারুণ’ ক্যাটাগরির অধীনে ঋণ নিয়ে সফলভাবে পরিশোধ করেছেন। এখন তারা ১০ লক্ষ টাকা থেকে ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারবেন এই নতুন ক্যাটাগরির আওতায়। এর ফলে তারা বৃহত্তর পরিসরে ব্যবসা পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন।
এই ঋণের নিরাপত্তা দিতে ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড ফর মাইক্রো ইউনিটস (CGFMU) আরও একধাপ এগিয়ে এসে এই সম্প্রসারিত ঋণেও গ্যারান্টি কভারেজ প্রদান করবে। এর ফলে ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এই ধরনের ঋণ মঞ্জুর করতে পারবে।
সরকারের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অঙ্গীকার
কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী বলেন, “PMMY শুধুমাত্র ভারতের মধ্যেই নয়, বিশ্বজুড়ে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোক্তা সহায়ক উদ্যোগ।” তিনি আরও বলেন, “আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার, কারণ তা সমন্বিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”
তিনি জানান, মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে উদ্যোক্তারা সরাসরি ব্যাংক, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান (NBFC) এবং ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থার (MFI) কাছ থেকে ঋণ পেতে সক্ষম হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
প্রধানমন্ত্রী মোদী এই প্রকল্প চালুর সময় বলেছিলেন, “ভারতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সাহায্য করাই দেশের অর্থনীতিকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অন্যতম কার্যকর উপায়।” মুদ্রা যোজনা লক্ষ লক্ষ নতুন উদ্যোক্তাকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে, যাঁরা নিজের ব্যবসা শুরু করে স্বাবলম্বী হতে পেরেছেন এবং সমাজে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে নিজের স্থান গড়ে তুলেছেন।
মুদ্রা যোজনার এক দশক পূর্তি দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এই প্রকল্প শুধুমাত্র ঋণ দেওয়ার একটি প্রকল্প নয়, এটি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে স্বপ্ন দেখার সাহস দিয়েছে। বিশেষ করে, মহিলাদের মধ্যে আর্থিক সচেতনতা ও স্বনির্ভরতার মানসিকতা গড়ে তুলেছে। ভবিষ্যতে ‘তারুণ প্লাস’ এর মতো পদক্ষেপ আরও উদ্যোক্তাকে নতুন দিশা দেখাবে বলেই আশাবাদী কেন্দ্র।