নয়াদিল্লি, ১২ সেপ্টেম্বর : ভারতের অর্থনীতিতে আরেকবার অভিনব একটি প্রকল্পের সূচনা করতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার (Andaman Nicobar Project)। কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্র যাদব আন্দামান নিকোবরে একাধিক প্রকল্প নির্মাণের কাজ করতে চলেছেন। নিকোবর দ্বীপ প্রকল্পকে ভারত মহাসাগর অঞ্চলে সমুদ্রীয় ও বিমান চলাচলের একটি প্রধান কেন্দ্রে রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে একটু যুগান্তকারী ভূমিকা নিচ্ছেন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।
এই প্রকল্পগুলি অর্থনীতিকে যেমন পুনরুজ্জীবিত করবে তেমনই পরিবেশকেও বাঁচাবে বলে তার এক্স হ্যান্ডেলে বার্তা দিয়েছেন মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত মহান নিকোবর দ্বীপে একটি আন্তর্জাতিক ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্ট। এই পোর্ট সামরিক এবং বেসামরিক দুই ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হবে।
বিমানবন্দর, গ্যাস ও সৌরভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, টাউনশিপ এবং টাউনশিপ সংশ্লিষ্ট পরিকাঠামো নির্মাণও এই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এই প্রকল্পের মোট খরচ প্রায় ৭২,০০০ কোটি টাকা, যা নীতি আয়োগের পরিকল্পনায় গড়ে উঠেছে।
এই প্রকল্প আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ সমন্বিত উন্নয়ন কর্পোরেশন (এএনআইআইডিসি) দ্বারা বাস্তবায়িত হচ্ছে। মন্ত্রী যাদব বলেছেন, এই উন্নয়ন ভারতের ভূ-কৌশলগত স্বার্থ রক্ষা করবে এবং চীনের মতো প্রতিবেশী দেশের সমুদ্রীয় সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলবে।
যাদবের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, প্রকল্পটি কোনোভাবেই দ্বীপের আদিবাসী জনগোষ্ঠী শোম্পেন বা নিকোবারিদের স্থানচ্যুত করবে না। শোম্পেনরা দ্বীপের সবচেয়ে দুর্বল ও বিচ্ছিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের একটি, যাদের সংখ্যা মাত্র কয়েকশো। মন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রকল্পের জন্য ১৩,০৭৫ হেক্টর বনভূমি ব্যবহার হবে।
তিনি আরও বলেছেন দ্বীপের ৮২ শতাংশ এলাকা এখনও সুরক্ষিত বন, পরিবেশ সংবেদনশীল অঞ্চল এবং জীবিওস্ফিয়ার রিজার্ভ হিসেবে রক্ষিত থাকবে, যা আইনানুগ নিয়মের চেয়েও বেশি। এছাড়া, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য লিটল নিকোবর, মেরোয়ে দ্বীপ এবং মেনচাল দ্বীপে তিনটি নতুন অভয়ারণ্য গঠন করা হবে, যেখানে লেদারব্যাক কচ্ছপ, স্থানান্তরিত প্রবাল প্রাণী এবং মেগাপোডসের মতো প্রজাতির সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।
প্রকল্পের কাজে যেন শোম্পেন বা নিকোবারিদের কোনও অসুবিধা না হয় সে দিকেও নজর দিয়েছেন ভূপেন্দ্র। তিনি বলেছেন এই প্রকল্পের কাজ চলাকালীন তারের বেড়া দিয়ে এই জনজাতিকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। তাদের জীবনযাত্রায় যেন কোনো নরকমের আঁচ না লাগে। নিকোবর দ্বীপ, যা ইউনেস্কোর স্বীকৃত জীবিওস্ফিয়ার রিজার্ভের অংশ, ভারত মহাসাগরে একটি কৌশলগত অবস্থানে অবস্থিত।
এখানকার ৮০ শতাংশ এলাকা বৃষ্টিপাতময় জঙ্গলে আচ্ছাদিত, যা প্রায় ২,০০০ প্রজাতির প্রাণী এবং ১,০০০ ফ্লোরা প্রজাতির আশ্রয়স্থল। এই প্রকল্প নিকোবর দ্বীপকে একটি আধুনিক হাবে রূপান্তরিত করে ভারতের বৈশ্বিক বাণিজ্যিক সংযোগকে শক্তিশালী করবে। ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টটি সুয়েজ খাল এবং ভারত মহাসাগরের বাণিজ্য পথের সাথে সংযুক্ত হয়ে কনটেইনার পরিবহনকে সহজতর করবে, যা ভারতকে ‘হংকং-সদৃশ’ একটি সমুদ্রীয় কেন্দ্রে পরিণত করবে।
সরকারি সিকিউরিটির নিলামে নতুন কমিশন হার প্রকাশ করল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক
স্বভাবতই রাজনৈতিক মহল এই প্রকল্পে খুশি এবং তারা বলছেন যে এতোদিন আন্দামান নিকোবর নিয়ে কেউ ভাবনা চিন্তা করেনি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব এই প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে ভারতবর্ষের অর্থনীতির কথা ভেবেছেন। শুধু অর্থনীতি নয় প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণেও এই প্রকল্প বিশেষভাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন অনেকেই।