ভারতের সর্ববৃহৎ সাধারণ বীমা সংস্থা নিউ ইন্ডিয়া অ্যাস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড (New India Assurance) সম্প্রতি একটি বড় ধরনের করসংক্রান্ত জটিলতার মুখোমুখি হয়েছে। মুম্বই-সাউথ-এর অতিরিক্ত কমিশনারের দপ্তর থেকে সংস্থাটিকে প্রায় ₹২,২৯৮ কোটি টাকার জিএসটি দাবি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
এই নোটিশে সংস্থার বিরুদ্ধে পাঁচটি আর্থিক বর্ষে কর ফাঁকি, কম কর পরিশোধ, ভুল কর রিফান্ড গ্রহণ, অথবা ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিটের (ITC) অপব্যবহারের অভিযোগ তোলা হয়েছে।
নোটিশটি ২৬ জুন, ২০২৫-এ জারি হয়েছে এবং সেন্ট্রাল গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (CGST) আইন ২০১৭-এর ৭৪ এবং ১২৩ ধারার অধীনে পাঠানো হয়েছে।
জিএসটি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ
কর কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, ২০১৮ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নিউ ইন্ডিয়া অ্যাস্যুরেন্স কোম্পানি কর সংক্রান্ত নিয়ম লঙ্ঘন করেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি হয় ইচ্ছাকৃত প্রতারণা, তথ্য গোপন, বা ভুল উপস্থাপনার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করেছে।
৭৪ ধারা মূলত প্রতারণামূলক কর ফাঁকি সংক্রান্ত ব্যবস্থার জন্য প্রযোজ্য এবং ১২৩ ধারা দেরিতে রিটার্ন জমা বা রিটার্ন জমা না দেওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে।
কোম্পানির প্রতিক্রিয়া
নিউ ইন্ডিয়া অ্যাস্যুরেন্স কোম্পানি জানিয়েছে, তারা এই নোটিশের বিরুদ্ধে শক্তিশালী আইনি জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। কোম্পানিটি স্টক এক্সচেঞ্জকে জানিয়েছে যে এই নোটিশ তাদের আর্থিক বা পরিচালনাগত কর্মকাণ্ডে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
একটি নিয়ামক ফাইলিং-এ তারা জানিয়েছে, ট্যাক্স পরামর্শদাতাদের পরামর্শ অনুযায়ী তারা একটি বিস্তারিত জবাব প্রস্তুত করছে, যা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালত বা আদজুডিকেটিং অথরিটির কাছে জমা দেওয়া হবে।
বিমা খাতের উপর বাড়তি চাপ
এই নোটিশটি শুধু নিউ ইন্ডিয়া অ্যাস্যুরেন্সের জন্য নয়, বরং গোটা বিমা শিল্পের জন্যই বড় বার্তা। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অন্যান্য অনেক বীমা সংস্থাও বড় অংকের জিএসটি নোটিশ পেয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
বজাজ অ্যালিয়ান্স জেনারেল ইন্স্যুরেন্স: ₹১,০১০ কোটি
এইচডিএফসি লাইফ: ₹৯৪২ কোটি
আইসিআইসিআই প্রুডেনশিয়াল লাইফ: ₹৪৯২ কোটি
আইসিআইসিআই লমবার্ড: ₹১,৭২৯ কোটি
এলআইসি: ₹২৯০ কোটি
সবমিলিয়ে, বিমা খাতের উপর জিএসটি কর্তৃপক্ষের দাবি এখন ₹৫,৮৩২ কোটিরও বেশি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভিযোগগুলির মূলে রয়েছে বিমা খাতের মধ্যে কো-ইনস্যুরেন্স এবং রিইনস্যুরেন্স প্রক্রিয়ায় জটিলতা এবং ট্যাক্স কাঠামোর ভুল ব্যাখ্যা।
পূর্বের অভিযোগ
এই প্রথম নয় যে নিউ ইন্ডিয়া অ্যাস্যুরেন্স এই ধরনের নোটিশ পেয়েছে। ২০২৩ সালেও, সংস্থাটিকে প্রায় ₹২,৩৭৯ কোটি টাকার আরেকটি জিএসটি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। সেই সময় মূল সমস্যা ছিল কো-ইনস্যুরেন্স প্রিমিয়ামে জিএসটি না দেওয়া এবং রিইনস্যুরেন্স কমিশনে কর ফাঁকি।
নিউ ইন্ডিয়া অ্যাস্যুরেন্স: সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
১৯১৯ সালে প্রতিষ্ঠিত নিউ ইন্ডিয়া অ্যাস্যুরেন্স হল ভারতের বৃহত্তম সাধারণ বীমা সংস্থা। সংস্থাটির রয়েছে ১,৯০০-র বেশি অফিস, এবং ২৫টি দেশের মধ্যে কার্যক্রম।
অনুমোদিত মূলধন: ₹১,০০০ কোটি
পরিশোধিত মূলধন: ₹৮২৪ কোটি
FY25-এ মোট গ্রস রাইটেন প্রিমিয়াম (GWP): ₹৪৩,৬১৮ কোটি (FY24-এর ₹৪১,৯৯৬ কোটি থেকে ৩.৮৬% বৃদ্ধি)
Q4 FY25-এ নিট মুনাফা: ₹৩৪৬.৬৩ কোটি (২.০৬% হ্রাস)
FY25-এ বার্ষিক নিট মুনাফা: ₹৯৮৮ কোটি (১২.৮৬% হ্রাস)
নিট মুনাফার এই পতনের অন্যতম কারণ ছিল পুরনো রিইনস্যুরেন্স ব্যালেন্স বাবদ ₹৮০২ কোটি টাকার সংস্থান।
শেয়ার বাজারের প্রতিক্রিয়া
এই নোটিশের খবরে ২৬ জুন, ২০২৫ তারিখে নিউ ইন্ডিয়া অ্যাস্যুরেন্সের শেয়ার মূল্য ২.৫০% হ্রাস পেয়ে ₹১৮৫.৫০-এ পৌঁছায় (NSE-এ)। যদিও সাময়িক পতন ঘটেছে, তবুও কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি ও আত্মবিশ্বাসী প্রতিক্রিয়া বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ধরে রেখেছে।
নিউ ইন্ডিয়া অ্যাস্যুরেন্সের বিরুদ্ধে এই বিপুল অঙ্কের জিএসটি দাবি নিঃসন্দেহে ভারতের বিমা খাতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি স্পষ্ট যে, জিএসটি কর্তৃপক্ষ বিমা শিল্পে স্বচ্ছতা ও কর যথাযথভাবে প্রদান নিশ্চিত করতে এখন আরও সক্রিয় হয়েছে। আগামী দিনে এই মামলা কিভাবে গড়ায় এবং আদালতে কোম্পানির জবাব কতটা কার্যকর হয়, তার উপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।