ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ঘোষণা করেছেন যে ব্যবসায়ীরা জিএসটি (GST) হ্রাসের যে সুবিধা ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেবে, সেটি তিনি নিজে সরাসরি তদারকি করবেন। শনিবার টাইমস নাও-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “আমি নিজে পরিস্থিতির উপর নজর রাখব, যাতে কর হ্রাসের সুবিধা সত্যিই গ্রাহকদের কাছে পৌঁছায়।”
তিনি নাগরিকদেরও উৎসাহিত করেছেন যাতে তারা কোনো ব্যবসায়ী বা সংস্থা কর ছাড়ের সুবিধা না দিলে সরাসরি অভিযোগ জানান। অর্থমন্ত্রীর কথায়, “দেশের নানা প্রান্ত থেকে মানুষ আমাকে বলেছেন, এ সিদ্ধান্ত স্বাগত। আমি তাঁদের বলেছি, যদি দেখেন সুবিধা আপনাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, তবে সরাসরি আমাকে জানান। আমি মাটির কাছাকাছি গিয়ে বিষয়টি দেখব।”
GST ছাড়ে সরাসরি নজরদারিতে অর্থমন্ত্রী সীতারামন
অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই একাধিক শিল্পগোষ্ঠী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা জিএসটি (GST) হার হ্রাসের সুবিধা সরাসরি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দেবে। তাঁর মতে, জিএসটি সংস্কার প্রতিটি ভারতীয় নাগরিকের জীবনে প্রভাব ফেলে, কারণ বাজার থেকে কেনা প্রায় প্রতিটি জিনিসেই জিএসটি (GST) যুক্ত থাকে।
তিনি বলেন, “প্রতিটি মানুষ সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কিছু না কিছু বাজার থেকে কিনে থাকেন। আর প্রায় প্রতিটি জিনিসেই জিএসটির (GST) প্রভাব রয়েছে।”
নির্মলা সীতারামন এই সংস্কারকে ‘বিরাট ও জটিল’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এটি কার্যকর করতে অসংখ্য আমলাকে দীর্ঘ সময় ধরে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন, সহজীকৃত জিএসটি (GST) হারের ফলে বছরে প্রায় ৪৮,০০০ কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হতে পারে। তবে উৎসব মৌসুমে চাহিদা বাড়লে তার ফলে ক্ষতির কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, “উৎসবের সময় বাড়তি চাহিদা আমাদের অনেকটা সাহায্য করবে। এর ফলে রাজস্ব ক্ষতি পুরোপুরি না হলেও আংশিকভাবে সামাল দেওয়া যাবে।”
বিরোধীদের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তারা সরাসরি স্বীকার না করলেও জিএসটি (GST) সংস্কারের গুরুত্ব অনুধাবন করছে। তাঁর মতে, বিরোধীদের উচিত খোলাখুলি স্বীকার করা যে সংস্কার বড়সড় পরিবর্তন এনেছে।
একইসঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, যদি বিরোধীরা এতটাই জ্ঞানী হয়ে থাকে, তবে তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন জিএসটি (GST) বাস্তবায়ন করেনি কেন। সীতারামনের বক্তব্য, “যদি এত জ্ঞান থাকত, তবে ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ইউপিএ সরকার থাকাকালীনই কেন তারা এই পদক্ষেপ নিল না?”
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন যে তিনিই প্রথম জীবন ও স্বাস্থ্য বিমায় জিএসটি (GST) ছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তার জবাবে সীতারামন বলেন, সব রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের সহযোগিতা ছাড়া এই সংস্কার সম্ভব হতো না। তিনি বলেন, “আমি প্রথম দিনেই মিডিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে সব অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। তাঁরা সবাই, দল নির্বিশেষে, এই সংস্কার সফল করতে পাশে থেকেছেন।”
জিএসটি (GST) সংস্কার কেন ওনামের আগে কার্যকর হয়নি—এই প্রশ্নে সীতারামন জানান, দক্ষিণ ভারতও নবরাত্রি উদ্যাপন করে। তিনি নিজের রাজ্য তামিলনাড়ুর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “তামিলনাড়ু নবরাত্রি থেকে বিচ্ছিন্ন নয়।”
অর্থমন্ত্রী ব্যাখ্যা করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির স্বাধীনতা দিবসের ভাষণের পরপরই এই নেক্সট-জেনারেশন জিএসটি (GST) সংস্কার কার্যকর করা হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো নাগরিকদের করের বোঝা কমানো এবং অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা। জিএসটি (GST) কাউন্সিল স্বাস্থ্য, শিক্ষা, দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় পণ্য, চিকিৎসা সামগ্রী, গাড়ি, ইলেকট্রনিক্স, বীমা সহ একাধিক ক্ষেত্রে বড় করছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার এটিকে দেশবাসীর জন্য ‘দীপাবলির উপহার’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত শুল্ক নিয়ে উদ্বেগ আছে কি না, জানতে চাইলে সীতারামন বলেন, তিনি প্রতিদিন ট্রাম্পের মন্তব্য নিয়ে চিন্তা করেন না। তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দূরদর্শী নেতৃত্বে ভারতের স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে।
তিনি বলেন, “আমি সম্পূর্ণ আস্থা রাখি প্রধানমন্ত্রী মোদির উপর। তিনি কখনোই এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না, যা দেশের ক্ষতি করবে। দেশকে প্রথমে রেখে তিনি সিদ্ধান্ত নেন এবং নেবেন।”
তবে তিনি স্বীকার করেন, মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির ফলে স্বল্পমেয়াদে প্রভাব পড়তে পারে। তবে ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবে।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের এই বার্তা স্পষ্ট—সরকার কেবল কর ছাড় দিয়েই দায় শেষ করছে না, বরং তা ভোক্তাদের কাছে কার্যকরভাবে পৌঁছাচ্ছে কি না, সেটিও সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে। উৎসবের মরশুমে বাড়তি ক্রেতাচাহিদা এই সংস্কারের প্রভাব আরও দৃশ্যমান করবে বলে আশা করা হচ্ছে।