অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার সম্প্রতি রাজ্যের বাণিজ্যিক কর (Tax) বিভাগের উপর প্রফেশনাল ট্যাক্স সংগ্রহের দায়িত্ব অর্পণ করেছে, যা আগামী ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর হবে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পেশাদার ব্যক্তি, ব্যবসায়ী এবং কর্মচারীদের উপর এই কর আরোপ করা হয়। এই করের পরিমাণ রাজ্য এবং পেশার ধরন অনুযায়ী ভিন্ন হয়। এই প্রতিবেদনে আমরা জানবো প্রফেশনাল ট্যাক্স কী, কেন এটি দিতে হয় এবং এর ভারতব্যাপী প্রভাব কী হতে পারে।
প্রফেশনাল ট্যাক্স কী?
প্রফেশনাল ট্যাক্স হলো রাজ্য সরকারের বাণিজ্যিক কর বিভাগ কর্তৃক আরোপিত একটি কর, যা যেকোনো ধরনের মজুরি উপার্জনকারী ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য। নিয়োগকর্তারা তাদের কর্মচারীদের বেতন প্রদানের আগে এই কর কেটে নেন। যেহেতু এই কর রাজ্য-নির্দিষ্ট আইনের অধীনে পরিচালিত হয়, তাই প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব নিয়ম, স্ল্যাব হার এবং সময়সীমা রয়েছে। কর্মচারীরা তাদের বেতনের পরিমাণ অনুযায়ী বিভিন্ন স্ল্যাবে পড়েন এবং তদনুযায়ী কর প্রদান করেন। এই কর রাজ্যের বাণিজ্যিক কর বিভাগ সংগ্রহ করে এবং তা পৌরসংস্থার তহবিলে জমা হয়।
ভারতের সংবিধানের ২৭৬ নং ধারা অনুযায়ী, রাজ্য সরকারগুলির এই কর আরোপের ক্ষমতা রয়েছে। তবে, বছরে সর্বোচ্চ ২,৫০০ টাকার বেশি এই কর আরোপ করা যায় না। এছাড়া, পুরুষ ও মহিলাদের জন্য এই করের প্রান্তিক সীমা ভিন্ন হতে পারে।
কোন কোন রাজ্যে প্রফেশনাল ট্যাক্স আরোপিত হয়?
ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে প্রফেশনাল ট্যাক্স আরোপ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, তেলেঙ্গানা, কেরল, মধ্যপ্রদেশ, নাগাল্যান্ড, ওড়িশা, এবং পাঞ্জাব। তবে, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, হরিয়ানা এবং দিল্লির মতো কিছু রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এই কর প্রযোজ্য নয়।
অন্ধ্রপ্রদেশে প্রফেশনাল ট্যাক্সের নতুন নিয়ম:
১ এপ্রিল থেকে অন্ধ্রপ্রদেশে বাণিজ্যিক কর বিভাগ প্রফেশনাল ট্যাক্স সংগ্রহের দায়িত্ব নেবে, যা এতদিন স্থানীয় সংস্থাগুলি পরিচালনা করত। এই পরিবর্তনের ফলে বেতনভোগী শ্রেণির জন্য কর প্রদানের প্রক্রিয়া আরও সুসংগঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্ধ্রপ্রদেশে কর্মচারীদের মাসিক আয়ের ভিত্তিতে করের স্ল্যাব নির্ধারিত হয়েছে। যেমন:
মাসিক আয় ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত: কোনো কর নেই।
১৫,০০১ থেকে ২০,০০০ টাকা: প্রতি মাসে ১৫০ টাকা।
২০,০০০ টাকার উপরে: প্রতি মাসে ২০০ টাকা।
এই পরিবর্তনের ফলে বেতনভোগীদের জন্য কর প্রদানের প্রক্রিয়া অনলাইনে সীমাবদ্ধ হবে, যা সময় বাঁচাতে এবং স্বচ্ছতা বাড়াতে সাহায্য করবে। তবে, এটি কিছু কর্মচারীর জন্য অতিরিক্ত আর্থিক চাপের কারণও হতে পারে।
ভারতের অন্যান্য রাজ্যে প্রফেশনাল ট্যাক্সের স্ল্যাব:
