কলকাতা, ২২ সেপ্টেম্বর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এই মুহূর্তে ব্যাস্ত কলকাতার বিভিন্ন পুজো উদ্বোধনে (GST Reforms)। শুধু পুজো উদ্বোধন করলেই হয়তো হতো ভালো। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়েও তিনি কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা চালু করা নয়া GST সংস্কার নিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছেন। রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলছেন তিনি পুজোর মঞ্চ গুলিকে নির্বাচনী প্রচারের মঞ্চ করে তুলেছেন।
সম্প্রতি কলকাতা এবং কলকাতা সংলগ্ন এলাকায় জমি এবং বাড়ির সার্কেল রেট বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সার্কেল রেট যেখানে ১৩ বা ১৪% ছিল সেগুলো বেড়ে এখন হয়েছে প্রায় ৯০% এরও বেশি। কিন্তু এর কারণ কি জিজ্ঞেস করে মুখ্যমন্ত্রী নয়া GST র দোহাই দিয়েছেন। তিনি বলেছেন নয়া GST হারে রাজ্যের রাজস্ব কমে যাবে। তাই এই সিদ্ধান্ত।
তিনি বলেছেন GST সংস্কারে আমরা খুশি এবং আমরাই এই GST সংস্কারের জন্য সবচেয়ে বেশি সচেষ্ট ছিলাম। তিনি তার লেখা একটি চিঠিরও উল্লেখ করেছেন বারে বারে। যদিও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি এই ধরণের কোনো চিঠির কথা মনে করতে পারেননি। মমতা বলেছেন এই নয়া GST হারে বাংলায় ক্ষতি হবে ২০ হাজার কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত বিজেপি শাসিত উত্তর, পূর্ব এবং পশ্চিম ভারতের ৮ টি রাজ্য তাদের হিসেবে অনুযায়ী বলেছে এই ক্ষতির পরিমান হবে প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা। তাই তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বাংলার ক্ষতি সম্বন্ধে সমোলোচকরা বলছেন মুখ্যমন্ত্রীর জানা উচিত GST কাউন্সিলের বৈঠকে যখন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তখন তা সর্বসম্মত ভাবেই নেওয়া হয়। তাই যখন কেন্দ্রীয় সরকার এই নয়া GST হারের সিদ্ধান্ত নিল ঠিক সেই সময় রাজ্যের অর্থ মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য কেন অমত করেননি?
GST নিয়ে মমতার এই বক্তব্যের জবাবে তথ্য নিয়ে এগিয়ে এসেছে ভারতের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কিং সংস্থা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। তারা ২০১৮-১৯ সালে GST হারে যখন সামান্য রদবদল হয় তার সঙ্গে ২০২৫-২৬ অর্থ বর্ষের নয়া GST রদবদলে ভারতের রাজ্যগুলি কিভাবে লাভবান হবে তার একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছে। আমরা প্রত্যেকেই জানি আগে GST কাঠামোয় চারটি স্তর ছিল (৫%, ১২%, ১৮% এবং ২৮%)।
এখন তা শুধুই ৫% এবং ১৮% আর বিলাসবহুল দ্রব্যের উপরে এখন ট্যাক্স দিতে হবে ৪০%। SBI এর রিপোর্ট বলছে নতুন এই GST কাঠামোতে কোনও রাজ্যের আর্থিক ক্ষতি হবে না। বরং তারা লাভবানই হবেন। প্রথম কথা GST ট্যাক্স এর অর্ধেক রাজ্যগুলিতে সরাসরি যায়। আর SGST এর ট্যাক্স যা রাজ্যের অভ্যন্তরীন ট্যাক্স তা যায় কেন্দ্রে। কেন্দ্রের কর বন্টনের হিসেবে এই ট্যাক্সের ৪১% টাকা ফেরত দিতে হয় রাজ্যকে।
সুতরাং রাজস্বের ৭০% টাকা রাজ্যের কোষাগারেই ঢোকে কেন্দ্রের নয়। এবার SBI এর হিসেব অনুযায়ী বলা হচ্ছে যে ইটা ঠিক যে করের রদবদলে প্রথমে ৩ থেকে ৪% রাজস্ব কমে যায় যার মূল্য ৫০০০ কোটি টাকার বেশি নয়। কিন্তু GST কমলে বাড়বে জিনিসপত্র কেনা বেচা এবং বাড়বে কর সংগ্রহ সেহেতু দীর্ঘ মেয়াদি ব্যাবস্থাতে রাজ্যগুলি লাভবানই হবে।
যা হয়েছিল ২০১৮-১৯ সালে। রাজ্যগুলি প্রায় ১লক্ষ কোটি টাকা রাজস্ব সংগ্রহ করেছিল। একই সঙ্গে ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে এর কর কাঠামো বিচার করে দেখা গেছে রাজ্যগুলির ভাঁড়ারে অতিরিক্ত যায় হবে ১৪.১০ লক্ষ কোটি টাকা। SBI এর সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর হিসেবে দেখা গেছে এই অর্থবর্ষের শেষে এই রেট কার্ড সত্ত্বেও সবচেয়ে বেশি রাজস্ব উপার্জন করা রাজ্যগুলির মধ্যে বাংলা থাকবে ৪ নম্বরে।
আইএফএ শিল্ডে কতজন বিদেশি খেলাতে পারবে দল গুলি? জানুন
বাংলার ভাঁড়ারে থাকবে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এই তালিকায় প্রথমে থাকবে উত্তরপ্রদেশ যার আয় হবে ৭৪,২৮৭ কোটি, দ্বিতীয় বিহার ৪১,৬৫১ কোটি এবং তালিকায় তিন নম্বরে থাকা মধ্যপ্রদেশ আয় করবে ৩২,৫০০ কোটি। এই তথ্যের ভিত্তিতে রাজনৈতিক মহল আক্রমণ শানিয়ে মন্তব্য করেছে যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় পুজোর মঞ্চ ব্যবহার করে যে ভাষণ দিচ্ছেন তার আদৌ কোনো ভিত্তি নেই। তার সঙ্গে রাজ্যের বিরোধীরা বলেছে যে জমি বাড়ির সার্কেল রেট বাড়িয়ে দিয়ে মধ্যবিত্তের রাতের ঘুম কেড়ে নেওয়া শুধু মাত্র রাজ্য সরকারের মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
