কলকাতা, ২১ অক্টোবর: দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর এবার নতুন প্রাণ ফিরে পেতে চলেছে বজবজের ঐতিহাসিক নিউ সেন্ট্রাল জুট মিল (NCJM)। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঘোষণা করেছে, তারা একটি গঠনমূলক পরিকল্পনা নিয়েছে এই জুট মিলকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য। রাজ্যের পাবলিক এন্টারপ্রাইজেস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিকনস্ট্রাকশন (PE&IR) দপ্তর ইতিমধ্যেই একটি Request for Proposal (RFP) জারি করেছে, যাতে একজন ট্রানজ্যাকশন অ্যাডভাইজার নিয়োগ করা হবে।
এই অ্যাডভাইজারের কাজ হবে—কারখানার কার্যকরী ইতিহাস সংগ্রহ, বাজারের বর্তমান গতিপ্রকৃতি বিশ্লেষণ, জুট ও সহগামী শিল্পের চাহিদা বোঝা, এবং সব ঋণদাতা ও অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা তৈরি করা। পরিকল্পনাটি শেষ পর্যন্ত রাজ্যের একটি বিশেষ মন্ত্রীসভা কমিটির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে।
📌 কেন এত গুরুত্বপূর্ণ এই উদ্যোগ?
জুট শিল্প একসময় বাংলার অর্থনীতির মেরুদণ্ড ছিল। “গোল্ডেন ফাইবার” নামে পরিচিত জুট বাংলাকে শুধু দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও সম্মান এনে দিয়েছিল। গঙ্গার তীরবর্তী শিল্পাঞ্চল, বিশেষত বজবজ, হাওড়া, হুগলি এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা একসময় জুট মিলের জন্যই বিখ্যাত ছিল।
কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, কাঁচামালের অভাব, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে বহু জুট মিল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন এবং স্থানীয় অর্থনীতি ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বজবজের নিউ সেন্ট্রাল জুট মিলও সেই দুঃখজনক ইতিহাসের সাক্ষী। বর্তমানে এটি লিকুইডেশনে রয়েছে, অর্থাৎ কারখানার সমস্ত সম্পদ বিক্রি করে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এই অবস্থায় সরকারের পুনরুজ্জীবন পরিকল্পনা কেবল একটি কারখানাকে বাঁচানোর উদ্যোগ নয়, বরং সমগ্র অঞ্চলের অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা।
🛠️ সরকারের পরিকল্পনা
সরকার চায়, নিউ সেন্ট্রাল জুট মিলকে আবার কার্যকর করে তোলা হোক। এজন্য অ্যাডভাইজার একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি করবেন। সেখানে কারখানার বর্তমান অবস্থা, কোন কোন যন্ত্রপাতি ব্যবহারযোগ্য, কোন প্রযুক্তি আনা দরকার, বাজারে কতটা চাহিদা রয়েছে—এসব খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ করা হবে।
একই সঙ্গে দেখা হবে, কীভাবে শ্রমিকদের জীবিকা রক্ষা করা যায়। কারণ বহু পরিবার এই জুট মিলের উপর নির্ভরশীল। তাদের কর্মসংস্থান ফেরানোই সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার।
🌍 অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পদক্ষেপ সফল হলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ জুট বেল্ট আবার প্রাণ ফিরে পাবে। ছোট ছোট আনুষঙ্গিক শিল্প যেমন—জুট ব্যাগ, দড়ি, মাদুর, কার্পেট ইত্যাদির উৎপাদনও বাড়বে। একই সঙ্গে পুনরুজ্জীবিত কারখানাটি নতুন প্রজন্মের জন্যও কর্মসংস্থানের পথ খুলে দেবে।
পরিবেশবান্ধব দিক থেকেও জুটের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে আন্তর্জাতিক বাজারে আবারও জুটের চাহিদা বাড়ছে। তাই সঠিক পরিকল্পনা হলে বাংলার জুট শিল্প ফের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বড় ভূমিকা নিতে পারবে।
বজবজের নিউ সেন্ট্রাল জুট মিলের পুনরুজ্জীবন কেবল একটি শিল্প পুনরুজ্জীবনের গল্প নয়। এটি বাংলার ঐতিহ্য, শ্রমিকদের অধিকার, স্থানীয় অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং পরিবেশবান্ধব ভবিষ্যতের প্রতীক। যদি সরকারের এই পদক্ষেপ কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়, তবে জুট শিল্প আবারও বাংলার গর্ব হয়ে উঠতে পারে।