প্রফেশনাল ট্যাক্সের হার ও স্ল্যাব রাজ্যভেদে ভিন্ন। নীচে কয়েকটি রাজ্যের উদাহরণ দেওয়া হলো:
গুজরাট:
৫,৯৯৯ টাকা পর্যন্ত: কোনো কর নেই।
৬,০০০ থেকে ৮,৯৯৯ টাকা: ৮০ টাকা প্রতি মাসে।
৯,০০০ থেকে ১১,৯৯৯ টাকা: ১৫০ টাকা প্রতি মাসে।
১২,০০০ টাকার উপরে: ২০০ টাকা প্রতি মাসে।
কর্ণাটক:
১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত: কোনো কর নেই।
১৫,০০০ টাকার উপরে: ২০০ টাকা প্রতি মাসে।
মহারাষ্ট্র:
পুরুষদের জন্য ৭,৫০০ টাকা পর্যন্ত: কোনো কর নেই।
মহিলাদের জন্য ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত: কোনো কর নেই।
পুরুষদের জন্য ৭,৫০১ থেকে ১০,০০০ টাকা: ১৭৫ টাকা প্রতি মাসে।
১০,০০০ টাকার উপরে: ২০০ টাকা প্রতি মাসে (শেষ মাসে ৩০০ টাকা)।
পশ্চিমবঙ্গ:
১০,০০০ টাকা পর্যন্ত: কোনো কর নেই।
১০,০০১ থেকে ১৫,০০০ টাকা: ১১০ টাকা প্রতি মাসে।
১৫,০০১ থেকে ২৫,০০০ টাকা: ১৩০ টাকা প্রতি মাসে।
২৫,০০১ থেকে ৪০,০০০ টাকা: ১৫০ টাকা প্রতি মাসে।
৪০,০০০ টাকার উপরে: ২০০ টাকা প্রতি মাসে।
বেতনভোগী শ্রেণির জন্য এর প্রভাব:
অন্ধ্রপ্রদেশে প্রফেশনাল ট্যাক্স সংগ্রহের দায়িত্ব বাণিজ্যিক কর বিভাগের হাতে আসার ফলে বেতনভোগী শ্রেণির জন্য কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। প্রথমত, এই কর এখন সম্পূর্ণ অনলাইনে জমা দিতে হবে, যা কাগজপত্রের ঝামেলা কমাবে। দ্বিতীয়ত, যেহেতু এই কর সরাসরি রাজ্য সরকারের তহবিলে যাবে, তাই স্থানীয় উন্নয়ন প্রকল্পে এর ব্যবহার বাড়তে পারে। তবে, যারা সীমান্তিক আয়ের মধ্যে পড়েন (যেমন ১৫,০০১ থেকে ২০,০০০ টাকা), তাদের জন্য এটি মাসিক ব্যয়ে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় অন্ধ্রপ্রদেশের স্ল্যাব হার মাঝারি ধরনের। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমবঙ্গে ১০,০০০ টাকার উপরে আয়ের জন্য কর শুরু হয়, যেখানে অন্ধ্রপ্রদেশে এই সীমা ১৫,০০০ টাকা। আবার, মহারাষ্ট্রে মহিলাদের জন্য ছাড়ের সীমা বেশি, যা অন্ধ্রপ্রদেশে নেই।
কেন প্রফেশনাল ট্যাক্স দিতে হয়?
প্রফেশনাল ট্যাক্স রাজ্য সরকারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস। এই অর্থ স্থানীয় পরিকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং অন্যান্য জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া, এটি আয়কর থেকে পৃথক একটি কর, যা কেন্দ্রীয় সরকারের পরিবর্তে রাজ্য সরকার সংগ্রহ করে। এই করের মাধ্যমে রাজ্যগুলি তাদের আর্থিক স্বাধীনতা বজায় রাখে।
অন্ধ্রপ্রদেশে প্রফেশনাল ট্যাক্স সংগ্রহের নতুন ব্যবস্থা বেতনভোগী শ্রেণির জন্য একটি মিশ্র অভিজ্ঞতা হতে পারে। একদিকে, এটি প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও স্বচ্ছ করবে; অন্যদিকে, কিছু কর্মচারীর জন্য এটি অতিরিক্ত বোঝা হয়ে উঠতে পারে। ভারতের অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, প্রফেশনাল ট্যাক্সের হার ও প্রয়োগে বৈচিত্র্য রয়েছে। তবে, এই করের মূল উদ্দেশ্য একই—রাজ্যের উন্নয়নের জন্য তহবিল সংগ্রহ। ভবিষ্যতে এই ব্যবস্থা কীভাবে কার্যকর হয়, তা সময়ই বলবে।