কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্টে নতুন পদক্ষেপের ঘোষণা SEBI’র নয়া চেয়ারম্যানের

ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড (SEBI)-এর নতুন চেয়ারম্যান তুহিন কান্ত পাণ্ডে বললেন যে, SEBI-এর বোর্ড সদস্যদের মধ্যে কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট (স্বার্থের সংঘাত) বিষয়ক স্বচ্ছতা নিশ্চিত…

new-sebi-chairman-announces-steps-for-conflict-of-interest-transparency

ভারতের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড (SEBI)-এর নতুন চেয়ারম্যান তুহিন কান্ত পাণ্ডে বললেন যে, SEBI-এর বোর্ড সদস্যদের মধ্যে কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট (স্বার্থের সংঘাত) বিষয়ক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য একটি নতুন ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন করা হবে। তিনি শুক্রবার মানি-কন্ট্রোল গ্লোবাল ওয়েলথ সামিট ২০২৫-এ বক্তব্য রাখার সময় এই পরিকল্পনার কথা জানান।

তুহিন কান্ত পাণ্ডে বলেন, “আমরা আমাদের বোর্ডের মধ্যে যেকোনো কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্টের বিষয়গুলো জনসাধারণের সামনে প্রকাশ করার পরিকল্পনা করছি। আমাদের বিশ্বাস এবং স্বচ্ছতা শুধু স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে নয়, SEBI-এর মধ্যেও থাকতে হবে।”

এখন পর্যন্ত, SEBI বিভিন্ন কারণে প্রচুর সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম পূর্ববর্তী চেয়ারম্যান মাধাবী পুরী বুচের বিরুদ্ধে চলমান আইনি লড়াই। বম্বে হাইকোর্ট সম্প্রতি বুচের পাশাপাশি SEBI-এর পূর্ণকালীন সদস্য আশ্বিনী ভাটিয়া এবং BSE-এর চেয়ারম্যান প্রমোদ আগরওয়ালকে একটি এন্টি-করাপশন ব্রাঞ্চ (ACB) কোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ প্রদান করেছে। ওই নির্দেশে, ACB কোর্ট তাদের বিরুদ্ধে FIR দায়ের করার কথা বলেছিল, যা হাইকোর্টের আদেশের ফলে স্থগিত হয়ে যায়।

এটি মূলত সাপান শ্রীবাস্তব নামে এক সাংবাদিকের অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয়, যার দাবি ছিল যে, BSE ১৯৯৪ সালে Cals Refineries কে লিস্ট করেছে, কিন্তু SEBI এর লিস্টিং নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ না হওয়ার কারণে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। এর পর থেকে SEBI এই বিষয়ে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ করা হয়।

তুহিন কান্ত পাণ্ডে SEBI-এর ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কেও আলোচনা করেছেন, বিশেষত ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টর (FPI)-দের বিষয়ে। তিনি বলেছেন যে, SEBI FPI এবং অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড (AIF) এর সাথে তাদের উদ্বেগ সমাধান করার জন্য আরও নিবিড়ভাবে কাজ করবে। যদিও বিদেশী পোর্টফোলিও ইনভেস্টররা বৈশ্বিক ঘটনা দ্বারা প্রভাবিত হয়, পাণ্ডে একে অপরিহার্য হিসেবে অভিহিত করেন ভারতীয় বাজারে অভ্যন্তরীণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ভূমিকা।

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক অস্থিতিশীলতার মধ্যে যখন FPI-রা বাজার থেকে সরে যায়, তখন দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সেই শূন্যস্থান পূর্ণ করেছে। তাই আমি মনে করি, ভারতীয় এবং বিদেশী বিনিয়োগের মধ্যে একটি সুষম ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন যাতে ভারতের পুঁজি বাজারে টেকসই উন্নয়ন সম্ভব হয়।”

Advertisements

পাণ্ডে আরও বলেন যে, SEBI পলিসির ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন ছাড়াও ছোট ছোট পদক্ষেপের মাধ্যমে উন্নতি সাধন করতে সক্ষম এবং তাদের লক্ষ্য হলো প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো যথাযথভাবে প্রণয়ন করা।

নতুন SEBI চেয়ারম্যান তুহিন কান্ত পাণ্ডে পরিষ্কারভাবে বলেছেন যে, বোর্ড সদস্যদের মধ্যে স্বার্থের সংঘাতের বিষয়ে আরো স্বচ্ছতা আনতে হবে। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন যে, SEBI ভবিষ্যতে এমন একটি পরিকল্পনা তৈরি করবে, যাতে বোর্ড সদস্যদের যেকোনো ধরনের স্বার্থের সংঘাত জনসাধারণের কাছে সহজেই প্রকাশ্য হয়ে ওঠে। এর মাধ্যমে SEBI-এর প্রতি জনগণের আস্থা বৃদ্ধি পাবে এবং তাদের কাজকর্ম আরও পরিষ্কার ও বিশ্বাসযোগ্য হবে।

SEBI-এর এই পদক্ষেপগুলি বাজারের স্বচ্ছতা বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি শুধু দেশের আর্থিক বাজারের ধারাবাহিক উন্নতি ত্বরান্বিত করবে না, বরং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আগ্রহও বাড়াবে। পাণ্ডে জানিয়ে দেন যে, SEBI-এর মূল লক্ষ্য থাকবে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা যেখানে পুঁজি বাজারে সব ধরনের বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ এবং স্বচ্ছভাবে কাজ করতে পারে।

SEBI-এর নতুন চেয়ারম্যান তুহিন কান্ত পাণ্ডে যে স্বচ্ছতা এবং বিশ্বাস প্রতিষ্ঠা করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা ভারতের আর্থিক বাজারে একটি নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। SEBI-এর প্রতি জনগণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি, এটি দেশের পুঁজি বাজারের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে।